সাতসকালেই ন্যাপলার মুখে এমন সুখবর পেয়ে আমাদের মানে ঘরভর্তি ছেলেপুলেদের চোখেমুখে আলোর বন্যা বয়েছিল।কারণ, বছরে ন’মাস বাইরে আর তিনমাস বাড়িতে থাকা বঙ্কিমবিহারী গনগনি ওরফে বাঁকাদাদু-র এ বাড়িতে পা রাখা মানেই গল্পের জমজমাট আসর।আর,পড়াশোনা থেকে অব্যাহতি।আর,ভোজনবিলাসী বাঁকাদাদুর কল্যাণে খাওয়াদাওয়াটাও এসময় নেহাত মন্দ হয়না।
বাঁকাদাদু হাসল,”অমঙ্গল মানে তোদের মঙ্গল গ্রহের কথা বলছি রে,মানে মার্স।ওরই আদ্যিকালের নাম ছিল অমঙ্গল।অ্যামার্স।গ্যালিলিও সেই সবে দূরবীন দিয়ে খুঁজে পেয়েছেন ব্যাটাকে।কিছু একটা জুতসই নাম দেবেন ভাবছিলেন,সেই নিয়ে আলোচনা চলছে বিস্তর,কিন্তু হোলো কী আমার ঠাকুর্দার ঠাকুর্দার মামাতো জেঠুর খুড়শাশুড়ি ফটাস করে গ্রহখানার নাম বাতলে দিলে,গলগ্রহ…
তা ওই যে তোদের গ্যালিলিও,যার ছোটোবেলার নাম ছিল গাম্লুচিও..জানিস নিশ্চয়ই..ভারি পছন্দ হয়ে গেল নামখানা।”
–“আহা,ওই যে লুচি খেতে বড্ড ভালোবাসত বেচারা,আমাদের বালিগঞ্জের বাড়িতে এলে একগামলা
লুচি একাই সাঁটিয়ে দিত।তাই তো ওর বাবা আদর করে ওকে ডাকত,গাম্লুচিও।
তবে জানিস তো বেচারার নামখানা একটুও পছন্দ ছিলোনা।তাই গলগ্রহ নামটা ও-ই নিয়ে নিল,নইলে আজ মঙ্গলগ্রহের নাম হত গলগ্রহ।”
–“নিয়ে নিল মানে?”আমরা সমস্বরে হামলে পড়ি প্রায়।
–“আরে,নিয়ে নিল মানে,নিয়েই নিল একবারে।বলল,গাম্লুচিও নামটা অনেকদিন হল বয়ে বেড়াচ্ছি,আজ থেকে আমি গলগ্রহ।তবে সবাই ঠিকঠাক উচ্চারণ করতে পারতনা কিনা,তাই ক্রমে গলগ্রহ থেকে হয়ে গেল গ্যালিলিও।”
আমাদের খুকখুক আওয়াজে ভারি বিরক্ত হলেন বাঁকাদাদু,
–“ও কি,হাসি পাচ্ছে বুঝি!ওজন্যেই তোদের কাছে গপ্পোসপ্পো করিনে আজকাল।”
–“না না দাদু,তুমি বলো।তুমি বলো।”আমরা সবাই হাসি চেপে সিরিয়াস মুখে বসি,বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি,কারেন্ট চলে গেছে।জমাটি গল্পের প্রেক্ষাপট প্রস্তুত পুরোপুরি।হঠাৎ মাঝপথে এমন একটা টানটান গল্প থেমে গেলে চলে?
মা এসে ফুলকো লুচির গামলা আর গরম ঘুগনির জামবাটি বসিয়ে রেখে গেছেন।আজ পরিবেশনের দায়িত্ব আমরাই নিয়েছি।থালায় লুচি সাজাতে সাজাতে আমার কানে কানে ফিসফিস করে তিন্নি,”আচ্ছা,রান্নাঘরে
লুচি ভাজার গন্ধ পেয়েই কি ‘গাম্লুচিও’ নামটা মাথায় এল বাঁকাদাদুর?”
