Cafe কলামে – আত্মজ উপাধ্যায় (পর্ব – ১৯)

বিবাহঃ নারী পুরুষের যৌনমিলনের অনুমতি? – ৯

এই সংখ্যা নিয়ে ৯টি পর্ব । আগে ৮টি পর্ব প্রকাশ হয়েছে।৬৬৭৫টি শব্দ ব্যবহার হয়েছে, হয়ত আরো কয়েকটি পর্ব লিখে আমি উপসংহার টানব। আমি বোঝাতে চেয়েছি, বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠান একবিংশ শতাব্দীতে মানুষ বাতিল করে দিক। কারণ বিয়ে নারী পুরুষের মধ্যে এতকাল অশান্তি ও বিবাদ দিয়েছে। মানুষকে এক অদৃশ্য শক্তির কাছে পরাধীন করেছে। নারী পুরুষের নিজেদের বিকাশ খর্ব করেছে। সমাজকে করেছে অহেতুক দায়ী। মূলতঃ মহিলাদের কথা অনুযায়ী, দ্বিতীয় অবস্থানের মানুষ বানিয়েছে।(সেকেন্ড সেক্স, ১৯৪৯, সিমোন দ্য বোভোয়া)
মহিলাকে স্বাবলম্বী ও স্বাধীনতা দিতে গেলে বিয়ে প্রতিষ্ঠান খন্ডন করা ছাড়া আপাততঃ আমার সমীক্ষা ও পড়াশুনায়, অন্য কোন রাস্তা দেখিনা।বিয়ে প্রতিষ্ঠান  উচ্ছেদ করার সাথে সাথে সমাজ ও রাস্ট্রকে নারী পুরুষের যৌনসংগমের স্বাধীনতাও দিতে হবেন। যৌনকর্মীদের স্বীকৃতি দিতে হবে পরিস্কার, যা ইউনাইটেড নেশন বহু কাল আগেই দিয়ে দিয়েছে। সন্তানের বিষয় আরো সুরক্ষায় যেতে হবে। উত্তরাধিকারের বিষয়গুলি আরো স্বচ্ছতায় আনতে হবে।
বাস্তবিক আমি কিছুই বলিনি। গত ১০০ বছরে (আক্ষরিক অর্থেই ১৯২০ সাল থেকে) সমাজে যেভাবে নরনারীরা যৌন সম্পর্কিত বিষয় ও নিজেদের মানবিকতা বিকাশের যে সংগ্রাম চালিয়ে, যে বিষয়গুলি সমাজের নিয়ম কানুনের উর্ধে এসে খুঁজে পেয়েছেন, আমি সেগুলি নিয়েই আপনাদের সামনে উপস্থিত।
সম্পত্তির বিবর্তন,  শুরু ২লক্ষ বছর আগে, অর্থাৎ উদ্বৃত্ত বা বাড়তি আয় বিতরণ নিজেদের গোষ্ঠির মধ্যে বা নিজের একান্ত কাছে। সন্তান ও দাসত্ব তখন থেকেই সমস্যা সহ বিদ্যমান ছিল।
(Smith, Eric Alden; Hill, Kim; Marlowe, Frank; Nolin, David; Wiessner, Polly; Gurven, Michael; Bowles, Samuel; Mulder, Monique Borgerhoff; Hertz, Tom; Bell, Adrian (February 2010). “Wealth Transmission and Inequality Among Hunter-Gatherers”. Current Anthropology.)
অর্থাৎ,  পরাধীনতা মানব সভ্যতার একটি অংশ, সর্বকালেই ছিল। যুগে যুগে তার নকশা বা রূপ পাল্টেছে। পাল্টাবে। মানুষ একটা সমস্যা মেটাতে মেটাতেই আরেকটা সমস্যা পা দিয়ে ঢুকে যায়। জটিলতার জট ছাড়াতে ছাড়াতে মানুষ জট বাড়াচ্ছে না মুক্ত হচ্ছে, তার পরিণতি পরিষ্কার আগামী ভবিষ্যত বলবে।
দাসত্ব মিশরে, খ্রীষ্টপূর্ব  ৩৫০০ বছর আগে (Sumer in Mesopotamia) সুমের মেসোপটেমিয়ায়। রোমান সাম্রাজ্যে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু তার (দাসত্বপ্রথার) সবচেয়ে খারাপ পরিণতি দেখা যায়, খ্রীস্টান ও ইসলাম ধর্মে প্রচার ও দ্বন্দ্বের সময়গুলিতে। ঐতিহাসিকগণ চিহ্নিত করেছে মধ্যযুগের প্রারম্ভে।
(Ariel Salzmann (2013). “Migrants in Chains: On the Enslavement of Muslims in Renaissance and Enlightenment Europe”. Religions. “Between the Renaissance and the French Revolution, hundreds of thousands of Muslim men and women from the southern and eastern shores of the Mediterranean were forcibly transported to Western Europe.”
Historians typically regard the Early Middle Ages or Early Medieval Period, sometimes referred to as the Dark Ages, as lasting from the late 5th or early 6th century to the 10th century AD They marked the start of the Middle Ages of European history. The alternative term “Late Antiquity” emphasizes elements of continuity with the Roman Empire, while “Early Middle Ages” is used to emphasize developments characteristic of the earlier medieval period. As such the concept overlaps with Late Antiquity, following the decline of the Western Roman Empire, and precedes the High Middle Ages (c. 11th to 13th centuries)
ক্রীতদাস প্রথা (The slave trade : the story of the Atlantic slave trade, 1440-1870) আটলান্টিক দাস ব্যবসা পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিক অব্দি সরকারি হিসাবে চিহ্নিত।

