সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৯১)

একানব্বই

আমার আগে শ্রেয়ান ধাঁধা গুলো সমাধান করে ফেললেও আমাকে দিয়েও ধাঁধাগুলো সমাধান করানোর দরকার ছিল। ওদের ধারণা আসল ধাঁধা গুলোর সঙ্গে ছোট বড় অন্য সব ধাঁধার যোগসূত্র থাকতে পারে। ছোট ধাঁধার মধ্যেও কোনো ক্লু লুকোনো থাকতে পারে।সেক্ষেত্রে আমি যদি খাপ ছাড়া ভাবে কোনো ধাঁধা সমাধান করি আর কোনোটা না করি, তাহলে সামগ্রিক ভাবে কোন লাভ নাও হতে পারে। ধাঁধাগুলো লজিক্যাল ইন্টারল্লিঙ্কড থাকলে কোথাও না কোথাও গিয়ে আটকে যাবে। তাই ওরা যেগুলো সমাধান করেই ফেলেছে সেগুলো আমাকে দিয়ে সমাধানের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তাই ওরা ডঃ চোঙদারের ডায়েরির হদিশ পেয়েও সেটা যথা স্থানে রেখে দিয়েছিলো যে ট্যাক্সিতে আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল তার সিটের পেছনে লেখা নাম্বার বা ঘটি গরমওয়ালার চিরকুট, খুব প্ল্যান মাফিক আমার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। লুলিয়া যে পরমহংস ধাঁধাটার সমাধানের সময় হেল্প করেছিল তার কারণ সম্ভবত আমার প্রতি ওর দুর্বলতা। এখন আমার কাছে সব ঘটনা প্রবাহের অর্থ অনেকটা পরিষ্কার হয়েছে। আমার অপহরণের ব্যাপারে ও কিছু জানেনা। কারণ ও এই ঘটনা চক্রে জড়িয়েছে আরও কিছুদিনের পর লুলিয়াকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম বাল্মীকির সঙ্গে ওদের কোনো যোগ ছিল কিনা। লুলিয়া জানালো যে ও যতদূর জানে বাল্মীকি গোকুলের সঙ্গে যুক্ত নয়। শ্রেয়ান কোথায় আছে জিজ্ঞাসা করাতে বললো যে শ্রেয়ান অপহরণের নাটক ঘটে যাওয়ার পর ওর সম্মন্ধে আর কিছু জানেনা। গোকুল কুন্ডুর কথা ও কোথায় শুনলো জিজ্ঞাসা করাতে বললো ও তখন গোকুল কুন্ডুর কাছেই ছিল. গোকুল ল্যান্ড লাইনের রিসিভার নাকি ধরেনা। সব সময় স্পিকারে কথা বলে। তাই স্পিকারের আওয়াজে শুনতে পেয়েছিলো। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম ও গোকুলকে প্রশ্ন করেনি কেন?ও বললো গোকুল কুন্ডুর কাছে কারো কোনো প্রশ্ন করার অধিকার নেই। শ্রেয়নের সম্মন্ধে শেষ প্রশ্নটা করলাম। শ্রেয়ান গোকুলের এজেন্ট কিনা। লুলিয়া বললো শ্রেয়ান গোকুলের এজেন্ট নয়। তবে এই কান্ট্রাক্টটের নাটের গুরু তার খুব কাছের লোক।
