Cafe কলামে – অরুণিতা চন্দ্র – ১

অথ শিব-পার্বতী প্রেমকথা

ভূমিকা

আদর্শ প্রেমিক যুগলের উদাহরণ করা? বিভিন্ন জনের কাছে এ প্রশ্নের নানা উত্তর হয়। রোমিও জুলিয়েট, লায়লা মজনু বা হীর রনঝা বা হিন্দুদের কাছে রাধা-কৃষ্ণ। কিন্তু যে প্রেমের জন্মজন্মান্তরের তপস্যার ফল যে প্রেমের জন্য দেহত্যাগ করেও আবার জন্ম নিয়ে ফিরে আসা যায়, যে প্রেম পুরুষ প্রকৃতি এই দ্বৈতবাদের দ্যোতক ভারতীয় সংস্কৃতির অনু পরমাণুতে জড়িয়ে রয়েছে এমন এক যুগলের কাহিনী। তাঁরা একে অপরের পরিপূরক। তাঁরা শিব ও শক্তি। হাজার হাজার বছর ধরে ভারতীয় স্বত্ত্বা আদর্শ দম্পতির উদাহরণ হিসেবে তাঁরা জ্বাজল্যমান। তাঁদের কাহিনী প্রমাণ করে সব প্রেম বিচ্ছেদের অগ্নিতে সমাপন হয় না। একসাথে বাস করে দাম্পত্যের ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করেও যুগের পর যুগ প্রেম অমর হয়ে থাকতে পারে। তাই সনাতন ভারতীয় সভ্যতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিব-শক্তির দাম্পত্যের অম্লমধুর নানা কথা ছড়িয়ে আছে। তারই কিছু উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা যাক।
এই কাহিনী যোগী শিবের হিমালয় দুহিতা পার্বতীর পাণিগ্রহণ অনতিকাল পরের। জগনমাতা, জগৎকারণ নিত্যা প্রকৃতি যখন শৈলজা রূপে শিবজায়া তিনি জগৎ-এর জ্ঞানচক্ষু উন্মেষ হেতু এক জিজ্ঞাসু ষোড়শবর্ষীয়া কিশোরীর ভূমিকা গ্রহণ করেন। পার্বতীর প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শিব অবতীর্ণ হন বিশ্বের প্রথম গুরু তাই মহেশ্বর আদিগুরু রূপে পরিচিত হন। আর উমা হন তাঁর প্রথম শিষ্য। এভাবেই উৎপত্তি হয় তন্ত্রের দুই গুরুত্বপূর্ণ ধারার। আগম তন্ত্র যেখানে শিব প্রধান বক্তা এবং নিগম তন্ত্র যেখানে শক্তি প্রধান বক্তা।
বিবাহের অনতিকাল পরেই একদিন এক অন্তরঙ্গ মুহূর্তে কৈলাসের গুহাভ্যন্তরে পার্বতী অনুযোগ করলেন হিমালয় রাজের প্রাসাদ ত্যাগ করে কৈলাসের নিস্তরঙ্গ জীবনে তিনি অধৈর্য বোধ করছেন। তাই নবপরিনীতা কিশোরী বধূর মনোরঞ্জনে মহাদেব অবতীর্ণ হলেন গল্পকথকের ভূমিকায়। রচিত হল এক অশ্রুতপূর্ব কাহিনীর। সে কাহিনী হয়ত সেই গোপন গিরিকন্দরেই হারিয়ে যেত যদি না হিমালয়ের এক ক্ষুদ্র বিহঙ্গ সেই অন্তরঙ্গ বার্তালাপ নিজ স্মৃতিতে রেখে দিত। সেই পক্ষী সে কাহিনী বহন করে নিয়ে গেল পাহাড়ী তটিনীতে খেলা করে বেড়ানো তার সুহৃদ এক মাছের কাছে। সেই মাছ যখন এক গন্ধর্বের সংস্পর্শে এল তখন সেই কাহিনী নিজের প্রাণদানের বিনিময়ে ভাগ করে নিল সেই গন্ধর্বের সাথে। গন্ধর্বের কাছে এই কাহিনীর শ্রোতা হল তার সখা এক যক্ষ। এভাবে লোকশ্রুতি পরম্পরায় কাহিনী ছড়িয়ে পড়ল মানবসমাজে বৃহৎকথা পরিচয়ে। সময়ের সাথে সাথে স্থান কাল পাত্রের পরিবর্তনে কাহিনীতে যুক্ত হতে লাগল নব নব আঙ্গিকের। এভাবেই জন্ম হল কথাসরিৎসাগরের। এভাবেই শিব-পার্বতীর বিশ্রম্ভালাপ জন্ম দিল জগতের প্রথম কাহিনীর।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।