দাসপ্রথা দু’রকমের দেখা যায়, ইসলামী ক্রীতদাস ও ইউরোপীয় রাস্ট্রগুলির মধ্যে।  ইসলাম বা আরব পৃথিবীতে আফ্রিকার কালো দাসদের নিয়োগ করা হত, পাচক, উপপত্নী, চাষেরশ্রমিক ও সেনাদলে। ইসলামি আরবেরা,একজন কালো পুরুষের সাথে দুজন কালো মহিলা রাখত, আর আটলান্টিক ক্রীতদাস ব্যবসায় দুজন পুরুষের সাথে একজন মহিলা রাখত।
 ক্রীত দাস প্রথা উঠে গেছে বহুকাল। কিন্তু আজও  (২০২১সাল) দাসত্ব রয়েছে নানা রূপে।  প্রতি ১৫০ জন মানুষের মধ্যে ১জন সম্পূর্ণ্রূপে দাস হয়ে বেঁচে আছে। The International Labour Organisation (ILO) estimates that 21 million people are trapped in forced labour and other forms of modern slavery আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন ইউনাইটেড নেশনের একটি শাখা থেকে বলা হয়েছে, প্রায় ২কোটির উপর মানুষ অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় দাসত্বের মধ্যে জীবিকা।
আরেকটি বেসরকারী মতে সাড়ে চার কোটি মানুষ দাসত্বের শিকার।
দাসত্ব – এই প্রশ্ন তোলার পিছনে ২টি কারণ। ১। দাসত্ব শব্দটার মধ্যে কতটা ভয়াবহ মানবিক অবস্থা বা মানবাধিকার হরণ লুকিয়ে থাকে তা বোঝানো। ২। মহিলারা বলছেন, বিয়ে হল ‘দাস প্রথা’।
সিমোন দ্য বোভোয়া(Simone de Beauvoir),  বিখ্যাত নারীবাদী ও লেখিকা, ১৯৪৯ সালে সেকেন্ড সেক্স বইটিতে উল্লেখ করেছেন এসব কথা। বিয়ের মাধ্যমে মহিলারা ২য় অবস্থানে চলে যান, মানে ২য়শ্রেণির নাগরিক হন। এছাড়া ফেমিনিস্ট বা নারীবাদীরা শিক্ষিত সমাজ ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে বিয়ে হল দাস প্রথা।
কিন্তু বাস্তব হল তার উলটো। পুরুষরা দাবি জানাচ্ছে, তাদের কেন পরিশ্রম উপায় মহিলাদের জন্য দিতে হবে?
যখন বিয়ে করে পুরুষকে নেমে আসতে হয়, মহিলার কাছে নিজের শক্তি ও বীরত্ব ইত্যাদি সমর্পন করে। বিয়ের মাধ্যমে নারীর সকল দায়িত্ব পুরুষ নিজের কাঁধে তুলে নেয়।
মূল প্রসঙ্গগুলির পুনরুক্তি (Recapitulation)
আসুন বিয়ের রিং-দেওয়ার অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত চর্চা আচারগুলি দেখি:
১. হাঁটু ভেঙ্গে আচার (Genuflection): প্রপোজ করার জন্য মানুষ এক হাঁটুতে নেমে যায়
২. প্রশংসা স্মারক (Commendation token): রিং বিনিময়
৩. অধীনস্থের চুম্বন(Vassal’s kiss): অনুষ্ঠানের সময় আরেকবার দেখানো নারীর কাছে সমর্পন
৪. শ্রদ্ধা ও বিশ্বস্ততা দেখানো(Homage and fealty):  বিবাহের ব্রত শপথ করে সন্দেহমুক্ত দেখানো
৫. আনুগত্য (Subservienc): “এটি মহিলার বিশেষ দিন”
৬. সেবা (Service): পুরুষ তার স্ত্রীর জন্য সারা জীবন কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকে
৭. সদা উপস্থিত নির্বিবাধ(Disposability): “আমি তোমার (স্ত্রী) জন্য মরে যাব”।

( চলবে )

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।