খানিক্ষন চুপ করে থেকে আমি লুলিয়ার পাশে খাটে বসলাম। ইচ্ছাকৃত মোবাইল থেকে লুলিয়ার সামনেই আর্জমাকে ফোন করলাম।আর্যমা ফোন ধরলো বটে কিন্তু ওর কথা বোঝা গেলো না। লাইনে ঘ্যার ঘ্যার শব্দ হচ্ছে। আমার সন্দেহ হচ্ছে লুলিয়ার শরীরে কোনো ট্রান্সমিটার, বা কোনো ইলেকট্রিক ডিভাইস বা কোনো হিডেন ক্যামেরা আছে। আমি আর্যমাকে পুনিতের কথা জিজ্ঞাসা করতে বললো পুনিত ভালো আছে। ফোন টা কেটে আমি লুলিয়াকে বললাম, “খুব সম্ভবত তোমার শরীরে কোনো ট্রান্সমিটার বা ইলেকট্রিক ডিভাইস লোকানো আছে “। নিজের শরীর টা খুঁটিয়ে দেখে লুলিয়া জিন্স এর বোতামে একটা ছোট্ট ক্যামেরা পেলো।ক্যামেরাটা বোতমের মধ্যেই ইনবিল্ট করা ছিল।লুলিয়া খুব অবাক হয়ে বললো,আরে!এই প্যান্টটা তো আমার নয়। আমি এতক্ষন খেয়াল করিনি। বোধহয় আমি যখন অজ্ঞান হয়েছিলাম
তখন আমার প্যান্টটা খুলে এই বিশেষ প্যান্টটা পড়ানো হয়েছিল। আমি প্যান্টএর বোতামটা ছিঁড়ে ডেসট্রয় করে দিলাম। আবার আর্জমাকে ফোন করে হিডেন ক্যামেরার কথা বললাম। আর্যমার সাথে কথা বলে ঠিক করলাম যে লুলিয়াকে পুলিশ হেফাজতে রাখতে হবে। লুলিয়া আপত্তি করলো। আমার হাত ধরে অনুনয় বিনয় করে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলো। আমি আর্যমাকে ফোন করে তারাতারি ফোর্স পাঠাতে বললাম। লুলিয়াকে বোঝালাম ওর বাইরে যেকোনোসময় প্রানহানির আশঙ্কা আছে। তাই পুলিশ হেফাজত ওর পক্ষে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। হঠাৎ মেইন দরজায় কলিংবেল বেজে উঠলো। উঠে গিয়ে কিহলে চোখ রাখলাম। কিন্তু কিছু দেখা গেলো না। মানে কেউ হোলটা আঙ্গুল দিয়ে চেপে রেখেছে। বুঝলাম কেউ অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের বিপদে ফেলার জন্য এসেছে। আবার কলিংবেল বাজলো। আমি দরজা খুললাম না। এবার কলিঙবেল ঘন ঘন বাজতে লাগলো। বুঝলাম আমাদের দরজার বাইরে কোনো বিপদ এসে দাঁড়িয়েছে। এবার কলিংবেল বাজাবার বদলে দরজায় ধাক্কা মারতে লাগলো। হঠাৎ ঝণাৎ করে আওয়াজ হলো। জালনার কাচটা ভেঙে গেলো। কেউ ঢিল ছুড়ে ওটা ভেঙে দিলো। জালনার ধার দিয়ে রাস্তাটা দেখার চেষ্টা করতেই খটাং করে একটা ঢিল এসে পড়লো আবার। দরজার ধাক্কা ক্রমশ বাড়তে লাগলো। দরজা একটু একটু করে নড়তে শুরু করেছে। আমি ভয় পেয়ে আর্যমাকে ফোন করে এখানকার অবস্থা বললাম। ও বললো যে ফোর্স বেরিয়ে গেছে। আমি দৌড়ে বেডরুমে ঢুকে দরজা ব্ন্ধ করে দিলাম। দেখি ভয়ে লুলিয়ার মুখ শুকিয়ে গেছে। লুলিয়াকে সান্তনা দিলাম, ভয় পেয়োনা আর্যমা পুলিশ ফোর্স পাঠিয়ে দিয়েছে। চোলে আসবে শিগগির “। হঠাৎ দরজায় ধাক্কা মারার শব্দ থেমে গেলো। আমি ভাবলাম তাহলে কি ওরা দরজা ভেঙে ফেললো? হঠাৎ পুলিশ এর ভ্যানের সাইরেনের আওয়াজ পেলাম। আমি স্বস্তির নিঃস্বাশ ফেললাম।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।