কর্ণফুলির গল্প বলায় নুসরাত রীপা

প্রিয় তোমাকে

১)
আমি ভ্রমণ পিয়াসী নই। বরং ভ্রমণের কথা উঠলে কিছুটা আতংক এসে ভর করে – যাত্রাপথের আতংক!
তবুও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণে আমাকে পরিবারের সঙ্গী হতেই হল। বিশেষ করে আমার সদ্য বিবাহিতা ভ্রাতুষ্পুত্রী আনহা আর তাঁর স্প্যানীস স্বামী আলোনসোর প্রবল জোরাজোরি আমি এড়িয়ে যেতে পারলাম না।
যৌথ পরিবার হলেও মাত্র দুটো গাড়িতেই আমাদের সবার জায়গা হয়ে গেল। দুই গাড়ি ভর্তি মানুষ নিয়ে রাঙামাটি শহর ছাড়িয়ে বেশ একটু ভেতরের দিকে পাহাড়ের গায়ে লটকে থাকা হোটেলের সামনে যখন আমরা পৌঁছুলাম সময় তখন রাত নয়টার কাছাকাছি।
ট্যুরের আয়োজন থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া, হোটেল বুকিংসহ যাবতীয় দায় দায়িত্ব আমাদের একমাত্র বোনের ছেলে টোটো আর আনহাম এর ভাই অয়ন স্বেচ্ছায় কাঁধে নিয়েছিল। তাদের কথা মতো এখানে সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ আমাদের পৌঁছে যাবার কথা। অথচ এখন রাত নয়টা!
ওরা দুজন নিজেরাই দেরির কারণ নিয়ে গবেষণা শুরু করল, নিশ্চয়ই হায়ারের ড্রাইভার ঠিকমতো রাস্তা চিনতে পারে নাই, তাই এত দেরি!
এত রাত,দীর্ঘ জার্ণি, দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না। আমি কোন কথা না বলে হোটেলের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।
ছোট্ট হোটেল।
তিনতলা বিল্ডিং। বেশ খানিকটা পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়। পাহাড় কেটে সিঁড়ি। হোটেলের সামনে গাড়ি নেওয়ার উপায় নেই। কয়েক ধাপ সিঁড়ির পর পরই লাল আলোর বৈদ্যুতিক বাতি। পাহাড়ি এলাকার গাম্ভীর্য যাতে নষ্ট না হয় সম্ভবত এ কারণেই এমন মৃদু আলো।
খুব সাধারণ হোটেল। সাজসজ্জা দেখেই বোঝা যায়৷ আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল। গাড়ি থেকে নামতেই হোটেলের লোক এসে লাগেজ নিয়ে গেছে।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে আমি টোটোকে বললাম, ইউরোপীয়ান জামাই সাথে, তোরা এতো বাজে একটা হোটেল সিলেক্ট করলি কেন? আজকাল তো শুনেছি বেশ আধুনিক সব হোটল হয়েছে।
উত্তরে টোটো জানাল আলোনসো তো আধুনিক হোটেল দেখে অভ্যস্ত। আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করার সুবাদে সেসব তার জন্য পানি ভাত। আনহাই বলেছে এমন হোটেল নিতে। যাতে আলোনসো উনিশ শতকের ফ্লেভার পায়!
টোটোর কথা শুনে আমার হাসি এসে গেল। একুশ শতকে এসে উনিশ শতকের ফ্লেভার!
