সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন অ্যালবার্ট অশোক (পর্ব – ৫৬)

শিল্প কি? আরেকবার ভাবুন ছাত্রছাত্রীরা

শৈল্পিক মনের জন্য, একটি গভীর মানসিক চাপ, জ্ঞান, বেসুরো বা অসঙ্গতি কিছু থাকা অনিবার্য। শিল্পীকে অবশ্যই তৈরি বা সৃষ্টি করতে হবে- তা তার শরীর, হাত, শব্দ বা অন্যের দেহ দিয়ে হোক- কিন্তু তাকে তৈরি করতে হবে। অবর্ণনীয় চুলকানি বা তাড়না থেকে রেহাই নেই যা একজন শিল্পীর পেটে থাকে।
এই চুলকানি প্রশমিত করার বারবার চেষ্টা হতে পারে নানা রকম মলম এর প্যাকেজ,কোম্পানীর তৈরি, ‘বাস্তব পৃথিবীর’ বুলেটিন দিয়ে। যাইহোক, সমস্ত প্রচেষ্টাই স্বল্পস্থায়ী। স্রষ্টাকে অবশ্যই সৃষ্টি করতে হবে, কিন্তু তার খাওয়া এবং বেঁচে থাকাও প্রয়োজন, এবং তাই মানসিক চাপ ও অসঙ্গতি। এখানেই পৃষ্ঠপোষকতা এবং এর বিভিন্ন রূপ প্রবেশ করে। অর্থাৎ কেউ যদি শিল্পীকে তার কাজের জন্য আর্থিক সাহায্য না করে তাহলে শিল্পীর কাজ করা অসম্ভব।
শিল্পী কি সৃষ্টি করে যে তাকে সাহায্য দরকার?
বাজারে যা অনায়াসে পাওয়া যায় তা পুনরায় তার মতন করে বানানোর জন্য? যেমন ফ্যাক্টরিতে বা কারখানায় নানা জিনিস ছাঁচে ফেলে বানানো হয়, বা একই বস্তুর অনুরূপ কিছু হাতে বানানো হয় তেমন কিছু?
না। গ্রামে গঞ্জে শহরে, স্বশিক্ষিত বা ইউনিভার্সিটিতে ডিগ্রী লাভ করা লাখো লাখো মানুষ সুন্দর কিছু তৈরি করেন, যেমন পুতুল, মূর্তি, দৃশ্যচিত্র, কারুর পোর্ট্রেট, এমনি আগেকার মাস্টার পেইন্টারদের নকল বা কিছু অদল বদল করে পেইন্টিং বানানো। দেব দেবীর ছবি, কুকুর বিড়াল ফুল গাছ নদী ইত্যাদির ছবি।
না। এসব সৃষ্টি করে আপনি পাড়ার বা স্থানীয় শিল্পী নামের পরিচয় পাবেন যারা শিল্পের কিছুই জানেনা, তারা আপনাকে প্রশংসা করবে, ভাল লাগলে কিনেও নেবে। কিন্তু তার দাম আপনি যা পাবেন তাতে আপনার ঘর সংসার চলবেনা। আপনাকে কেউ পৃষ্ঠপোষকতাও করবেনা। আর একাজ করে বাস্তবিক আপনি শিল্পী নাম পাবেননা। আপনাকে বলা হবে চিত্রকর, ছবি আঁকিয়ে, যেমন ইঞ্জিনীয়ার, ডাক্তার, কেরাণী এসব পেশা তেমন কিছু ধরণের মানুষ। আপনি কোথাও দক্ষতা থাকলে জোর একটা ভাল চাকরি পেতে পারেন।
তাহলে আপনি কিভাবে পৃষ্ঠ পোষক পাবেন বা কারা ফান্ড (মোটা টাকা) পায় কাজ করার জন্য?
আপনাকে জানতে হবে শিল্প/ভাস্কর্য কি?