প্রচন্ড হাসিটা কোঁৎ করে গিলে ফেলতেই হোলো,কারণ-বাঁকাদাদুর গল্প শুরু হয়ে গেছে আবারও।
লুচিতে জম্পেশ কামড় দিয়ে জাঁকিয়ে বসে বলতে শুরু করলেন বাঁকাদাদু,–“তো হোলো কি,আমার ঠাকুর্দার ঠাকুর্দার মামাতো জেঠু এরপরের নামটা রাখলেন অমঙ্গল,ইংরেজিতে অ্যামার্স।সেখানাই সক্কলে মেনে নিল।আমাদের গালু মানে গ্যালিলিও তো এমন জম্পেশ নাম শুনে,আনন্দের চোটে লুচি মনে করে বাঁহাতে মুঠো পাকিয়ে ধরে রাখা অক্সিজেন তৈরির ফরমুলাখানাই গিলে খেয়ে ফেলল।”
আমাদের সমবেত বিস্ময়ের ওপর বরাভয়প্রদানকারী দৃষ্টিপাত করে বাঁকাদাদু বললেন,”ঘাবড়াসনা।কিছুই হয়নি তেমন।তবে,বেশি লুচি খেয়ে মাথা ধরেছিল বেচারার,মাথার কোষে কোষে ঠিকঠাক অক্সিজেন সাপ্লাই হতে মাথাব্যথাটা সেরে গেল,এই আর কি!”
আমরা যে যার লুচিঘুগনির প্লেট সামলে নিয়ে উৎসুক হয়ে বসলাম।
–“তারপর হল কি,আমার ঠাকুর্দার ঠাকুর্দা,গতিময় গনগনির মাথায় ঝোঁক চাপল,একবার অমঙ্গলে পা রেখে দেখতে হবে।ব্যস্,এক জাপানি বন্ধু হাকুরিওশি আর এক রাশিয়ান বন্ধু সালভাদস্কির সাহায্যে বেশ কয়েকবছরের চেষ্টায় বানিয়ে ফেললেন একখানা আস্ত স্পেসশিপ।”
–হেঁচকি উঠছিল,গিলে নিলুম।
বাঁকাদাদু বলে চললেন,–“দিব্বি গোলগাল চাঁদপানা দেখতে স্পেশশিপখানা!গতিময়ের ঠাকুমা তার ঝকঝকে মেটালবডিতে কাজলের টিপ দিচ্ছেন রোজ।বলা তো যায়না,অমঙ্গলে যাওয়ার জন্য সব নভোশ্চররাই তো ব্যস্ত।শত্রুরাষ্ট্রের নজর লাগতে কতক্ষণ!
…তারপর বারকয়েক ট্রায়ালের পর স্পেশশিপ ড্রাইভ করে শ্রীযুক্ত গতিময় গনগনি ফাইনালি পৌঁছলেন অমঙ্গলের মাটিতে,বন্ধুদের নিয়ে।”
লুচি গলায় আটকে বিষম খাচ্ছিলাম আর কি!বাঁকাদাদু অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাছি তাড়াবার ভঙ্গিতে হাত নাড়ালেন,”অতীত ইতিহাস বিস্মৃত হওয়াই বাঙালীর স্বধর্ম।তোদের দোষ নেই।”
–“ছাড়।তা,অমঙ্গলের মাটি লাল কেন জানিস তো?আয়রন আর অক্সিজেনের যৌগ লালরঙের ফেরিক অক্সাইড দিয়ে ঢাকা অমঙ্গলের মাটি।বিশাল স্পেশশিপ নিয়ে লালমাটিতে ল্যান্ড করতেই সেই লাল ধূলোর ঝড়ে অন্ধকার হয়ে গেল চারপাশ।আকাশ মাটি সব লালে লালে একাকার।
যাহোক,ধুলোঝড় যখন থিতিয়ে পড়েছে..একজন একজন করে নামা হচ্ছে অমঙ্গলের মাটিতে স্পেসস্যুট পরে….তো,মাটিতে পা রেখে সবচেয়ে উৎফুল্ল হল মোটাসোটা হাকুরিওশি।কেন জানিস?
–কেন?আমাদের সমবেত প্রশ্ন।
–আচ্ছা,ধর,মোটাসোটা বিশালবপু এক মহিলা যদি একদিন হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখে সে একধাক্কায় প্রায় বাষট্টি কেজি কমে গেছে,কি করবে সে?
–আনন্দে লাফাবে।একগাল হেসে প্রায় লাফিয়ে উঠে জবাব ছুটকির।বাড়াবাড়ি রকমের বাড়তির দিকে হাঁটতে থাকা ওজন নিয়ে এই জমায়েতের মধ্যে ছুটকিই একমাত্র,যার ওজন কমানো নিয়ে মাথাব্যথাটা সবচেয়ে বেশি।
–ঠিক।একদম ঠিক।হাকুরিওশি-ও তাই করল।রাত দুটো বেজে পঁচিশ মিনিট সাড়ে সতেরো সেকেন্ডে দস্তুরমত পাঁজি দেখে,বালিগঞ্জের বাড়ি থেকে লুচি আর কষামাংস খেয়ে রওনা হবার আগে,শেষবারের মত ওজন করার সময় হাকুরিওশির ওজন ছিল ১০০.২ কেজি।তারপর স্ট্রেট ময়দানে পৌঁছানো। সেখানেই স্পেশশিপে অপেক্ষা করছিল সালভাদস্কি।
–ময়দানে মানে ময়দান থেকে স্পেশশিপটা ছাড়ল?!গলায় একরাশ অবিশ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করে ভোম্বল।
–হ্যাঁ,ছাড়ল।কেন?না ছাড়লেই তুমি খুশি হতে বুঝি?
বুঝলাম বাঁকাদাদু চটেছে।নাহলে এমন বাঁকাট্যারা প্রশ্ন বর্ষিত হতনা।আমি কথা ঘোরাই,”বলছি সালভাদস্কি খেলোনা লুচি আর কষামাংস?”
–“না,সালভাদস্কি ওয়াজ পিওর অ্যান্ড পুওর ভেজিটেরিয়ান।ঠাকুর্দার ঠাকুমার হাতের কষামাংসের স্বাদই আলাদা রে!জানলইনা বেচারা!”দীর্ঘশ্বাস ফেলেন দাদু।
“তো,যেটা বলছিলাম,পৃথিবীর হিসেবে পুরো ২৩ মাস,১৪ দিন পর অমঙ্গলে নামা গেল। নামার পর রীতিমত হালকা বোধ হচ্ছিল সবার,এখানে অভিকর্ষ পৃথিবীর থেকে অনেক কম কিনা।তবে,এতদিনের যাত্রায় হাত পায়ের জং ছাড়িয়ে,ব্যাপারটায় ধাতস্থ হতে সময় লাগছিল।কিন্তু হাকুরিওশিকে পায় কে।হিসেবমত প্রায় বাষট্টি কেজি ওজন কমিয়ে আহ্লাদে লাফিয়েঝাঁপিয়ে সে কি কান্ড!অভিকর্ষের টান কম বলে ভারী স্পেসস্যুট নিয়েও হাত-পা নাড়ানো যাচ্ছিল দিব্বি।শেষে বাকি দু’জনও হাকুরিওশির অনুপ্রেরণায় নেচে নিল দুতিন পাক।”
বাঁকাদাদু বলে চলেছে,”মুশকিলটা হল,এসব নাচানাচি করতে করতে শেষমেশ ক্লান্ত হাকুরিওশি হাঁস-ফাঁস করে একটা টিলার গায়ে হোঁচট খেয়ে উল্টে পড়ল আর স্পেসস্যুটের পকেট থেকে ট্রাইডিমাইটের পেপারওয়েটটা ছিটকে পড়ে পাথরে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে টুকরোটুকরো হয়ে গেল।”
–“ট্রাইডিমাইটের পেপারওয়েট!”পঞ্চু প্রশ্ন করল।
বাঁকাদাদু হাসে,”হাকুরিওশি জাপান থেকে আসার সময় এনেছিল।আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর ওখানে প্রায়শই এরকম যৌগের দেখা মেলে।প্রচুর পরিমাণে সিলিকা মিশে থাকে এতে।আর,জাপানে প্রচুর আগ্নেয়গিরি আছে জানিসই তো।পাথরখানা বইপত্র পড়াকালীন পেপারওয়েটের মত কাজে লাগাত হাকু।পড়া আর খাওয়া এদুটোই তো নেশা ছিল ওর।
তা তখন কি আর জানি,এতবছর পরে গোটা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা এমন তোলপাড়িয়ে উঠবে সেই ভাঙা পেপারওয়েট খুঁজে পেয়ে!”@@@@@—
–“মানে!”
–“মানে হল,মঙ্গলের মাটিতে সিলিকা পাওয়া গেছে বলে যে এত তোলপাড় চারিদিকে, তা তো আসলে সেই দুশ বছর আগে সেদিন অমঙ্গলের মাটিতে পড়ে টুকরো হওয়া নির্দোষ পেপারওয়েট খানা!
মঙ্গলগ্রহের লালমাটির নমুনা পরীক্ষা করে,বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের মাটিতে মিশে থাকা এক নতুন এলিমেন্ট ‘সিলিকা’র খোঁজ পেয়েছেন ।তাই নিয়ে সত্যিই গত কয়েকদিনে বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্তে মহাকাশবিজ্ঞানীদের মধ্যে সাড়া পড়ে গেছে।
আমাদের বিস্ময়াভিভূত মুখগুলোর ওপর চোখ বুলিয়ে আবার শুরু করল দাদু,”পেপারওয়েটটা ভেঙে যেতে মুষড়ে পড়ল হাকুরিওশি।বইটই পড়া ছেড়েছুড়ে দিয়ে,অমঙ্গলের মাটিতে লাল লংকার চারা পুঁতে বেড়াতে লাগল।
যত্ত উদ্ভট ভাবনা,বলে কিনা মাঝেমধ্যে বেড়াতে টেড়াতে আসি যদি,লালমাটিতে পাত পেড়ে বসে জমিয়ে পান্তাভাত আর আলুসেদ্ধ,সাথে ঝাল ঝাল লাল টুকটুকে লংকা–বেড়ে হবে খাওয়াটা!”
-“পান্তাভাত?”
–“অমন চমকাবার কি আছে,শুনি?কতবার খেয়ে গেছে এখানে এসে,ঠাকুর্দার ঠাকুমা পেঁয়াজ আর পোস্ত ভেজে বেশ করে আলুভাতে মেখে দিতেন…ঘরোয়া বাঙালি খাবার খুব পছন্দ করত কিনা!”
যাহোক,আসল কথায় আসি।সালভাদস্কি-টা তো অমঙ্গলে পৌঁছে সারাদিন পাথরের ফাটলে ফাটলে প্রাণের স্পন্দন খুঁজে বেড়াতে ব্যস্ত।
হাতে তেমন কোনো কাজ নেই গতিময়ের।এদিকে দিনটাও গেছে বিচ্ছিরিরকমের লম্বা হয়ে।”
-“মানে?”আমাদের সমস্বর জিজ্ঞাসা।
–“আরে,অমঙ্গলে দিন তোদের এখানের মত চব্বিশ ঘন্টার নয়,ওখানে একদিনের দৈর্ঘ্য চব্বিশ ঘন্টার থেকে মিনিট চল্লিশ বেশি।এটাও জানতিসনা?”বাঁকাদাদু হেসে ফেলেন আমাদের সীমাহীন অজ্ঞানতায়।
মা ইতিমধ্যেই মিষ্টির হাঁড়িখানা বসিয়ে দিয়ে গেছেন।পরিবেশনের অপেক্ষা না করে বাঁকাদাদু নিজেই টপ্ করে একখানা রসগোল্লা তুলে সোজা মুখে চালান করে দিলেন,”যাই বলিস,বেড়ে বানায় হারাধন রসগোল্লাটা…!কতদিন খাওয়া হয়নি!রসগোল্লা না খেলে আঁচিলটা আবার কেমন কটকট করে!”নাকের ওপর লাল আঁচিলটা সামান্য চুলকে নেয় দাদু।
বোম্বেটে এতক্ষণ বেশ চুপচাপ ছিল,হঠাৎ ফোড়ন কাটল,”রসগোল্লার সাথে আঁচিলের কী সম্পর্ক?”
-“আছে বইকি।রসগোল্লার মত রসালো জিনিস খেলে মানুষ রসেবশে থাকে!আর,না খেলে নীরস খটখটে হয়ে পড়ে।তখনই দেখেছি,আঁচিলটাও শুকনো খটখটে থেকে থেকে কেমন যেন কটকটে হয়ে যায়।থেকে থেকেই কেমন কটকট কটকট করে ওঠে।”
ন্যাপলা অস্থির হয়ে তাড়া দেয়,”আঁচিলের কথা ছাড়ো।তারপর লম্বা দিনগুলোয় কি হল, বলবে তো।”
–“দাঁড়া তো বাপু,টাকখানা চুলকে নিতে দে একটু।কখন থেকে কুটকুট করছে।”বাঁকাদাদু চিরপরিচিত ঝোলাটি থেকে একখানা চিরুণি বের করলেন।তারপর,তেলচুকচুকে টাকখানা গভীর মনোনিবেশ সহকারে চিরুনি দিয়ে চুলকোতে লাগলেন,সেই বিস্তৃত টাকসমুদ্রের মাঝখানে নির্জন দ্বীপের মত জেগে থাকা কয়েকগাছি চুলকে ভারি যত্নে আগলে রেখে।
ন্যাপলা ধৈর্য হারাচ্ছিল ক্রমশ,”ওই কগাছি তো চুল!অত সময় নিয়ে,ধীরেসুস্থে চুলকোনোর কি আছে দাদু!”
–“তোরা সময়ের কি বুঝবি রে,দু’দিনের ছোকরা সব!সময় যে কী ঝামেলার জিনিস,তা বুঝেছিলেন গতিময়…”
চিরুনিখানা ঝোলায় চালান করে বলতে শুরু করলেন বাঁকাদাদু,–“সে এক বিতিকিচ্ছিরি কান্ড!প্রতিদিন চল্লিশ মিনিট করে সময় বেঁচে যাচ্ছে,অঢেল সময় হাতে,শেষকালে গতিময় কাজ না পেয়ে,ডায়েরি লিখতে শুরু করলেন।অমঙ্গলের নামকরণের গল্প থেকে শুরু করে এখানে প্রতিদিন কি ঘটছে,তার খুঁটিনাটি।
…সালভাদস্কি দিনকয়েকের চেষ্টায় খুঁজে পেয়েছে ছোট্ট ছোট্ট সাদা পোকা,লালধূলোয় থেকে থেকে গায়ে মরচের মত রং ধরে গেছে…কার্বন ডাই অক্সাইড দিয়ে শ্বসনকাজ চালাচ্ছে…খাদ্যাভাস পর্যবেক্ষণ করার জন্য পোকাগুলোকে নানাবিধ জিনিস দেওয়া হচ্ছে…গতিময়ের ঠাকুমার বানানো কুলের আচার,টুথপেষ্ট,গতিময়ের স্পেশাল নিমডালের দাঁতনটা…
সেদিন লিখতে লিখতে ডায়েরিটা খোলা রেখেই একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলেন গতিময়,ঘুম ভেঙে দেখেন,বিচ্ছু পোকাগুলো ডায়েরির পাতা খেয়ে ফেলেছে কয়েকজায়গায়।সালভাদস্কির কান্ড এটা।ও-ই পরীক্ষার ঝোঁকে কাগজের ওপর ছেড়ে দিয়ে দেখছিল পোকাগুলোকে,খায় কিনা।”
–“সেই থেকেই তবে অমঙ্গলগ্রহের নাম হয়ে গেল মঙ্গলগ্রহ?”
–“আর কি,বাঙালির গর্বের ইতিহাস হাতছাড়া হল।আসল ইতিহাস চাপা পড়ে গেল।হাকুরিওশিটা ওখানেই থেকে গেল।রোমান সায়েবরা বড্ড যত্নআত্তি করছিল,চারবেলা ভালোমন্দ খাওয়াদাওয়া…গতিময় আর সালভাদস্কি ফিরে এল,স্পেসশিপটাও সাথে করে এনেছিল।ছাদে কতদিন পড়েছিল,আমরা ছোটবেলায় ওটায় ঢুকে ঢুকে লুকোচুরি খেলতাম।”
–“সেটা তবে কোথায় এখন?”
ন্যাপলা,বোম্বেটে,ভোম্বল,ছুটকি,পল্টন সক্কলে ঘন হয়ে বসে কৌতূহলে।
–“আর কোথায়,পড়াশোনা লাটে তুলে দিনরাত লুকোচুরি খেলা চলছে আমাদের তখন।পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোতে দেখা গেল,আমি অংকে সাড়ে এগারো,ভূগোলে নয়,ইতিহাসে সাড়ে সাত।ব্যস্।তারপর যা হবার তাই হল।বাবা আর সেজখুড়োমশাই মিলে সেইদিনই ওটাকে ঘাড়ে করে ছাদ থেকে নামিয়ে এনে
লোহা-কাঁচ-টিনওয়ালাকে বেচে দিলেন।”
–“অ্যাঁ,সে কী!অমন ঐতিহাসিক একটা নিদর্শন বেচে দিলেন?”
–“হ্যাঁ।সাধে বলি ইতিহাস ভুলে যেতে বাঙালির জুড়ি নেই!”দীর্ঘশ্বাস ফেলে একখানা লম্বা হাই তুলল বাঁকাদাদু,”ছুটকি রে,মা-কে এককাপ চা করে আনতে বল,ঘন করে দুধ দিয়ে।সেই মঙ্গলগ্রহ থেকে ঘুরে আসার কি আর কম ধকল!কেমন যেন ঘুম ঘুম পাচ্ছে।”