আমাকে কোন ব্যাপারে কোনরকম দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করে টোটো নিজের কাজে চলে গেল।
হোটেল টা জৌলুসহীন। লিফট নেই। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। হোটেলের এক কর্মী জানাল, এখানে ছাদে বসবার ব্যবস্থা আছে। ফ্রেস হয়ে ডাইনিং এ আসার আগে একবার ছাদে ঢুঁ দিয়ে এলাম। আসলেই ছাদটা চমৎকার করে সাজানো। ঝাঁ চকচকে জোছনায় সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কয়েকজন কে বসা দেখে বুঝলাম, আমরা ছাড়াও হোটেলে আরো ট্যুরিস্ট আছে।
রাতের খাবার খেতে খেতেই জানলাম, এই হোটেলের মালিক আশির দশকে নিজে থাকার জন্য বাড়িটা বানিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে অসুস্থ স্ত্রী কে ঘন ঘন ডাক্তার দেখাতে হয় বলে এটাকে হোটেল ভাড়া দিয়ে নিজে শহরে বসবাস করছেন। ভদ্রলোক সম্পর্কে টোটোর এক বন্ধুর দাদুর ভাই। একটু পুরানো ধাঁচের কিন্তু পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকার জন্য হোটেলটা ভালো। প্রচার প্রচারণা ছাড়াই এ হোটেল সব সময় ভরা থাকে। যারা একবার আসে, তারা আবার আসে। তাদের থেকে শুনে অন্যেরা আসে।
আগেই বলেছি, ভ্রমণে আমার আগ্রহ নেই। ওদের আড্ডার মাঝেই আমি খাওয়া শেষ করে রুমে চলে এলাম।
ঘরের মাঝে ধবধবে সাদা বিছানা। পাশের টেবিল একটা সাদা কাচের ফুলদানীতে পানি দিয়ে তরতাজা হাসনাহেনার কয়েকটা ডাল ভেঙে সাজিয়েছে। ফুলের গন্ধে ঘর ম ম করছে। প্রবেশদ্বারের উল্টোপাশে প্রায় পুরোটা দেয়াল জুড়ে জানালা হাট খোলা। সাদা পর্দা দুপাশে টেনে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘরের আলো নিবিয়ে দিতেই জোসনার আলোয় দূরের পাহাড় গুলো চোখে পড়ল।থমথমে, কালো, ভয়ংকর দৈত্য যেন! ওদিকে তাকালে অজানা ভয়ের শিহরণ জাগে একই সঙ্গে একটা মুগ্ধতাও জড়িয়ে ধরে! চাঁদের আলোয় সাদা মার্বেলের মেঝে ঝিকঝিক করছে।
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দূর পাহাড়ের রহস্যময় সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
২)
সকালের নাস্তা খেয়ে ওরা ঘুরতে চলে গেল। গত কালের জার্ণির ধকলে আমার সারা শরীর ব্যথা করছে অজুহাতে আমি রুমে রয়ে গেলাম।
রুম লাগোয়া ছোট বারান্দায় দুটো চেয়ার আর একটা টেবিল পাতা।
রুম সার্ভিসে রেখে যাওয়া নাস্তা আর দৈনিক পত্রিকাটা নিয়ে আমি বারান্দায় এসে বসলাম। সুগার ফ্রি জেলি পাউরুটির গায়ে মেখে চিবোতে চিবোতে বাইরের দিকে তাকালাম।
হোটেলের প্রবেশদ্বারের ঢালের কাছে কয়েকটা ঘন্টা ফুলের গাছ। হলুদ হলুদ ফুলগুলো গাছে আর নিচে সমানতালে ছড়িয়ে পড়েছে। একটা অল্পবয়সী মেয়ে দাড়িয়ে। দূরত্ব খুব বেশি নয় বলে মেয়েটাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। লাল রংয়ের শাড়িতে ফর্সা রং ঝলমল করছে।
মনে হচ্ছে আকাশ থেকে একটা পরি নেমে এসে দাঁড়িয়ে আছে সকাল পেরোন সোনালি রোদের ছায়ায়!
পর পর দুটো জীপ বেরিয়ে গেল। যাবার সময় মেয়েটি বিনয়ের সাথে তাদের বিদায় জানাল। তারপর উল্টোদিকে ফিরে সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল। মুখে ভূবন ভোলান হাসি।
সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবার পরও দীর্ঘ সময় সেই হাসি আমার চোখের সামনে লটকে রইল।
ঘন্টাখানেক বিছানায় গড়াগড়ি করে ছাদে চলে এলাম। ছাদ শূন্য। হোটেল এর অতিথিরা সব ঘুরতে বেরিয়েছে। আমি একটা ছাতার নিচে বসলাম। প্রত্যেক টেবিলে একটা কলিংবেল আছে। কলিং বেলের বোতাম চাপতে মিনিট কয়েকের মধ্যে একজন ওয়েটার নিচ থেকে উঠে এল। আমি চা এর অর্ডার করলাম।
ছাদ থেকে আশেপাশের পাহাড় দেখা যায়। পাহাড়ের গায়ে রুপোলী লতার মতো সরু ছড়ি। রোদ্দুরে ঝিকমিক করছে। দূরে দূরে ছোট ছোট বাড়ি ঘর। তবে হোটেল মনে হল না কোনটাকে। আমি দূরে দৃষ্টি মেলে কী জানি কোন ভাবনায় ডুবে গিয়েছিলাম।
হঠাৎ মিষ্টি একটা কণ্ঠে ফিরে এলাম বাস্তবে। দেখি ওয়োটার ছেলেটা চা রেখে ফিরে যাচ্ছে। আর আমার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সকালে দেখা লাল শাড়ি পরা আদিবাসী মেয়েটি।
ঘুরতে গেলেন না? মিষ্টি হেসে প্রশ্ন করল সে।
ঘোরাঘুরিতে আমার অনীহার কথা বলতেই মেয়েটি হেসে ফেলল। তাহলে এসেছেন কেন?
