|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় দেবাশিস বিশ্বাস
by
·
Published
· Updated
ঠগবাজ
মাঝে মাঝে খুব ছোট্ট ভুলও ঠিক করার অবকাশ আমরা পাই না । কখনো কখনো খুব সামান্য ভুল ধারণাও আমাদের কে গ্রাস করে চলে অবিরত ।হয়তো কিছু মানুষ সম্পর্কে তাই মনে বসে যায় চরম ভুল ধারণা ।
অতনু নতুন চাকরী পেয়েছে । যেদিন সে প্রথম কাজে যোগ দিল তার পরের দিনই সেখান কার এক কর্মচারী আবীর এসে অতনু কে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল,” আপনি নতুন, অপরিচিত । এখান কার একটা বিষয়ে আপনাকে আমি প্রথম থেকেই সাবধান করে দিতে চাই । এখানে প্রায় প্রত্যেকেই অপরের কাছে টাকা ধার নেবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে , কিন্তু ফেরত আর পাওয়া যায় না ।বহু চেষ্টার পর ভাগ্য ভালো থাকলে আদায় হতে পারে । আবীরের কথায় অতনুর সাবধানতা অবলম্বন করতে বিশেষ বেগ পেতে হয় না ।মানুষ তো ।একটু কান পাতলা তো হবেই ।ধীরে ধীরে বুঝতে পারে আবীর সঠিক । কিন্তু অতনু এর কাছে টাকা চেয়ে কোন লাভ নেই । কিছুদিনের মধ্যেই ও অনেকের থেকে বেশি সাবধান হয়ে উঠেছে ।আবীর কেও সে সন্দেহের চোখেই দেখে ।কারণ অনেকের থেকেই আবীর টাকা নিয়েছে সে শুনেছে ।দেয় নি নিশ্চয়।
ধীরে ধীরে একটি বছর অতিক্রান্ত । সবার সাথেই ওর খুব ভালোই সম্পর্ক । সামনে পুজো । বাড়ির জন্য কেনাকাটা অনেকটাই বাকী । কিছু কেনাকাটার জন্য আবীর অতনু কে নিয়ে চলল । সামান্যই কিনল । কিন্তু দোকানে গিয়ে আবীরের কেনার বহর টাই বেশি হয়ে গেল । অথচ দাম দিতে গিয়ে তার কাছে দেখে নয়শ টাকা কম।
“অনেক বিল হয়ে গেল যে । ভাই তুমি কি দিতে পারবে ? আগামীকালই পেয়ে যাবে নিশ্চিত । তা না হলে জিনিসপত্র কমাতে হবে । “
অনেকক্ষণ এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থেকে অতনু আবীরকে নয়শ টাকা দেয় ।
বিল মিটিয়ে অতনু কে বার তিনেক ধন্যবাদ দিয়ে যে যার বাড়ীর দিকে রওনা হয় । Shopping Mall থেকে অতনুর বাড়ী খুব একটা দূরে না হওয়ায় সে হেঁটেই রওনা দেয় । আবীর গাড়ি ধরে । অতনু বাড়ি পৌঁছে যার যার জন্য যে জিনিশ তার তার কাছে Hand Over করে দিয়ে এবার সে নিশ্চিত । আজ ডিনার করবে না । করে এসেছে । তাই ১০.৩০ টা নাগাদ শুয়ে পড়ে । মনে মনে ভাবতে থাকে টাকা টা পাবো তো আবীরের কাছ থেকে ? সে নিজেই বলেছিল যে অফিসে প্রায় প্রত্যেকেই অপরের কাছে টাকা ধার নেবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে , কিন্তু ফেরত আর পাওয়া যায় না ।বহু চেষ্টার পর ভাগ্য ভালো থাকলে আদায় হতে পারে ।কি জানি । এটাও আবার তাই হবে কিনা কে জানে । মনে মনে বলে , “ ঠকেই গেলাম চোর টার কাছে ।“ আরও খানিক ক্ষণ চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে কে জানে । পরের দিন অতনু office যায় নি । একদিন পর অফিস এ যাবার আগেও বার বারই মনে হয়েছে ,আজ টাকা টা পাবো তো ? হয়তো ঠকে যাব কিনা । কিন্তু……।।
অফিসে গিয়ে সে তো হতবাক । অফিস তো ফাঁকা । শুধু সুদীপ পিওন বসে আছে । কি হল ব্যাপারটা । সুদীপ পিওন অতনু কে দেখেই চেঁচিয়ে ওঠে
“ কি ব্যাপার ? তোমাকে কাল রাতে বার ছয়েক ফোন করা হয়েছে । Emergency না থাকলে কেউ কাউকে অত রাতে ফোন করে ? “
“ ঘুমিয়ে ছিলাম ।তা ছাড়া মাঝেমাঝেই এখন রাতে ভুলভাল ফোন আসে,তাই ধরি না ।কেন ? “
“ সকালেও তো Call Back করতে পারতে ?”
“ হয়ে ওঠে নি । কি হয়েছে ?”
“ আবীর মারা গেছে । কাল রাতে, Car Accident । শুনেছি ও কাল ATM এ গিয়েছিল । ফেরার পথেই এই দুর্ঘটনা । সেটাই কাল রাতে Boss সবাই কে ফোন করে জানিয়ে দেয় । আর ঠিক হয় যে আজ Office দুটোর থেকে শুরু হবে । সবাই আজ ওর বাড়িতেই গিয়েছে । আমিও যাব। শুধু তোমার জন্য এখানে আছি। তুমি তো আর ফোন ধরো না । কি করব ।“
শেষের কথা গুলো বোধ হয় অতনুর কানে গিয়েছে কিনা জানা নেই, তবে অতনু যখন অবীরের বাড়ি তে যায় ,সে সময় অতনুর নামে একটি খাম
আবীরের বোন এসে তার হাতে দেয় । খাম এ 9 টা 100 টাকার নোট ।
চোখ বুজে বসে পড়ার আগে সে একটি কথাই বলে ,