শিল্প ভাস্কর্য কি জানতে হলে আপনাকে রীতিমতো শিল্প নিয়ে হাতে কলমে পড়াশুনা করতে হবে।দেখতে হবে নির্মাণ। যতটুকু সম্ভব শিল্পের প্রাচীন কাল থেকে আজ অবধি শিল্পের ধারা কিভাবে এসেছে, ২) যা আগে কেউ ভাবেনি, করেনি, যা অত্যন্ত গুরুতর বিষয়, স্পর্শকাতর বিষয়। যেকোন বিষয়, যেখানে আপনি কেন এটা করলেন তার বক্তব্য মৌলিক হলে আপনি গ্রাহ্য হবেন, ৩) প্রচার মাধ্যম আপনাকে গ্রহণ না করলে আপনাকে সাহায্যের জন্য বা পৃষ্ঠপোষতার জন্য কেউ এগিয়ে আসবেনা। বা হতে পারে আপনি একটা নতুন আইডিয়া বা ভাবনা নিয়ে তার একটা ছোট সংস্ক্রণ তৈরি করে কোন শিল্প পতির কাছে গিয়ে বুঝিয়ে বলুন তাহলে আপনি তার অনুগ্রহ পেতে পারেন যদি সে মনে করে এটা দারুন কিছু বস্তু হতে পারে। এর বাইরে আর কোন রাস্তা শিল্পী হবার জন্য নেই। আপনি শিল্পী হলে ইতিহাসে স্থান পাবেন। কেননা আপনাকে লাখো লোকের মধ্যে আপনি একজন অনন্যব্যক্তিত্ব।
শিল্প জগতে কে কাকে নকল করল বা অনুকরণ করল তাতে কিছু আসে যায় না, কারণ কেন্দ্রীভূত বিষয়টা মৌলিক অবশ্যাম্ভাবী ভাবে দেখাতে হবে। যেমন ভিক মুনিজের গল্প। ভিক মুনিজ বিখ্যাত শিল্পীদের নকল করেই বিশ্ববিখ্যাত প্রশংসিত শিল্পী। বর্তমান কাজটি ভিক মুনিজের সিরিজ গর্ডিয়ান পাজলস series Gordian Puzzles, থেকে, যা পাবলো পিকাসোর অন্যতম বিখ্যাত চিত্রকলা Pablo Picasso’s most famous paintings এবং প্রাচীনতম কিউবিস্ট রচনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, যা শিল্পের ইতিহাসে একটি স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। কাজটি ছিল মর্মাহত এবং এর উজ্জ্বল এবং উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য মানুষ বিভক্ত। কাজটির নিজস্ব ব্যাখ্যা তৈরি করতে, মুনিজ ধাঁধা টুকরোতে ছবিটি একাধিকবার মুদ্রণ করেছিলেন multiple times on puzzle pieces। এরপর তিনি একসঙ্গে শত শত টুকরোকে একত্রিত করে স্বীকৃত চিত্রকর্মকে অবিশ্বাস্য বিশদভাবে পুনরায় তৈরি করলেন। পিকাসোর মাস্টারপিসের কথা বলতে গিয়ে মুনিজ বলেন, “যদিও অনেক সরলতা আছে, তবুও যদি আপনি কাছ থেকে দেখেন, এই ধরনের একটি পেইন্টিং থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।” পেইন্টিংকে জটিলভাবে একত্রিত করার মাধ্যমে, মুনিজ গভীরভাবে অনুসন্ধান চালান এবং নিচের অর্ধেকের মাঝখানে একটি দাগের মতো সুক্ষ্ম বিশদটি তুলে ধরেন যে চিত্রটি মেরামত করা হয়েছে। যদিও ছবিটি সম্পূর্ণ, কিন্তু ধাঁধার টুকরোগুলো শেষ পর্যন্ত কাজটিকে “অমীমাংসিত”। এখানে কিছু কাজের নমূনা দেখুন।

ভিক মুনিজ Vik Muniz (পর্তুগীজ উচ্চারণ ভিক মিউনিস]; ব্রাজিলের সাও পাওলোতে জন্ম ১৯৬১ São Paulo, Brazil,) একজন ব্রাজিলিয়ান Brazilian শিল্পী এবং ফটোগ্রাফার। একজন টেলিফোন অপারেটর মারিয়া সেলেস্তের একমাত্র সন্তান হিসেবে এবং ভিনসেন্ট মুনিজ, রেস্তোরাঁর ওয়েটার। [ Maria Celeste, a telephone operator, and Vincente Muniz, a restaurant waiter] মুনিজের দাদি আনা রোচা Ana Rocha তাকে ছোটবেলায় কীভাবে পড়তে হয় তা শিখিয়েছিলেন। তার স্মৃতিচারণে, মুনিজ স্কুলে লেখালেখির সাথে লড়াই করার কথা স্মরণ করিয়েছেন, সেজন্যই তিনি তার চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতে দৃশ্যজগতের দিকে ঝুঁকেছিলেন। 14 বছর বয়সে, তার গণিত শিক্ষক তাকে একটি শিল্প প্রতিযোগিতায় প্রবেশের সুপারিশ করেছিলেন। তিনি জিতেছিলেন এবং একটি আর্ট স্টুডিওতে আংশিক বৃত্তি পেয়েছিলেন।
