ক্যাফে গপ্পো -তে চয়ন্তিকা পাল

অভিমানী সময়

অরণ্য প্রচন্ড পাহাড় ভালোবাসে,তাই বাবা মা নামকরণ ও সার্থক।
অফিসের ছুটি নিয়ে মেঘপিওনের দেশে বেড়াতে যায়,পাহাড় ঘেরা জনপথ,আকাশে পুঞ্জীভূত মেঘ,পাহাড়ি রাস্তার ধারে চা এর বাগান, বৃষ্টি ভেজা পথ, দার্জিলিং গন্তব্য।
রাস্তার ধারে চা কফি দিচ্ছেন কিছু নেপালি মহিলা,নাকে নথ, অদ্ভুত সুদর্শন।
পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে গেলো অরন্যের, হোটেল পৌঁছে স্নান করে ,খাওয়ারের অর্ডার করে অর্ধশরীর টা সাদা টাওয়ালে মুঢ়ে বিছানায় এলিয়ে দিয়েছে,একটা সিগারেট ধরায় অরন্য।।
মুঠোফোন টা বিছানায় বাজছে ,কিছুক্ষনের জন্য ভাবে ধরবে কিনা।
নক নক স্যার খাওয়ার, পাহাড়ে গিয়েও অরণ্য ডাল পোস্ত, বেগুন ভাজা অর্ডার করে।দিব্যি খেয়ে ও নেয়। কাল কাকভোরে বেরোবে বাইকে করে,অরন্যর রক্তে রক্তে পাহাড় মিশে আছে, যতবার সম্পর্ক ভেঙেছে পাহাড়কে জড়িয়ে ধরেছে ।কেনো জানেনা পাহাড় কে ওর প্রেমিকা মনে হয়।
দীপ্তি ই মেল টার উত্তর দিতে ইদানিং ইচ্ছে করেনা, কর্পোরেট মানুষ থাকলে খানেকটা নিজেকে বিলিয়ে দিতে হয়,কোনো না কোনোভাবে শোষিত হয়।
দীপ্তি কে অরণ্যর ভালো লাগে না, তবুও মুখ বুজে আদিখ্যাতা দেখাতে হয় , কে বললো ছেলেরা ধর্ষিত হয় না।
বন্যা র সাথে মানসিক খুব ভালো পটতো, যথারীতি বাড়িতে ও কথাবার্তা চালাচালি হয়,কোনো এক বোনের বন্ধু ছিলো বন্যা।খুব মিষ্টি দেখতে ,চোখে হারাতাম বন্যা কে, কতবার বলেছি বন্যা আমি সরকারি চাকরি পাবোনা, কর্পোরেট আমি একদিন বড় হবো, তোমার কোনো কষ্ট হতে দেবোনা,হয়তো এই মুহূর্তে দামি ফ্ল্যাট টা কিনতে পারছিনা কিন্তু তোমাকে গুছিয়ে রাখার মতো ক্ষমতা আমার আছে। বন্যা ঘাড় নাড়ে ,উত্তর করে না।
বন্যার বাবা সরকারি কর্মচারী,মা ও বেশ রাশভারী মহিলা,
বন্যার মা কোনদিন ই সেভাবে আমাকে হয়তো মেনে নেবেন না, জেনেও বন্যাকে ছাড়া আমার পক্ষে অসম্ভব।বন্যা বন্যা উফফফফফফফ, আমার সব কিছু তে মিশে গেছে।
আমার এই কর্পোরেট এ থাকতে থাকতে ও গাড়ি র বিজনেস টা শুরু করি,বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বিজনেস টা মার খায় এদিকে এক কম্পানি ছেড়ে অন্য কোম্পানির তে আবার জয়েন করা।
ঠিক সেই সময় ই বন্যাও পাল্টে যায়, সেদিন দমদম থেকে ফেরার পথে কয়েকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি,বন্যা আমি কর্পোরেটে থাকলেও তোমায় ভালো রাখতে পারবো,একটু সময় দাও ফ্ল্যাট ও কিনবো । তুমি তো জানতে প্রথম থেকে আমি সরকারি চাকরি কোনদিন পাবোনা তাহলে আজ কেনো ছেড়ে যেতে চাইছো।
বন্যা:- যদি সম্পর্ক রাখতে চাও আমি শুধু মাত্র শারীরিক চাহিদা পূরণ করার জন্য ই আছি, কিন্তু কোনো ভালোবাসাতে জড়িও না আমি পারবনা।
সেদিন দমদম থেকে ফেরার পথে ,বন্যা ও অরণ্য দুজনেই মেলামেশা হওয়ার পরও অরণ্য উন্মত্ত হয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছে, বন্যা আমি পারবনা তোমায় ছাড়া থাকতে
বন্যা- oh plz এভাবে বোকা বোকা প্রেম দেখিও না ,পার্ভাট কোথাকার।সেক্স করছো করো মজা নাও ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখোনা,
বিছানায় ওপর রাখা মুঠোফোন টা বাজছে বন্যা রিতিমত ফোন টা ধরে অন্যকাউকে প্রেমালাপ ,অরন্যর গাল বেয়ে চোখের জল নেমে আসে, ঠোঁটে র কোনে সিগারেট পুড়ছে না অরণ্য ভেতর থেকে পুড়ছে নিজেকে সেক্স টয় ছাড়া আর কিছু মনে করতে পারেনা,হ্যাঁ ছেলেরাও ধর্ষিত হয়।
হোটেলের জানালা থেকে দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘা র ওপর রোদ পড়ে,যেনো মনে হয় আঠারো বছর এর যুবতী , পাহাড় এর মধ্যে একটা অবসেশান আছে যেটা সবাই বোঝেনা।উফ্ দারুণ আকর্ষণ পাহাড়ি রাস্তায় বাইক চলছে,বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি, ছাতা নিয়ে বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে,এইসবি ক্যামরা বন্দী করছে অরণ্য।
Actually future is uncertain.
