ছোটদের জন্যে বড়দের লেখায় A.F.M Shebgatulla (পর্ব – ৬)

পর্তুগিজ জাহাজ ঘাঁটি আবিষ্কার পর্ব – ৬

সাবির সুবীরের স্কুলের বন্ধুরা , মাষ্টারমশাই, প্রতিবেশীরা বেশ খুশি। ওরা এই বয়েসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ধারকারী টিমের সদস্য হওয়াতে। তো পূর্ব পরিকল্পনা মত সাবির সুবীর, দিব্যেন্দু কাকা, টিংকু মামা, আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সাবির সুবীরের দেখানো পথে এগোত থাকে বিদ্যাধরীর কিনারে।
দিব্যেন্দু কাকা স্থানীয় ইতিহাসের এক্সপার্ট। তিনি খাল পাড়ে এসে বলে দিলেন এটাই সেই বিদ্যাধরী নদী। উনিও বহু আগে পর্তুগিজদের বসতি খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কিছুই খুঁজে পাননি। সাবির সুবীরের আবিষ্কার করা বাড়ি যে পর্তুগিজ বসতি সেটাও খুব স্পষ্ট নয়। তবে খটকা লেগেছে এক জায়গায় ওরা যে কাঠটা নিয়ে এসেছিল সেই কাঠ একেবারেই সবারই অপরিচিত । উদ্ধারকারী দলটির মনে হয়েছিল ওই কাঠটা হল এক আশ্চর্য প্রতীক।
এমন সময় শামুকপোতা গ্রামের কাছাকাছি চলে এলো। চলে এলো তাড়দা গ্রাম । এখন সাবির সুবীর হয়েগেলো এক্সপার্ট!বাজার ঘাট ,লোকালয় পেরিয়ে ওরা দলের বাকি সদস্যদের নিয়ে গেলো সেই নির্জন শশ্মানের দিকে। এখন এই দিকটায় প্রায় কেউ নেই। ওরা গেলো সেই বেড়া ঘেরা জায়গাটার কাছে। বেড়া পেরোতে যাবে এমন সময় বাঁধা দিলেন সেই কাপালিক বাবা। এই বেড়া করো পেরোনোর নিয়ম নেই। বিচ্ছু দুটো পিছনের দিকে ছিল। কথা কাটাকাটি তর্ক চলল । কাপালিকবাবা জানালেন গ্রামের লোকজন কে জড়ো করবেন। এই বট গাছ তলায় কারো যাবার নিয়ম নেই।
এদিকে গ্রামের লোকজন এসে উপস্থিত। গ্রামের মানুষের দীর্ঘ দিনের বিশ্বাস এই শশ্মানের ভিতর যেতে নেই আর বট গাছতলা তো নিষিদ্ধ জায়গা। সেখানে এই কাপালিক বাবা আর ওর সম্প্রদায়ের কাপালিক বাবা ছাড়া অন্য কেউ যেতেই পারেন না।তবে গ্রামের কিছু মানুষ সম্মত হয়েছিলেন। কারণ উদ্ধারকারী দল এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। উদ্ধারকারী দল নিজেদের পরিচয় দিলেন । এই ঝামেলায় উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য সোনারপুর থানায় খবর দিয়েছিলেন।যদিও থানাকে আগেই জানানো ছিল। সোনারপুর থানা থেকে পুলিশ বাহিনী এসে উপস্থিত। সর্বসম্মত ভাবে উদ্ধার কাজ এগোতে থাকে। পুলিশি পাহারায় গ্রামের মানুষজনকে আসতে দেওয়া হয়নি। কাপালিক বাবা নিজেও অবাক এখানে এমন কিছু আছে জেনে!
সাবির সুবীর এই দুই বিচ্ছু বাকি সদস্য দের কে বিধ্যাধরীর সেই ঝোপের কাছে নিয়ে গেলো। দেখাল সেই ক্ষয়ে যওয়া ইটের দেওয়াল, আর সেই দরজা মতন জায়গাটা যেখানে থেকে ওরা ওই ঘরের মধ্যে পড়ে গেছিলো । এখন সাবির সুবীর বাকি সদস্যদের মত টর্চ, বিশেষ পোশাক, অক্সিজেন সিলিন্ডার আরো প্রয়োনীয় জিনিস পত্র নিয়ে সেই অন্ধকার হল ঘরে প্রবেশ করলো। টর্চের আলোয় ঘরটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। হল ঘরের চার পাশের ঘর গুলো বেশ স্পষ্ট। তবে এখানকার যে সিন্দুকটা সাবির সুবীর দেখেছিল। সেটা ধরা ধরি করে অন্যান্যরা বের করে নিয়েছে। ওটা থানায় নিয়ে যাওয়া হবে।
হল ঘরটার মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে সাবির চিৎকার করে বলে উঠতে থাকে ‘ ওই দেখুন সিঁড়ি’ সবাই সেই দিকে তাকিয়ে দেখল সত্যিইতো। এই নিচের দিকে আরো অন্ধকারের দিকে নেমে গেছে যেখানে সূর্যের আলো শতাব্দীর পর শতাব্দী পৌঁছয়নি।
এদিকে টিভিতে ব্রেকিং নিউজ চলছে ‘ মজে যাওয়া খালপাড় থেকে সিন্দুক উদ্ধার ‘
আসে পাশের পাড়ার লোকজন যেন বেড়ার বাইরে জনসভার মত করে দাঁড়িয়ে আছে। সাবির সুবীরের গ্রাম খুব একটা দূরে নয়। ওদের এলাকা থেকে ওদের পরিচিত মানুষ জন বন্ধু বান্ধবরা কেউ সাইকেলে কেউ মোটর সাইকেলে এসে বেড়ার বাইরে এসে উপস্থিত। ওদের বাড়ির লোকজনও টিভির সামনে দাড়িয়ে খবর দেখছে অধীর আগ্রহে!
এদিকে অন্ধকারময় ওই সিড়ি বরাবর ওরা আরো নিচের দিকে নামছে। বেশ গা ছমছমে পরিবেশ। পুরনো আমলের বাড়ি তাই সিড়ি গুলো বেশ চওড়া। বাড়িটার গা বরাবর প্লাস্টার খসে পড়েছে আর খসে পড়ে আছে প্রায় ক এক শতাব্দী জুড়েই তা হয়েছে। এমন সময় স্থানীয় ইতিহাসের লেখক দিব্যেন্দুকাকা বলে উঠলো এই বাড়িটা দেখলেই মনে হচ্ছে ইউরোপীয় ঘরানার বাড়ি। উপর থেকে ওরা প্রথমে যে তলায় নামলো মেঝেটা উপর ধুলোর আস্তরণ অনেক পুরু। এমন সময় সাবির চিৎকার করে বলে উঠলো দেখুন সিঁড়িটা আরো নিচে নেমে গেছে। না জানি আরো কত তলা নিচেতে এভাবে আছে ভূপৃষ্ঠ থেকে নিচে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে। সাথে এই দমবন্ধ করা পরিবেশ। এই ভাবেই শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে!

চলবে…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।