T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় উজ্জ্বল দাস
by
·
Published
· Updated
মিশেছি রবীন্দ্রে
“আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে”
এই ছোট নদীটা, কতটা ছোট সেটা ভাবা শুরু সেই কোন ছোট বেলায়। এর সন্ধান যখন পেলাম তখন সম্পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক।
আমার প্রথম শান্তিনিকেতনে যাবার যখন সুযোগ এলো তখন বুঝতে পেরে ছিলাম আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা জড়িয়ে আছে এই রবিঠাকুর। চাক্ষুস করে এসেছিলাম খোয়াই, সোনাঝুরি সঙ্গে এঁকে বেঁকে বয়ে চলা সুন্দরী কোপাই নদী। বিশ্বভারতীর প্রতিটা কোণ যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছে সেদিন আমার চোখ। গুরুদেবের ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে যে বাসা পরিবর্তন আর সেই বাসস্থানের সৌন্দর্য্য যে এভাবে আমাকে বিমোহিত করবে তা ওই বয়সে কল্পনাতীত বলেই মনে হয়েছিল।
বলতে দ্বিধা নেই, জীবনে একটা একটা পা যত হেঁটেছি ততই ওতপ্রাত ভাবে ক্রমশ নিজেকে আরো জড়িয়ে ফেলেছি, যেন ওনার সৃষ্টির সঙ্গে নিজের জীবন দর্শন করেছি প্রতি মুহূর্তে। দুঃখে পেয়েছি, আনন্দে পেয়েছি, কল্পনায় পেয়েছি। পেয়েছি গ্রীষ্ম, বর্ষা কিংবা শরতের নীলাকাশে।
জীবনের একটা বড় অংশ আশ্রমে কাটিয়েছি। কোনো এক রবীন্দ্রজয়ন্তীতে যখন প্রথম আমার স্টেজে ওঠা, তখন হৃদয়ে প্রবেশ করেছিলো সেই সুরের মূর্ছনা। এখনও বেশ মনে পড়ে “বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো”। কতটা পেরেছিলাম গাইতে সে বিষয়ে নাই বা কিছু বললাম। কিন্তু তার রেশ আজও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তারপর জীবনের প্রতি মুহূর্তে অনুভবে, প্রেমে অপ্রেমে নির্দ্বিধায় জীবনের সবকটা পংক্তিতে, সবকটা পর্যায়ে যেন মিশিয়ে ফেলেছি রবীন্দ্রনাথ।
ক্রমশ নিজেকে যখন বিলীন করে দিয়েছিলাম তার একের পর এক সৃষ্টি সাগরে তখন অনুভূত হয় যে এই মহাসাগরে যতই ডুব দেবো ততই মনিমানিক্য খুঁজে পাবো। ধীর পায়ে হেঁটে চলেছি কখনো নাটক, কখনো সংগীত কখনো বা উপন্যাসে ভর করে করে। শুধুই সঞ্চয় করেছি, সমৃদ্ধ হয়েছি বলাই বাহুল্য।
আর এখন, যখন তাকে নিয়ে লিখতে বসেছি শুধুই মনে হচ্ছে সকল দ্বীপের প্রদীপ জ্বেলে করব নিবেদন। কিন্তু পুজার থালা কিছুতেই ভরে তুলতে পারছি না। এহেন ঠাকুরের পুজোর থালা কি কখন ভরে তোলা সম্ভব! এই ভুল কখনো করার চেষ্টা করব না। তবে পুজো হোক নিয়ম মেনেই গঙ্গা জলে হোক গঙ্গা পূজা।
বয়স ক্রমশ বেড়েছে, পড়ে ফেলেছি একটা একটা উপন্যাস, কবিতা। শুনেছি তার অফুরন্ত ভান্ডারের সুর। গেয়ে উঠেছি গান। যতবার প্রেমে পড়েছি কিংবা যতবার মন ভেঙেছে ততবার আশ্রয় নিয়েছে এই রবি ঠাকুরের। ততবার মনে হয়েছে ভাঙা-গড়ার সব খেলাতেই লুকিয়ে থাকে এই রবির কিরণ। এ বুঝি আমার একার কথা নয় সমগ্র বিশ্বে পূজিত এই ঠাকুর সকলের মনের কথাই বটে।
বেশ মনে পড়ে উপন্যাসটির নাম “শিক্ষা” তাতে এক লাইন পড়েছিলাম
“জামা কিনতে গিয়ে পাইয়াছি একপাটি মজা, এখন ভাবিতেছি কোন রকমেই ওইটিকেই কাটিয়া ছাটিয়া জামা করিয়া পরিব”।
এই এক লাইনে যেন সমগ্র জীবন দর্শন করে ফেলা যায়। আমাদের শিক্ষা স্তর, তার ব্যাপ্তি কতটুকুই বা! কতটুকুই বা নিতে পেরেছি আমরা। দেওয়া তো দূরে অস্ত। শিক্ষা বিতরণের নামে শুধুই সেজেছে ব্যবসার পসরা। সেই শিক্ষা বিতরণ একটা আস্ত জামার বদলে সোল খুলে যাওয়া এক পাটি জুতোর হাফজোড়া মোজাই বটে।