কবিতায় বিজন মণ্ডল

২০১০ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছি । বর্তমানে কণ্ঠ শিল্পী হিসেবে নিয়োজিত । কবিতা লেখার পাশাপাশি ভৌতিক কাহিনী লেখা এবং পড়ায় বিশেষ আগ্রহী । প্রিয় সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।

মিত্তির বাবুর হুঁকো

যমুনা নদীর তীরে আছে গ্রাম পুরাতন ।
সদাই সুখী আছে কটা ঘর
আছে এক মোড়ল মন্দ নয়
নাম তার সনাতন মিত্তির ।
পথের ধারে বড়ো আম গাছের নীচে
মাচায় বসে টানে হুঁকো সর্বক্ষণ ।
“ওহে রমেন যাচ্ছো কই একা ?”
“আজ্ঞে কত্তা, নতুন গেরামে যাই ।”
“উদ্দেশ্য যদি বলো তবে শুনতে পারি ।”
“নতুন গেরামে বাদন মাঝির ডাগর একখান ছেলি আচে ।
লম্বা চওড়ায় আজ্ঞে বড়ো বাবু প্রায়,
রঙে কামে ঐ গেরামে আর দুখানা নাই ।
বিদেশ থেকে আসি নাকি বে কত্তি চায় !
তাই বড়ো মেয়ির তরে সম্বন্ধ কত্তি যাই ।”
হুঁকো নামিয়ে মিত্তির বাবু কয়,
” হুঁ, তোমার মেয়ে ডাগর হয়েছে বটে !
শুনি অনেক কথা, যা কিছু রটে ।
তবে শোনো একখান কথা,
ভালো করে দেখে শুনে ভাবিয়া করিও কাজ
যদি কিছু অর্থ লাগে,
বলিও, করিওনা কোনো লাজ ।”
মাথা নাড়িয়া রমেন মাঝি
রওনা দিল আগে ।
মিত্তির বাবু হুঁকো তুলিয়া
আবার টানিতে লাগে ।
তিনটি ছেলে আর একটা মেয়ে
ছিল সনাতনের ঘরে ।
ছোটটা মরেছে ডাকাতের হাতে
আর, মেয়ে সাপের কামড়ে ।
মেজ ছেলে দেখে জমি জমা
আর, বড়োটা থাকে শহর কোলকাতা ।
গেল বছর উঠেছে দু’গোলা ধান
এখনো লোকের কাছে এক গোলা পান ।
বয়স হয়েছে আশি
রোগের মধ্যে হয়েছে একটু কাশি ।
হুঁকোর টানে কাশতে কাশতে
যখন, মাথায় ওঠে রক্ত ।
মেজ বৌ এসে বেজায় বকে
আর, বুকে তেল টেনে করে শান্ত ।
বছর পাঁচেক আগে
হয়েছে পত্নী বিয়োগ ।
কলাবতী সুন্দরী ছিল সে
আর ছিল কর্কট রোগ ।
এখন কেবলই থাকে একা বসে
মাঝে মাঝে আসে জনা কটা লোক ।
হুঁকোর লোভে কেউ কেউ আসে
কেউবা শুধু গল্প গুজব ।
এমনি করে দিন কেটে যায় ।
একদিন সন্ধ্যা বেলা
হুঁকো টেনে মশাই কাশিতে কাহিল
ফিরলো না শ্বাস আর ।
বাড়িতে কান্নার রোল
আর, গ্রামে শোকের ছায়া ।
মাঝ রাতে বড়ো ছেলে আসলো
শেষ রাতে শ্মশান যাত্রা ।
আগুনের মাঝে ভষ্মিভূত হলো
সঙ্গে, পুড়লো সাধের হুঁকো ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।