অনুগদ্যে অমিত মুখোপাধ্যায়

সেদিন চৈত্র মাস

যদিও কারও চোখে সর্বনাশ দেখার বয়েস নেই, তবু আজ চৈত্র মাস। হ্যাঁ, চৈত্রের প্রথম দিবস আজ। কাল উত্তরবঙ্গে কালবৈশাখী ঝড় উঠেছিল। বৃষ্টি নেমেছিল। আজ এই ভোরে বৃষ্টি নেই। কিন্তু বাতাস ভিজে। যে ভাবে বৃষ্টি থামার পরেও একতারা হাতে হেঁটে যাওয়া বোষ্টমীর চুলে যে ভাবে জলকণা লেগে থাকে, সে ভাবে উত্তরবঙ্গ ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে আমার মনজঙ্গলের পাতায়, লতায় লেগে আছে বৃষ্টির জল। আহা, জলের কথায় মনে পড়ল জলধারার কথা। বাংলার এই উত্তরভূমিতে কত মিষ্ট নামের নদীর সঙ্গে দেখা হয়েছে! কোচবিহারের বউটি নদী, শালটিয়া নদী, দার্জিলিংয়ের স্বর্ণমতী নদী, আলিপুরদুয়ারের চালতা নদী, জলপাইগুড়ির নোনাই নদী, রাঙাতি নদী, ঝুমুর নদীর জল এখনও আমার পায়ের পাতায় লেগে আছে৷ নাগরাকাটায় একটি নদীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, তার নাম নৌকাডুবা। এই সব জলধারাকে বিদায় জানিয়ে চলেছি ময়ূরাক্ষী নদীর উৎসভূমি দেওঘরের দিকে। মাঝে গঙ্গাতীরের হাওড়া নগরীতে ঘন্টা দুয়েকের বিরতি। আগামী দিন দশেক কাটবে দেওঘরের বনে পাহাড়ে। সেখানে এখন পলাশের আগুন জ্বলছে। মহুয়া ফুলের ঘ্রাণে চরাচর বুঁদ হয়ে আছে৷ শালবনে ফুল ফুটেছে৷ বাহা পরবের অপেক্ষায় দিন গুনছে সাঁওতাল পরগনা। আমার এই ফুরিয়ে আসা দিনগুলি, সাফল্য-ব্যর্থতার অঙ্ক কষে হাতে শূন্য থাকা দিনগুলি এই ভাবেই কেটে যাচ্ছে প্রকৃতি ও মানুষের কাছাকাছি থেকে। এই সকালে কামনা করি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বন্ধন আরও দৃঢ় হোক।

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!