সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব – ২৬)

দেবমাল্য

এই তো কিছুদিন আগে কোন কাগজে যেন পড়লাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ নাকি বলেছে, মোবাইলে বেশিক্ষণ কথা বললে ক্যানসার হতে পারে। ফোন এলেও, ব্যাটারি লো থাকলে সেই কল ধরা উচিত নয়। সকালে ওঠার জন্য মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রাখা খুব খারাপ। ফোনটা সরাসরি কানে না ধরে হেডফোনে কথা বললে তাও খানিকটা রেহাই। আর রাতে মোবাইলের সুইচ অবশ্যই অফ রাখা দরকার। আরও কী কী যেন সতর্ক করে দিয়েছিল। এখন আর মনে পড়ছে না। তবে ওর স্পষ্ট মনে আছে, সেখানে লেখা ছিল, সারা দিনে ছ’মিনিটের বেশি মোবাইলে কথা বলা উচিত নয়। কিন্তু কে শুনছে এ কথা!

বিকেল হলেই প্রতিদিন মোবাইল নিয়ে বসে মায়ের সঙ্গে তানিয়া যে রোজ এত কী কথা বলে দেবমাল্য বুঝতে পারে না। না, বিলের টাকাটা তার পকেট থেকে দিতে হয় বলে নয়, মোবাইলে অতক্ষণ কথা বললে যে ওর নিজেরই ক্ষতি, সেটা বোঝানোর জন্য শুধু মুখে নয়, ওই কাগজের কাটিংটাও তানিয়াকে দিয়েছিল সে। কিন্তু তাতে যে কোনও কাজ হয়েছে, ওর মনে হয় না।

বাড়িতে ল্যান্ড ফোন আছে। কত বার বলেছে, তোমার যতক্ষণ খুশি ওখান থেকে কথা বলো। কিন্তু শুনলে তো! ল্যান্ড ফোন নিয়ে তো আর ঘরে পায়চারি করতে করতে কথা বলা যায় না। কিংবা কেউ ঘরে ঢুকলে, তাদের মা-মেয়ের কথা যাতে সে শুনতে না পারে, সে জন্য তার সামনেই তো আর ঝট করে ঝুলবারান্দায় কিংবা ছাদে চলে যাওয়া যায় না, তাই ওই মোবাইল।

নাঃ, এ বার একটা কর্ডলেস ফোন না কিনলেই নয়, কত বার ও এ কথা ভেবেছে, আর ওকে মোবাইল নিয়ে কথা বলতে দেখলেই সেটা আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ঠিক করেছে, কালকেই সামশেরকে বলবে একটা ভাল দেখে কর্ডলেস ফোন নিয়ে আসতে। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরোলেই যে ওর কী হয়! কিছুই মনে থাকে না। তাই এতদিন হয়ে গেল, অথচ আজও একটা কর্ডলেস ফোন কেনা হয়ে উঠল না ওর।

সে না হোক, ও তো এখন আর বাড়িতে নেই যে কর্ডলেসে কথা বলতে হবে। ও যদি এসে থাকে, স্টেশনেই আছে। মোবাইল ছাড়া কথা বলা যাবে না। আর ওর কাছে তো মোবাইল আছেই। এ হেঃ, এতক্ষণ এ কথাটা মনেই পড়েনি তার। তানিয়াকে একটা ফোন করলেই তো হয়!

ও জানালার দিকে ঝুঁকে পকেটে হাত ঢোকানোর আগেই গাড়ি চালাতে চালাতেই রণো বলল, এই যে সামনে এটা দেখছেন, এটা হচ্ছে ইংরেজদের কবরখানা। আঠারোশো সাতাশি সালে তৈরি হয়েছিল। এখানে শুধু ইংরেজদেরই কবর দেওয়া হতো। স্মৃতিফলকে এমন এমন লোকের নাম রয়েছে, দেখলে চমকে যাবেন।

— এখানে? বলেই, সামনের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই চমকে উঠল দেবমাল্য। দেখল, একটা সাইকেল রিকশায় সামশের বসে আছে। সাইকেল রিকশাটা বাঁ দিক থেকে এসে তাদের গাড়ির সামনে দিয়ে সাঁ করে ডান দিকে চলে গেল।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।