ওরা এত জোরজুরি করল—
মেয়েটির নাম মালা। এই হোটেলে কাস্টমার কেয়ারে কাজ করে। কাস্টমার ঠিক মতো সার্ভিস পাচ্ছে কী না। রুম গুলো ঠিকঠাক মতো পরিষ্কার করা হচ্ছে কীনা, কারো কোন অভিযোগ আছে কী না- এ সমস্ত কিছু তার কাজের অন্তর্ভূক্ত। পাঁচ বছর ধরে এ হোটেলে কাজ করছে মালা।
প্রায় ঘন্টাখানেক মালা আমার সাথে গল্প করল। তারপর আবার কথা হবে বলে চলে গেল।
মালার সাথে কথা বলতে বলতে বার বার
মনে হচ্ছিল মেয়েটা যেন আমার খুব পরিচিত। বিশেষ করে ঐ সবুজ চোখ আর বাঁ গালের গভীর টোল। কোথায় দেখেছি মনে করার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু মনে পড়লোই না।
মালা চলে গেলে আমি ভাবনাটা মাথায় নিয়ে রুমে ফিরে এলাম।
৩)
অবশেষে মনে পড়ল। মালার সাথে সুস্মিতার চেহারার মিল আছে!
ঘোরাঘুরি আমার ভালোলাগে না।সপ্তাহে তিনদিন কলেজে ক্লাস নিতে হয়। বাইরের কাজ থাকলে আমি ঐ তিনদিনেই সেরে নিই। ছুটির দিনে ঘরেতেই থাকি। বই পত্তর ম্যাগাজিন পড়ি। আজকাল হাতে স্মার্ট ফোন থাকার সুবাদে বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেশ বিদেশের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখি। ঘরে বসে দেখা গেলে কষ্ট করে বাইরে যাওয়ার কী দরকার! তাছাড়া মুভি দেখি। মুভি দেখার নেশা সেই ছোটকাল থেকেই। স্কুল পালিয়ে দেখেছি। কলেজ এর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুভি দেখার সময়ই তো সুস্মিতার সাথে পরিচয়!
সুস্মিতার নাম আসলে সুস্মিতা নয়। পৈতৃক নাম পারভীন সুলতানা। কিন্তু অমন ঝলমলে রোদ্দুরের মতো হাসি যার ঠোঁটে, যার চোখ ও হাসে। যাকে দেখা মাত্রই আমার মনের সমস্ত অন্ধকার দূর হয়ে যায় তাকে পারভীন সুলতানা নাম মানায় না।
আমি তাই ওকে আমার প্রিয় নামে ডাকি।সুস্মিতা! সুস্মিতা!
প্রথম প্রথম সুস্মিতা হাসতো। বলত, বড্ড পাগলামী তোমার!
কিন্তু আমার পাগলামী ও মেনে নিয়েছিল শেষ পর্যন্ত।
আমি আলসে টাইপ বরাবরই।
আমাদের দেখা করার দিনগুলোতে সুস্মিতাই আমার জন্য অপেক্ষা করত। আমার প্রাণান্তকর চেষ্টা সত্ত্বেও কোনদিনই সুস্মিতার আগে পৌঁছুতে পারতাম না। এ নিয়ে সুস্মিতার অনেক অভিযোগ ছিল। রাগ করত। অভিমান করত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার অসহায় আত্মসমর্পণ মেনেও নিত।
পাশ করার পর আমার চাকরী হয়ে গেল হবিগঞ্জ। সুস্মিতা ঢাকাতেই একটা বেসরকারী ব্যাংকে জয়েন করল। তখনও মোবাইল ফোন এভাবে হাতে হাতে ছড়িয়ে যায় নি। যোগাযোগ মাধ্যম ছিল ল্যান্ড ফোন নয়ত চিঠি। ল্যান্ড ফোনের নেটওয়ার্ক ও খুব একটা ভালো ছিল না। লাইন না পাওয়া, পেলেও খসখস শব্দে কথা শুনতে না পাওয়া, ক্রস কানেকশনের মতো বিড়ম্বনার শিকার হওয়া ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। আর তাই সুস্মিতার বিয়ের খবরটা পেলাম যখন তখন সুস্মিতা বরের সাথে নেপালে হানিমুন করছে!
