সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৭৯)

পুপুর ডায়েরি

পুপুর ডায়েরিতে বহু গুণী শিল্পী তারকা নক্ষত্রের আলোর রেশ।

বেশ মনে পড়ে, বাবার সাথে সাথে তাঁর সহপাঠী বন্ধু শ্রী সুখেন দাসের বাড়িতে যাওয়ার কথা। সেখানে তাঁর দাদা সঙ্গীত পরিচালক শ্রী অজয় দাস ও থাকতেন অনেক সময়।
ছোট্ট পুপু এত নি:শব্দ বাচ্চা ছিলো বলেই বোধহয় বাবার পাশে পাশে ছায়ার মত এন্ট্রি পেয়ে যেত এমন সব দুর্লভ আড্ডায়।
গান নিয়ে, শিল্পীদের নিয়ে, সিনেমার নানান দিক নিয়ে এই বন্ধুদের আলোচনা স্পঞ্জের মত শুসে নিতো সেই শিশু মস্তিষ্ক।
আর শিশু মন খুব খুশী হত সব মানুষেরা বাবাকে কত ভালোবাসেন, সম্মান করেন সেই দেখে।
বাবা মায়ের প্রাণের বন্ধু মানিক কাকু, নীপা জেঠিমার যোধপুর পার্কের একতলা বাড়িতে, কিশোর রশিদ খানের গলা শুনে এসে বাবা বলেছিলেন এই ছেলেটা এক দিন সারা পৃথিবীকে মুগ্ধ করে দেবে দেখো। আর এতো ভালো ছেলে, কী সুন্দর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো আলাপ হতেই।
সত্যিই সারা পৃথিবী তো আজও ভাসছে সেই মুগ্ধতার ঢেউয়ে।

অন্য দিকে, নবনালন্দা ইস্কুলে পুপুর রিহার্সালের স্বর্গীয় আনন্দও ছিলো।
আহা আহা, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্র, অনাদি প্রসাদ, সাধন গুহ পলি গুহ… কে না ছিলেন?

আজও পুরোনো বন্ধু এবং তাদের বাবা মায়েরা বলেন, পুপুর একক অভিনয়, ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ হয়ে, মনে দাগ কেটে আছে।
পুপু হাফ শার্ট আর ধুতি পরে, বলেছিল : আবদুল মাঝির গল্প।
সাজ এবং অভিনয়, আবৃত্তি, গলার ওঠানামা, যাকে বলে থ্রোইং, অবশ্যই বাবা মশাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৈরী করে দিয়েছিলেন।
রেক্টর স্যার, আন্টি, শ্রী আর্য মিত্র, শ্রীমতী ভারতী মিত্র, কী খুশী হয়েছিলেন মিস্টার ভট্টাচার্য যে ভাবে শিখিয়েছেন, তাতে।
কিন্তু পুপুর যেটা দর্শকদের উচ্ছ্বসিত হাততালির থেকেও বেশী মনে পড়ে তা হল, সেই যে সাউদার্ন অ্যাভিনিউ, নালন্দা ভবনের ছোট্ট সিমেন্ট করা ডায়াস, সেখানে স্ট্যান্ড লাগানো মাইকে যখন পুপু আবদুল মাঝির কীর্তিকলাপের গপ্পো শোনাচ্ছে, পাশে শতরঞ্জিতে বসে হারমোনিয়ামের স্কেল ঠিক করছিলেন এক অপূর্ব সুন্দর মানুষ।
যিনি পুপুর বলা শেষ হতেই তাকে আদর করে নিজের গান শুরু করলেন।
তাঁর নাম, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।

জীবন মশাইকে পুপু আভূমি প্রণাম জানায় এইসব কারণেই, প্রতি ক্ষণে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *