গল্পবাজে বিপ্লব গোস্বামী (ভাইফোঁটা স্পেশাল)

ভাইফোঁটা ভাই বোনের অকৃত্রিম ভালোবাসার উৎসব

ভাইয়ের প্রতি যে একজন বোনের কতটা ভালোবাসা আর কতটা মমতা তার প্রমাণ হলো ভাইফোঁটা উৎসব।ভাইয়ের আয়ু বৃদ্ধি আর মঙ্গল কামনায় কার্ত্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে সমস্ত দিন উপবাস থেকে বোন এই পবিত্র অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।এদিন বোন তার ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোঁটা দেয় আর ঈশ্বরের কাছে তার ভাইয়ের দীর্ঘ আয়ুর প্রর্থনা করে।এই অনুষ্ঠানের মধ‍্য দিয়ে ভাই বোনের অকৃত্রিম ভালোবাসা আর অটুট বন্ধন আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে।
বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বণের অন‍্যতম এক পার্বণ হলো এই ভাইফোঁটা।শারদীয় দূর্গাপূজার রেশ কাটতে না কাটতে লক্ষ্মীপূজা চলে আসে।তারপর আসে দীপাবলি ও কালিপূজা।আর কালিপূজার শেষে চলে আসে কাঙ্ক্ষিত সেই ভাইফোঁটার পবিত্র তিথি।যে দিনটার জন‍্য একজন বোন সারাটা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকে।এই পবিত্র অনুষ্ঠানের সমস্ত আয়োজন বোনেরাই করে থাকে।পারিবারিক নানান আয়োজনের মধ‍্যদিয়ে পালিত হয় এই অনুষ্ঠানটি।বোন নিজ হাত চন্দন কাঠ ঘষে সেই চন্দন দিয়ে নিজের অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে দেয়।কেউ কেউ চন্দের সাথে দই মিশিয়ে দেয়।তাদের বিশ্বাস চন্দের সাথে দই মিশিয়ে ফোঁটা দিলে তাদের ভাইয়ের মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকবে।তারপর বোন তার ভাইয়ের মাথায় ধান ও দূর্বা দিয়ে মঙ্গল আচরণ করে।সেই সময় বোনের সঙ্গে বাড়ির অন‍্যান‍্য নারীরাও উলুধ্বনি দিতে থাকে। সেই সঙ্গে বেজে ওঠে শঙ্খ ধ্বনিও।তখন বোনেরা ভাইকে প্রদীপ দেখিয়ে দীর্ঘায়ু কামনা করে।যদিও এই অনুষ্ঠানের শাস্ত্রীয় কোন মন্ত্র নেই তবু বোনেরা ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় উচ্চারণ করে–
“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা।
যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা।
আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা।।
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হলো অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর।।”

শেষে বোনেরা ভাইদেরকে মিষ্টিমুখ করে উপহার দিয়ে থাকে।বড়দেরকে ছোটরা প্রণাম করে।আর বড়রা ছোটদেরকে আশীর্বাদ দিয়ে থাকে।যদি ভাই বড় হয় তবে বোন প্রণাম করে আর ভাই তার যথাসাধ্য উপহার দিয়ে থাকে।আর বোন বড় হলে ভাই বোনকে প্রণাম করে আর বোন তার সাধ‍্যমত ভাইকে উপহার দিয়ে থাকে।
ভাইফোঁটা যে শুধু বাঙালিদের কাছে এক বিশেষ উৎসব তা নয়।দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন নামে এই উৎসব পালিত হয়ে থাকে।কোথাও ভাই-দুজ কোথাও ভাই-টিকা আবার কোথাও যম-দ্বিতীয় বা ভ্রাতৃ-দ্বিতীয়া নামে পালিত হয় এই উৎসব।যদিও এক এক জাতির কাছে এক এক নামে পালিত হয় এই উৎসব।তবে সব জাতির কাছেই এই উৎসবের তাৎপর্য একই।সব জাতির বোনেরা তাদের ভাইয়ের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনায় এই আনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
এই আনুষ্ঠানের মধ‍্যদিয়ে যে শুধু ভাই বোনের মমতা আর ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় হয়ে থাকে তা নয়।এই অনুষ্ঠান হলো ভাইয়েরা বোনদের কাছে শপথ করার এক বিশেষ দিন।এদিন বোনেদের কাছে তাদের মান সম্মান রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করতে হবে ভাইদেরকে।বর্তমানের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বোনেরা যেন কোন ভাবেই অত‍্যাচারিত আর অবহেলিত না হয় এদিকে সতর্ক থাকতে হবে।বিশেষ করে ইদানীং সময়ে ব্লেকমিলের মাধ্যমে যেভাবে মেয়েদের উপর মানসিক ও শারীরিক অত‍্যাচার করা হয়।তা থেকে বোনেদের রক্ষা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে।বোনেদের রক্ষা করতে হবে নর পিশাচ ধর্ষকদের হাত থেকে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।