• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৪)

সুমনা ও জাদু পালক 

সুমনা জানে , এই গা গুলানো বা মাথার ভেতরটা কেমন করা , এগুলো আসলে অনেকক্ষণ পেট ভরে না খেতে পাওয়ার জন্য ।কিছু খেতে পেলেই এটা কমে যাবে। কিন্তু খাবেটা কী? গতকাল বিকেলে বাড়ির পিছনের বাগানটায় খুব ঘোরাঘুরি করেছে, যদি কিছু পাওয়া যায় এই আশায়। পাওয়া যায় মানে, গাছের ফল টল ,এই আর কি। কিন্তু সে গুড়ে বালি। তিন-তিনটে পেয়ারা গাছের একটাতেও খাবার উপযুক্ত পেয়ারা একটাও নেই। পেয়ারা যে নেই তা নয়,আছে, কিন্তু খুব ছোট। আসলে রাতপাখিগুলোর জ্বালায় পেয়ারাগুলো বড় হতে পারেনা। প্রায় দিনই সকালে সুমনা গাছগুলোর গোড়াতে আধখাওয়া পেয়ারা দেখতে পায়। কালে কস্মিনে গাছে চেপে দু-একটা ডাঁসা পেয়ারা যে পাওয়া যায়না এমনটা নয় । অথচ গতকাল বিকেলে তিন তিনটা গাছে আতিপাতি করে খুঁজে একটাও পেয়ারা পায়নি সুমনা। নিরুপায় হয়ে একটা ছোট পেয়ারা গাছ থেকে ছিঁড়ে দু কামড় দিতেই ‘থুঃ থুঃ’ করে ফেলে দিয়েছে সুমনা । ছিঃ!কী কষটে!
বাগানে চার-পাঁচটা পেঁপে গাছ আছে।ফল নেই কোনটায়। থাকার কথাও নয়। মাঝেমাঝেই সবজির প্রয়োজনে গাছ থেকে পাড়া হয় পেঁপে। শুধু ওই গাছটা হতাশ করেনি। যেটায় পেঁপে পাড়তে গেলেই মা বলে,’ এই গাছটা তোর বাবার নিজের হাতে লাগানো’। গাছটার মূল মাথাটা কবেই ভেঙ্গে গেছে ঝড়ে। এখন চার চারটা ফ্যাকড়া আছে বিভিন্ন উচ্চতার। তার মধ্যে একটার ডগার দিকে একটা পেঁপে কেমন করে যেন রয়ে গেছিল। রঙ ধরেছিল ফলটায়। সুমনা অনেক চেষ্টা করে একটা বাঁশের বাতা দিয়ে খুঁচিয়ে পেড়েছিল সেটা। ফলটা কাটতেই দেখেছিল, ভিতরটা বেশ পেকেছে। অনেক অনুরোধ করার পরে এক টুকরো খেয়েছিল মা। বাকি সবটাই সামান্য নুন দিয়ে খেয়েছিল সুমনা।
তারপর থেকে তো আর দাঁতে কিছু কাটা হয়নি।
আচ্ছা, পুটু পিসি যে বলল, বাদল ঠাকুর ডেকে পাঠিয়েছে তাকে। কিন্তু কেন? অসুস্থ মাকে একা ঘরে রেখে যেতে মন চাইছে না তার, তবু যেতে হবে। বাদল ঠাকুর যদি কিছু ভোগের প্রসাদ দেয় তো বেশ হয়। মাকে একটু দেবে, বাকিটা নিজে খাবে। আর যদি একটু বেশি দেয় তো………।
ধ্যাত্তেরি, আবার খাবার কথা ভাবছে সুমনা ।সেই কখন থেকে চেষ্টা করছে ও অন্য কিছু ভাবতে, কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই খাওয়া-দাওয়ার কথাই মাথায় আসছে।
বাদল ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে গেলে একবার সেই জায়গাটায় গেলে কেমন হয়। বেশি দেরি করবে না । একবার ওদের সঙ্গে দেখা করেই চলে আসবে। কিন্তু আজকে ওদের জন্য কি নিয়ে যাবে সুমনা? আজ তো কিছুই নেই ঘরে।
আয়না নদীর পাড়ে ওই জায়গাটা সুমনার খুব প্রিয়। নদীর নামটাই শুধু আয়না নয়, ওর জলটাও আয়নার মতো স্বচ্ছ। এতটাই স্বচ্ছ সেই জল যে, নদীর পাড়ে বসে একটু নজর করলেই জলের নিচে ছোট ছোট মাছ, গুগলি,শামুক,কালচে সবুজ শ্যাওলার ঝোপ,জল ঝাঁজি সব সব স্পষ্ট দেখা যায়। নদীটা ছোট হলেও বারোমাস জল থাকে নদীতে। ওই নদীর পাড়ে পেল্লাই একটা বটগাছ আছে। গাছটার কত যে বয়স তা তাঁতীপাড়ার ভোলাদাদুও বলতে পারেনা। ভোলা দাদু এই গাঁয়ের সবচেয়ে বুড়ো মানুষ। একশ বছরের বেশি নাকি বয়স।
ওই বটগাছের গোড়ায় একটা পুরনো শিব মন্দির আছে। মন্দিরের দেওয়ালগুলো কবেই মাটিতে পড়ে যেত যদি না বট গাছের ঝুরিগুলো মন্দিরটাকে চারধার থেকে আগলে রাখত। কালচে সবুজ পুরু শ্যাওলার আস্তরণে ঢাকা পড়েছে মন্দিরের দেওয়াল। পলেস্তরা খসা দেওয়ালের গায়ে এখানে-ওখানে আগাছার ঝোপ। মন্দিরের বিগ্রহ শিবলিঙ্গের শরীরেও ধুলোর আস্তরণ। মন্দিরের দরজার সামনে বট গাছের ঝুরি গুলো এমন ভাবে নেমে এসেছে যে মনে হয়, ওটা একটা গুহায় ঢোকার রাস্তা ।
সারাদিন বটগাছটার ডালে ডালে ঘুরে বেড়ায় অসংখ্য রংবেরঙের পাখি। আর ওদের দেখতেই সুমনা নদীর পাড়ে বটগাছটার নিচে বসে থাকে।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।