সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ৩)

আরশি কথা

বাড়ী ফিরে প্রেশারে চাল , ডাল দুটো বাটিতে আলাদা করে বসায় ঝোরা সঙ্গে আলু আর ডিম. পেয়াজ কুঁচি করা আছে ফ্রিজে. খাবার আড়ম্বরে যাবে না. বাগানের গেটে তালা দেয়. পলাশ গাছটাতে এসে বসে একটা রাতচরা পাখী. পিঁউ কাহা, পিঁউ কাহা করে সে ডেকেই যায়. সম্ভবত পাপিয়া . ঘরের বাতি নিভিয়ে আবার আলমারি থেকে আয়নার পুটুলি টেনে বার করে সে. হাত বলে যায় আয়নার গায়ে. একটা আটকোনা আয়না টেনে বার করে সে. ফুটে ওঠে মুখের সারি. প্রেশারে তীব্র সিটি বাজে. মুখের সারি সরে যায়. তারাতারি সামলে, সুমলে আয়নার পুটুলি টেনে বন্ধ করে ঝোরা. সব মুখ পুরুষের মুখ. সব মুখ চেনা. বড় আদরের, বড় যতনের সে মুখগুলি. এতটুকু কমবেশি দাড়িপাল্লায় মাপলে হবে না. প্রত্যেকটি মুখের পাশে একেকটি অবয়ব. কখনো কেশরশুদ্ধু আসলান, কখনো ভেলভেটি ব্ল্যাক প্যান্থার, কখনো রয়েল বেঙ্গল. মুখ টিপে হাসে ঝোরা.
বাইরের ঘরে এসে হাল্কা পাওয়ারের আলো জ্বালে ঝোরা. আজ কমলা রঙের খেলাতেই মেতে আছে সে. থালা টেনে খেতে বসে. টি. ভি চালালেই তো সেই খুন খারাপি. তার চেয়ে সুর্যাস্তের খুন খারাপি লাল দেখা ঢের ভাল. ঝোরা কি পলায়নপর? না: বি. বি. সি খবরটা চালিয়ে দেয় ঝোরা. মিশর জ্বলছে, ইসরায়েল উত্তপ্ত, দিল্লীতে অস্তিত্বের লড়াই. মোবাইলে বেশ কয়েকটা মিসড কল, ওয়াটস এপে সবুজ বাতির মালা. থালা তুলে রেখে দুএকটা সবুজ বাতিকে, পাল্টা সবুজ সংকেত পাঠায়. দু একটা ফোন সারে. এই পৃথিবিতে গোটা কয়েক মানুষের সুস্থতার খবর পেলেই সে খুশি আজকের মত. মুঠোফোন বন্ধ করে সরিয়ে রাখে সে. ঝোরা কি স্বার্থপর?
বাইরের ঘরের বড় আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় সে. বাগানের দরজা খুলে দেয়. বেশ বড় চাঁদ উঠেছে. বাগান বানভাসি জ্যোৎস্নায়. বেলজিয়াম গ্লাসের ভিতর বিশাল চাঁদের অবয়ব. ঘোর লাগে ঝোরার. আজ স্বচ্ছতোয়ার সাথে অনেক গল্প করবে. ওই তো আয়নার ভিতর বাগানে শুকনো পাতায় ঢাকা পথ চলে গেছে, আর উদাসি চোখে স্বচ্ছতোয়া বসে আছে, শুকনো পাতার স্তুপের উপর. ‘এই যে কথা বলবে না আমার সাথে?’ ঝোরা ডাকে. চমক ভাঙে স্বচ্ছতোয়ার. একটু যেন অভিমান হয়েছে মেয়ের. ‘ এসো এসো গল্প করি, বাড়ীতে আজ কেউ নেই, আজ অনেক গল্প করতে পারব.’ ইস গল্প করবে, তুমি তো আয়নার পুটলি নিয়ে বসে ছিলে. ‘ বলে মেয়ে.’উরি বাবা এত গোসা, আরে বাবা পুটলি না খুললে গল্প বলব কি করে, আয়নার ভিতরে তো গল্পরা থাকে.’ তাই বুঝি, আজ কার গল্প শোনাবে? ‘ঝলমল করে ওঠে স্বচ্ছতোয়া. চাঁদের আলোতে ঝিকিয়ে ওঠে তাঁর সাদা সাটিনের ফ্রক, রূপোলি জুতো, রূপোলি চুলের বো.’ আজ তবে তোমাকে আসলানের গল্প বলি. আসলান কে চেন? নারনিয়ার আসলান? ” ও মা আসলানকে চিনব না, সে এলেই তো ক্রিসমাস আসে আর তারপরেই বসন্ত, কি যে বল না তুমি’ হেসে কুটিপাটি হয় মেয়ে.

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।