মালার মধ্যে সুস্মিতার ছায়া আমাকে নস্টালজিক করে দেয়।
৪)
হোটেলে আজ তৃতীয় দিন।
আমার কুঁড়েমি নিয়ে প্রতিরাতে ডিনার টেবিলে হাসাহাসি হয়। আলোনসো বলে, আংকেল বরং বাসায় থাকতেন। এখানে একা একা হোটেল রুমে নিশ্চয়ই আপনার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
আমি বলি মোটেও আমার কষ্ট হচ্ছে না। এই যে প্রতিদিন ডিনারে একসাথে আড্ডা দিতে পারছি এটাও আমার বড্ড ভালো লাগছে।
আর তাছাড়া মালা সময় পেলেই আমার সাথে গল্প করে এসে। মালার মধ্যে আমি সুস্মিতাকে দেখি। অতীত স্মৃতির সাগরে ডুবে ডুবে হারানো মনি-মানিক্য কুড়াই।অবশ্য একথা মুখে বলি না।
৫)
রাতে ঘুম আসছিল না। এ হোটেলে চব্বিশ ঘন্টা রুম সার্ভিসে খাদ্য পানীয় আনা যায়। রাত দেড়টার দিকে কফি অর্ডার করে রুমে ঝোলান দেয়াল আলমিরাটার সামনে দাঁড়ালাম। রুমে ওঠার দিন থেকেই আলমিরাটা চোখে পড়েছে কিন্তু ভেতরে কী আছে দেখা হয়নি।
আদিবাসীদের হাতে তৈরি শোপিস, কিছু কাচের পশুপাখি আর বেশকিছু বই ম্যাগাজিন।
আলমিরায় রাখা জিনিসগুলো ধূলোবালিহীন হলেও এগুলো সে অতি পুরাতন সেটা এদের চেহারা দেখেই বোঝা যায়।
পুরানা বই ম্যাগাজিন এর প্রতি আমার দূর্বলতা আছে। আলমিরার দরজায় তালা। কফি নিয়ে আসা ছেলেটাকে বললাম বইগুলো দেখতে চাই।
ছেলেটা মাথা ঝুঁকিয়ে চলে গেল।
একটু পরই মালা এসে ঢুকলো।
তুমি? রাতেও ডিউটি করছো?
গত দুদিনে মালাকে তুমি করে ডাকতে শুরু করেছি। মেয়ের বয়সী!
মালা হেসে বলল,এখন যার ডিউটি তার মা অসুস্থ। আমি তাকে বাড়ি যেতে বলেছি।
তারপর আলমিরার তালা খুলতে খুলতে বলল, এই জিনিস বা বইগুলো কোনটাই হোটেলের নয়। কাস্টমাররা বিভিন্ন সময় ভুল করে এটা ওটা ফেলে যায়। আমরা সেগুলো ফেলে না দিয়ে তুলে রাখি। যদি তারা আবার কখনো আসেন, হারিয়ে যাওয়া জিনিস ফিরে পেলে কতই না খুশি হবেন!
হোটেল মালিকের এই চিন্তাটা আমাকে বিমোহিত করল।মৃদু স্বরে বললাম,তাইতো!
মালা বলল, বইগুলোও তেমনই। বলেন কোন বইটা পড়বেন।
কাচের বাইরে থেকে নাম দেখতে
পাইনি। তুমি যা হোক একটা নামিয়ে দাও।
মালা বইগুলোর ওপর হাত বুলিয়ে একটা গোলাপী মলাটের বই নামিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে ধরলো, মাস দুয়েক আগে এক বয়স্ক কাপল এসেছিলেন।তারা ফেলে গেছেন। এটা পড়তে পারেন। আলমিরাটা খোলা থাকল। আপনি কাল রুম ছাড়ার আগে তালা মেরে দেব। গেলাম। গুড নাইট।
মালা বেরিয়ে গেল।
আমি টেবিলের ওপর রাখা বইটার দিকে তাকালাম, নিমাই ভট্টাচার্যের মেমসাহেব!
আমার বুকটা ধ্বক করে উঠল। বইটা হাতে নিয়ে পাতা উল্টালাম। প্রথম পাতায় লেখা ‘ প্রিয় তোমাকে”!
আমার হাতের লেখা। সুস্মিতাকে কখনো কিছু লিখে উপহার দিতাম না আমি। এই বইটা দেওয়ার সময় সুস্মিতা খুব জোরাজুরি করেছিল কিছু লিখে দিতে। তখন আমি একটা ছোট্ট চার পাঁপড়ির ফুল এঁকে তার নিচে লিখে দিয়েছিলাম, “প্রিয় তোমাকে”।
বইটা সুস্মিতা সব সময় ব্যাগে রাখতো। ত্রিশ বছর পরও কি বইটা ও ব্যাগে রাখতো?ওর তো খুব ভালো বিয়ে হয়েছে।বিয়ের পরও
নাকি সুস্মিতা বইটা কাগজওয়ালাকে দিয়ে দিয়েছিল? কেউ সেটা কিনে নিয়েছে! বা হাত বদল হয়ে বইটা এখানে আসার সম্ভাবনাও বাতিল করা যায় না।
তবু আমার মনে হয় বইটা সুস্মিতাই এখানে ফেলে গেছে, ভুলে।
আমার হাত কাঁপছে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। বইটা আলমিরার তাকে তুলে নিজেই দরজাটায় তালা দিয়ে দেই। থাক বইট। সুস্মিতা হয়ত আবার আসবে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।