দিপ্তীর ফোন অরন্য কাজটা হয়ে গেছে যদি চাও তাহলে দেখা করেই কাগজ গুলো নিতে হবে,অরণ্য বোঝে এর মধ্যেও নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে ইচ্ছর বিরুদ্ধে ,কাজ টা যে চাই অফিসের জন্য
অরন্য উত্তর দেয় আচ্ছা।ফোন টা কান থেকে নামিয়ে রাখে,
বন্যা চলে যাওয়ার পর বহু মেয়েকে ফোন করে , কিন্তু সেইরকম অনুভূতি আসেনা, কথা বলে ভালোই লাগেনা অরন্যর ।
বন্যার চলে যাওয়া টা এখনো মেনে নিতে পারেনা অরণ্য।
বছর ঘুরতে চললো প্রায় দু’বছর হলো, হঠাৎ কোন একদিন রাতে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে মুষলধারে ,বন্যার ফোন
হ্যালো শোনো কি করছো? দেখো আমার তোমাকে চাই, আমি ও বিয়ে করি , তুমি ও বিয়েটা করে নাও ,যতদিন না আমাদের বিয়েটা হচ্ছে ততদিন আমরা সম্পর্কটা রাখি? বিয়ে হয়ে গেল একবছর সম্পর্ক থাকবেনা তারপর আবার আমাদের সম্পর্ক থাকবে শুধু মাত্র দৈহিক।
অরন্য খিল খিল করে হেসে ওঠে বলে বন্যা? আমি অলরেডি বিবাহিত।ফোনটা মুখের ওপর কেটে গেল।
ইদানিং গ্যাংটক সৌন্দর্য হারাচ্ছে,প্রায়ই মোর্চা বেরোয়, মানুষ জন পাল্টাচ্ছে, তবুও পাহাড় তো অন্য একরকম টান আছে এখানকার মানুষ জন খুব সাদামাটা হয়,। অর্কিড ফুল গুলো দিয়ে পাহাড় ঘেরা জনপথ ও বৃষ্টি ভেজা ।
বাড়িটা শিফট করেছি অনেকদিন হলো, তবুও এখনো মনখারাপ হলেই পাহাড় এ এসে নিজেকে খুঁজে পায়, আজ অরণ্য অন্যরকম arrogant,সবাই বলে , কিন্তু কষ্ট পেতে পেতেকোথাও মানুষ টাই পাল্টে গেছে।
সামনেই পিসতুতো বোনের বিয়ে ,তার আগে এক দাদার বিয়ে হলো । মানুষের কাছে অরন্য খুব ফুর্তি বাজ কিন্তু ভেতরে ভেতরে একাই।
এখন আর সত্যি ই কাউকে ভালোলাগেনা
দীপ্তির ফোন টা আবার বাজছে বলো তাহলে কবে ফিরছো? I want to meet with you.অরণ্য চুপ করে বসে থাকে, দেখছি বলে ফোনটা কেটে দেয়।
আবার ও ফোন টা বাজে ,অরণ্য চিৎকার করে বলে ওঠে কি দরকার বারবার , ভালো লাগছেনা।
ফোনের উল্টোদিকের আমার নতুন লেখা টা পড়েছো? সবাই তো খুব ভালো বলেছে তুমি তো কিছু বললে না?