শুরুর দিকে তিনি একজন ভাস্কর হিসাবে শুরু করেন, মুনিজ তার কাজের ফটোগ্রাফিক উপস্থাপনা নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে, অবশেষে ফটোগ্রাফিতে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেয়। প্রাথমিকভাবে অপ্রচলিত সামগ্রী যেমন টমেটো সস, হীরা, ম্যাগাজিন ক্লিপিংস, চকলেট সিরাপ, ধুলো, ময়লা ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা, মুনিজ শিল্পকর্ম তৈরি করেন, পুরোনো মাস্টারের আঁকা এবং সেলিব্রিটি পোর্ট্রেট, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে উল্লেখ করে, এবং তারপর তাদের ছবি তোলে। তাঁর কাজ বাণিজ্যিক সাফল্য এবং সমালোচনামূলক প্রশংসা উভয়ই পেয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী প্রদর্শিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্ক এবং ব্রাজিল ভিত্তিক গ্যালেরিয়া নারা রোসলার “Galeria Nara Roesler প্রতিনিধিত্ব করছেন।
২০১০ সালে, মুনিজকে ডকুমেন্টারি ফিল্ম ওয়েস্ট ল্যান্ডে (the documentary film Waste Land. Directed by Lucy Walker) দেখানো হয়েছিল। লুসি ওয়াকার পরিচালিত, চলচ্চিত্রটি রিও ডি জেনিরোর Jardim Gramacho, on the outskirts of Rio de Janeiro উপকণ্ঠে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আবর্জনা ডাম্প জার্ডিম গ্রামাচোতে মুনিজের কাজ তুলে ধরে। ছবিটি ৮৩ তম একাডেমি পুরস্কারে সেরা ডকুমেন্টারি ফিচারের জন্য একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল the Academy Award for Best Documentary Feature at the 83rd Academy Awards। এছাড়াও অনেক পুরস্কার অসকার পেয়েছিল।মোট কথা একটা বিখ্যাত ডকু ফিল্ম। এই লিংকটায় দেখুন। https://vimeo.com/16290358
ওয়েস্ট ল্যান্ড ২০১০ এর ব্রিটিশ-ব্রাজিলিয়ান ডকুমেন্টারি ফিল্ম, চলচ্চিত্রের ঘটনাগুলির শিল্পী ভিক মুনিজ, যিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ল্যান্ডফিল, রিও ডি জেনিরোর বাইরে জার্ডিম গ্রামাচো ভ্রমণ করেন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য সামগ্রীর সংগ্রাহকদের সক্রিয় একটি গোষ্ঠীর সাথে সহযোগিতা করার জন্য যোগাযোগ করেন, যারা সমসাময়িক শিল্পে আবর্জনার আশ্চর্যজনক রূপান্তরের মাধ্যমে লন্ডনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নিলাম ঘরে যাওয়ার পথ খুঁজে পান । ক্যাটাডরস/সংগ্রাহক একটি সমবায় প্রতিষ্ঠিত এবং নেতৃত্বে সেবাস্তিও কার্লোস ডস সান্তোস, ACAMJG,(Sebastião Carlos Dos Santos, the ACAMJG) বা এসোসিয়েশন অফ পিকার্স অব জার্ডিম গ্রামাচো, যিনি তার সম্প্রদায়ের জীবন উন্নত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে সৃষ্ট অর্থ ক্যাটাডোর এবং ACAMJG কে ফেরত দেওয়া হয়, সেইসাথে ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড থেকে পুরস্কারের অর্থ, ক্যাটাডোর এবং তাদের সম্প্রদায়কে সাহায্য করা হয়।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।