মনে মনে ফন্দি আটতে আটতে আসছি বাল্মীকির খাবারে কিভাবে পুনিতের দেওয়া ওষুধটা মেশাব। পুনিতের প্ল্যান কি হতে পারে? একটা হতে পারে যে বাল্মীকিকে ঘুম পাড়িয়ে আমরা ধাপার মাঠে যাব । জানিনা, আর কিছু ভাবতে পারছিনা । এতোকিছু জটিলতা আমার একদম ধাতে সয়না । আমি নির্বিরোধি মানুষ। জ্ঞান ও বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি । যাইহোক দরজা খোলা । ঘোরে ঢুকে যা দেখলাম তা আমার কল্পনারও বাইরে ।দেখি বসার ঘোরে সোফায় লুলিয়া বসে আছে । হঠাৎ কি হল? আজ এতবার ফোন করলাম ধরলো না । সেই কারণে সেটা মেকআপ দিতে কি সরাসরি বাড়িতে চলে এলো?কি ধরিবাজ মেয়ে! আমি একটু ভনিতা করে বললাম, “আরে লুলিয়া তুমি এখানে? তোমাকে কতবার ফোন করলাম “। লুলিয়া আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো । ওর মুখটা আজ একেবারে অন্যরকম । লুলিয়ার এই রূপ আমি আগে কখনো দেখিনি । মুখটা থম থম করছে । চোখ দুটো ছল ছল করে উঠেছে। আমি সমস্ত বিদ্বেষ ঘৃণার কথা ভুলে গেলাম। মনটা এক আশঙ্কায় মোচড় দিয়ে উঠল । জিজ্ঞাসা করলাম,”কি হল লুলিয়া? চুপ করে আছো? কি হয়েছে তোমার?”লুলিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো। আমাকে একেবারে আঁকড়ে ধরেছে মেয়েটা । আমি মানুষের মন ভালো বিচার করতে না পারলেও, এভাবে লুলিয়ার জড়িয়ে ধরা ও কান্নার মধ্যে একটা আন্তরিকতা অনুভব করলাম । আমিও মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”কি হয়েছে লুলিয়া? আমায় বলো প্লিজ ।”লুলিয়া কান্নার বেগ চাপতে না পেরে আরও জোরে কেঁদে উঠল । অনেক চেষ্টা করেও থামাতে পারলাম না। কিছু বলতে গিয়েও ফুঁপিয়ে উঠছে কিছু বলতে পারছে না। আমার হঠাৎ খেয়াল হল বাল্মীকির কথা। আরচোখে রান্নাঘরের দিকে তাকালাম। দেখি দরজার ফাঁক দিয়ে কেউ উঁকি মারছে । বাল্মীকি সব ফলো করছে।
আমি লুলিয়াকে বললাম,”চলো ভেতরের ঘরে গিয়ে বসবে “। ভেতরের ঘরে গিয়ে বললাম আমায় বলতো কি হয়েছে? না বললে বুঝবো কি করে?”বুঝতে পারছি লুলিয়া খুব কান্না ছাপার চেষ্টা করছে । মুশকিল হল হাসি বা কান্না যখন ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে তখন তার ওপর বেশ কিছুক্ষন কন্ট্রোল থাকে না । ওকে নিয়ে এবারে আমি বিছানায় বসলাম ।ও আবার আমাকে জড়িয়ে বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলো । আমি ওর কান্না থামার অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু দেখছি ও আসতে আসতে ওর শরীর ছেড়ে দিচ্ছে।তারপর একেবারে শরীর এলিয়ে শুয়ে পড়লো । প্রায় আচৈতন্য অবস্থা । দেখছি, আরে অভিনয় করছে নাতো? আমাকে ঘিরে যেসব রহস্যের মায়াজাল পাতা হয়েছে তাতে সবই সম্ভব। আমি লুলিয়ার নাম ধরে ডাকলাম । সারা নেই তারপর শরীরটাকে ধরে জোরে ঝাকুনি দিলাম । তাও সারা নেই ।বুকটা নড়ছে জোরে জোরে । অজ্ঞান হলেও কেউ ফুঁপিয়ে ওঠে কিনা জানিনা ।এবার একটু চিন্তা হল । বাল্মীকিকে ডাকলাম । তাড়াতাড়ি আসতে বললাম। বাল্মীকি ছুটে এলো। লুলিয়াকে দেখিয়ে বললাম,”দেখো এই দিদিমনির শরীর খারাপ হয়েছে, ভালো জ্ঞান নেই মনে হচ্ছে । কোনোভাবেই সারা দিচ্ছে না। তুমি তাড়াতাড়ি মোড়ের ওষুধের দোকানে চলে যাও । সেখানে ডাক্তার খান বসেন । উনি এইসময় দোকানে বসেন । ওনাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো । তুমি তো দিদিমনির অবস্থা দেখছ ।বলবে রোগী অজ্ঞানের মতো হয়ে গেছে এখনই আসুন”। বাল্মীকি তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকতে গেল । লুলিয়ার শ্বাস কষ্ট আছে কিনা জানিনা । তবে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে । বুঁকের ভেতর থেকেও সাঁই সাঁই শব্দ হচ্ছে । ওকে শোওয়া অবস্থায় রেখে বাইরের ঘরে এলাম । হঠাৎ মাথায় এলো বাল্মীকি তো বাড়িতে নেই । এইতো সুযোগ । তাড়াতাড়ি কিচেনে ঢুকলাম । গ্যাস ওভানের পাশে দেখলাম একটা কাচের গ্লাসে ইসবগুলের ভুসি ভেজানো আছে ।রোজ রাতে শোয়ার সময় এই ভুসি খেয়ে বাল্মীকি শোয় । পুনিতের দেওয়া ওষুধটা ওই গ্লাসে মিশিয়ে দিলাম । খানিকবাদে সিঁড়ি দিয়ে উঠেআসার শব্দ পেলাম । বাল্মীকি ডঃ খানকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো । লুলিয়া তখনো আচৈতন্য হয়ে পরে আছে ।