অরণ্য-হুম ভালো ,খানেকটা অবাক ও হয়,
তিস্তার জল বয়ে যাচ্ছে কলকল আওয়াজ করে, জীবন ও তাই, মাঝে মাঝে দূরে ট্রেনের আওয়াজ আসছে।
জীবন এ এরকম ধ্যাতলা মেয়ে অরণ্য দেখেনি,টিয়া ।।
খুব বোকা বোকা একটা মেয়ে চোখগুলো বেশ আকর্ষণীয়।
নাহ্ কি ভাবছে অরণ্য।
আর কোনো ভাবেই ভালবাসা নয়।
সেদিন বাবাইদার বিয়েতে টিয়াকে প্রথম দেখে ,কেমন একটা শিশু সুলভ মুখখানা।
খিল খিল করে হেসে যাচ্ছে,
বাইরের ব্যালকানি তে দাড়িয়ে নিজেই নিজের চুল সামলাতে পারেনা, একে তাকে বলছে চুলে চিরুনি দিয়ে দিতে ,কেউ না করায় অরণ্যর কাছে এসে, চুলটা আঁচড়ে দাও তো
অরণ্য অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে,আঁচড়েও দেয় সাথে একটা বিনুনি ও করে দেয় ,অমনি টিয়া চলে যায়,অন্যঘরে গল্পের আসর জমায়,
নাহ্ না কোনো ধন্যবাদ ও জোটেনি,
টিয়া খেতে বসে অরণ্যের ওপর হুকুম চালায়,মেয়েটার কোনো ভয় ডর নেই অরণ্য কে।
আজ জিরো পয়েন্ট এ অরণ্য সারাদিন থাকে তাই নেটওয়ার্ক ও নেই ফোনে, চতুর্দিক এ বরফ বরফ,বরফের রাস্তা কেটে জিরো পয়েন্ট,
যেনো জীবনের সব প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষ বাঁচার লড়াই করে,এক এক করে রাস্তা ছেড়ে যাই, জীবনের যেনো এক একটি অধ্যায়,
প্রতিষ্টিত নয় বলে মানুষ এর ছেড়ে যাওয়া।
দার্জিলিং থেকে কাল ফিরবো।ভাবছি কেনো জানিনা এখানে আসা র কারণ টিয়া থেকে দূরে সরে থাকা, কিন্তু কই তা তো হচ্ছেনা
একদিন রাস্তায় টিয়ার সাথে দেখা হয় ,ও কোনো সেমিনার ফেরৎ ,অরণ্যকে দেখে,ওই শোনো আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো, অরণ্য বলে বাসে চলে যাও, টিয়া কিছু না বলে সোজা বাইকে উঠে বসে,চলো অরন্য বাঁধা দেয় না। তবে কোনো ও কথা ও বলেনা।
দার্জিলিং ছেড়ে আসতে অরণ্যর খুব কষ্ট হয়, তবুও বাড়ি ফেরে, সোমবার অফিস সিডিউল পুরো প্যাক ,তারমধ্যেও নিজেকে দীপ্তির শিকার হোয়াতেই হবে,বিকেল পাঁচটা একজন পার্টনারের সাথে দেখা করে দীপ্তির সাথে appointment .
মুখটি খুব খারাপ, রাতে এসে ভালো লাগনা নিজেকে।
রাত প্রায় গভীর দরজার টোকা ,দরজা খোলো আমি এসেছি, অরণ্য বিছানায় উঠে বসে ভাবতে থাকে স্বপ্ন না সত্যি,এটা টিয়ার গলা না?
এতরাতে এখানে কি করছো? টিয়া জানো চাকরি টা পেয়ে গেছি । এটা বলার জন্য এখন এতরাতে? না আমার এটাই আশ্রয়স্থল,এত রাতে আমি বাড়ি ফিরতে পারবোনা লোকে বলবে মুখ পুড়িয়েছি,
অরন্য বুঝতে পারেনা কি করবে।
তুমি জানো না কিছু আমার ব্যাপারে টিয়া প্লিজ লিভ মি এলোন।
তুমি জানো আমি খুব খারাপ ছেলে, কর্পোরেট থাকি বলে নিজেকে,,,,,,
টিয়ার চোখে জল টল টল করে
টিয়া কে বাড়ি থেকে বের করে দিতেও পারেনা ,, বাবা মায়ের ঘরে টিয়া কে নিয়ে যায়।।।
টিয়ার বাড়ির লোক টিয়াকে বের করে দেয়।। পরের দিন মন্দিরে টিয়া আর অরণ্য এর বিয়েটা হয়ে যায়,
এভাবেই হয়তো পাহাড় শেখায় জীবনের বাঁক গুলো খুব দরকার ,,
থেমে থাকতে নেই জীবন এ।
টিয়া শেখালো জীবনের দ্বিতীয় বার হেরে গিয়েও জিতে যায় মানুষ।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।