হৈচৈ কবিতায় জয়দেব দাস

দূরপাল্লার রেল

ঘুম ঘুম নিঃঝুম
ঘুমে কাদা যাত্রী,
মাঝরাতে ট্রেন ছোটে
কাঁপছে ধরিত্রী ।
রেল চলে, রেল চলে
প্ল্যাটফর্ম কইরে,
সিগন্যাল লাল হলো
দেখা যায় ওই রে।
মনে ভাবি এইবার
ট্রেন বুঝি দাঁড়ালে,
যাত্রীরা নাক ডাকে
রাত্রির আড়ালে,
মুখ ঢাকা কম্বলে
ভুঁড়ি কার দুলছে,
পাশ ফেরা চাদরের
ঢাকা তার খুলছে।
ঝিক্-ঝিক্ রেল গাড়ি
ছোটে দূর পাল্লা,
রাত জাগা হকারের
শোনা যায় হাল্লা।
হই-হই, পই-পই
ফিক্-ফিক্ শব্দ!
কচি-কাঁচা জেগে যারা
একেবারে জব্দ।
মায়ে পোয়ে এক ঠাঁই
পোলাপান একখান,
উৎপাত করবে কি
তাই মন আনচান।
পিট্-পিট্ চোখে চায়
হাই তোলা দৃষ্টি,
চাদরের ফাঁকে মুখ
দেখা যায় মিষ্টি।
ঝিক্-ঝিক্ রেল গাড়ি
যাবে দূর পাল্লা,
জোছনা দিগম্বরে
আলো খেলা জানলা।
কালো কালো ঝোপ ঝাড়ে
নাচে আলো রাত্রি,
যত জোরে ট্রেন ছোটে
তত কাঁপে যাত্রী।
ধীরে ধীরে রাত বাড়ে
ঘুম আসে জড়িয়ে,
সব গ্রিন্ সিগনাল
রেল ছোটে উড়িয়ে ।।

এইবার ভোর হল
হাতরস পেরিয়ে,
মাঠ ঘাট জঙ্গলে
নীলগাই দাঁড়িয়ে।
একজোড়া সারসের
ঘাস বন পেরিয়ে,
কাশফুল পাড়ময়
চোখ গেল জুড়িয়ে।
হকারের ডাক শুনে
কয়, ট্রেন্ লেট্ কি?
কাটলেট, অমলেট
পাওয়া যাবে আর কি?
ঝিক্-ঝিক্ রেল চলে
ছোটে দূর পাল্লা,
কোন নদী বয়ে যায়,
দাঁড় বয় মাল্লা।
ব্রিজ দিয়ে রেল ছোটে
ঘড় ঘড় শব্দ,
বাপরে কি শোরগোল
কান হলো বন্ধ।
তাই শুনে ভেঙ্গে গেল
খোকনের ঘুমটা,
কোনখানে ট্রেন্ এলো
টানে মার ঘোমটা।
মায় পোয়ে খুনসুটি
গাল ফোলা দ্বন্দ্ব,
সফরের মজা এই-
এই ভালো মন্দ।
ঠিক্-ঠিক্ শোনা যায়
প্ল্যাটফর্ম ঢুকছে,
চেন বাঁধা সুটকেস
তালা গুলো ঝুলছে।
তাস খেলা যাত্রীর
চটি গেছে হারিয়ে,
জুতো পরে ওরা যেন
কার ঘাড়ে দাঁড়িয়ে।
ওয়াক্ -ওয়াক্, বাপ-বাপ
কার মোজা গন্ধ,
এ,সি বোগি চার দিক
সবকিছু বন্ধ।
ঝিক্ -ঝিক্ চলে রেল
ছোটে দূর পাল্লা,
বেলা বাড়ে ধীরে ধীরে
তত বাড়ে হাল্লা।
আর কত পথ বাকি
হাঁফ ছাড়ে মনটা,
দুই তিন স্টপ আরো
দেড় দুই ঘন্টা।
রেল চলে ঝিক্-ঝিক্
ঝিক্-ঝিক্ শব্দ,
টান ধরা হাত পায়ে
ক্লান্তিতে জব্দ।
দুই ভাই এক ঠাঁই
একখান জানলা,
ঝিক্-ঝিক্ রেলগাড়ি
যাবে দূর পাল্লা।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *