অনু গদ্যে অমিত মুখোপাধ্যায়

ওম

‘ওম ‘। এই ওম মন্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী। এই ওম এক উষ্ণ কোমল অনুভব। এবং গাছেরও ওম দরকার হয়। না হলে সে ফল দিতে চায় না। এই বিষয়টি জানতে পেরেছিলাম সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জের এক কৃষকের মুখে। তিনি তার কাঁঠাল গাছের কাণ্ডে খড় বেঁধে ওম দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। গাছের গায়ে খড়ের আস্তরণ দেখে তাঁকে কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, “গাছের একটু ওম দরকার গো। এবার বর্ষা দেরি করে শেষ হয়েছে। মাটিতে, হাওয়ায় ভিজে ভাব রয়েছে। তাই একটু ওম চাই গাছের। না হলে ফল দিতে চাইবে না। কাঁঠাল হবে না ঠিকঠাক। তাই খড় বেঁধেছি ওম দেওয়ার জন্য।” তা ওম কি শুধু গাছের দরকার হে! মানুষের আরও বেশি ওম দরকার। না হলে সে বাঁচবে কী করে! অর্থ, কীর্তি, সচ্ছলতার সঙ্গে একটু ওম না পেলে বাকি সব তুচ্ছ হয়ে যায়। আরও নির্দিষ্ট করে বললে অন্য সব কিছু কম পেলেও চলবে অন্তরের ওম পেলে। হ্যাঁ, ওম পেলে বীজ অঙ্কুরিত হয়। মানুষীর ওমে পল্লবিত হয় মানুষ। গাছ হয়ে উঠতে পারে সে৷ তাই ওম চাই এ জীবনে। যে ওম লুকিয়ে আছে পাখির ডানায়, যে ওম ঘনিয়ে ওঠে কাঙ্ক্ষিতের নাভিমূলে, যে ওম গচ্ছিত থাকে মাটির প্রতি কৃষকের ভালোবাসায়, যে ওম জমে থাকে শ্রমিকের ঘেমে ওঠা বুকের কোটরে, যে ওম ঘনিয়ে ওঠে একে অন্যের হাত ধরায়, আগলে রাখায়, সেই ওম হোক প্রতি মুহূর্তের সাধনা। কারণ ওমই সর্বশক্তিমান, বাঁচার মত বাঁচার পাথেয়।

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!