অনুগদ্যে অমিত মুখোপাধ্যায়

আমার আকাশ

অয়ি ভুবন মনমোহিনী! না, মনমোহন নয়, মনমোহিনী। প্রকৃতিকে আমি কেন, তামাম মানুষ নারী হিসেবেই চেনে৷ আমি রোজ তাকে কাছে পাই। তার মাঝে বাস করি। তাকে ছাড়া আমার অস্তিতে নেই। তাই আমার কাছে প্রকৃতির জন্য আলাদা কোনও দিবস নেই। যেমন আমার কাছে নারীর জন্য কোনও আলাদা দিবস নেই। কারণ নারী ‘অক্সিজেন।’ নারী আমার অর্ধ নয়, সম্পূর্ণ আকাশ। যে নারীর শরীর থেকে আমার সৃষ্টি, জীবনে প্রথম যে নারীকে চিনেছি সেই মা থেকে শুরু করে আমার স্ত্রী, সদ্য যে মেয়েটির সঙ্গে আলাপ হলো, যে প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা করে, যে ক্যামেরা কাঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে পাখির ছবি তোলার জন্য, যে কর্পোরেট দুনিয়ার লাভ লোকসানের হিসেব ছেড়ে জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে এসেছে, যে সব নারীকে আমি পূর্বাপর চিনেছি তারা সকলেই আমার অস্তিত্বের অংশ। জীবনের নানা পর্যায়ে নারীকে নানা ভাবে চেয়েছি। নানা ভাবে পেয়েছি। তার মধ্যে কাউকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করে ধন্য হয়েছি, কাউকে দূর থেকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি, কাউকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছি, কাউকে পেয়েছি শত্রু হিসেবে। নারীর প্রতি মুগ্ধতায় কেবল শরীরের ঘ্রাণ নয়, শ্রদ্ধাও ছিল অপার। আসলে প্রকৃতি ও প্রকৃতিস্বরূপা নারী আমার কাছে প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকার প্রেরণা, যেমন প্রেরণা আমার সন্তান। তাই নারীর অবমাননা আমাকে ক্রুদ্ধ করে। আমি চাই নারী এমন দিন জয় করুক যখন আলাদা করে নারী দিবসের দরকার পড়বে না। চাই তার সেই লড়াইয়ে আমি যেন সঙ্গী হতে পারি। তাই প্রতি দিনই আমার নারী দিবস। আজ, এই ঘোষিত নারী দিবসের সকালে ভুটান সীমান্তের পাহাড়ের গ্রাম লাপচাখা থেকে আরও উপরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে কামনা করি পুরুষ নারীকে তার সমকক্ষ ভাবতে শিখুক।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।