|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় লুৎফুন নাহার লোপা
by
·
Published
· Updated
লোকটি
আমি বার বার এই ভাবনা থেকে সরে আসতে চাইলেও কিছুতেই ভাবনা থেকে বের হতে পারছি না। বিকেল হলেই লোকটা অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠিক আমার অফিস ছুটির সময়।লোকটার বয়স আন্দাজ করতে পারলাম না। তবে এই বয়সে সে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেবে না সেটা স্পষ্ট বোঝা গেল। তার চোখ দেখলে মনে হয় কিছু একটা বলতে চায়, কিন্তু কিছু বলে না কিংবা আমিই হয়ত বলার সুযোগ দিচ্ছি না।
পরদিন অফিসে এলাম-
অফিসের দারোয়ান কে বললাম – লোকটা কি চায় একটু শুনে এসো। দারোয়ান লোকটির কাছ থেকে ফিরে এসে বলল, আপনার সাথে কথা বলতে চায় ম্যাডাম। আমি বললাম ঠিকাছে দাড়াতে বলো। তারপর কাজের চাপে ভুলে গেলাম।
পরদিন আবার অফিসে এলাম এবং যথারীতি ফেরার সময় মনে পরলো লোকটির কথা। দারোয়ান কে বললাম লোকটাকে ডেকে নিয়ে এসো। কিন্তু সে বলল, আজ সে আসে নাই ম্যাডাম। আমার আফসোস হতে লাগলো, আহা না জানি কতক্ষন অপেক্ষা করেছিল সে। কিছুক্ষণ পর বেশ দাড়িওয়ালা হুজুর করে একটা লোক আসলো অফিসে। বলল, ম্যাডাম একটু কথা ছিল
আমি বললাম, কি কথা?
– আপনার ভাই ইন্তেকাল করেছে।
– কোন ভাই?
আপনি হয়তো জানেন কিনা জানিনা। আপনার বাবা আগে যে বিয়ে করেছিল সেই ঘরে একটি ছেলে ছিল। তার দুটো কিডনিই ড্যামেজ হয়ে গিয়েছিল। তার শেষ ইচ্ছে ছিল আপনাকে এক নজর দেখা। তাই দূর থেকেই দেখে চলে গেছে। আপনার মানসম্মানের কোন ক্ষতি সে চায়নি। যদি আপনার বাবা দেখতে চায় তাহলে তাকে বলবেন। ইশার নামাজের পর মাটি হবে ।
লোকটা চলে গেল। আমি তাকে কিছুই বলতে পারলাম না। মা আমাকে এসব কিছুই বলেনি। মনের ভেতর প্রচন্ড আঘাত পেলাম। মনে হলো পৃথিবীতে এমনও ঘটনা ঘটে নাকি। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। কান্না সংবরন করলাম দ্রুত যাতে কলিগরা কেও টের না পায়। কিন্তু মনের ভেতর ঝড় বয়ে গেল। অদ্ভুত এক ভাতৃত্ববোধ জাগ্রত হলো। মনে হলো কোন এক বিশাল পাহাড় আমার বুকের ভেতর আটকে গেছে। বাসায় এসে রুম আটকে ভাই ভাই বলে কাদলাম অনেক্ষন।
বেশ কয়েকদিন ঘুমাতে পারলাম না। সময়ের সাথে সাথে নাকি কষ্ট মুছে যায়। আমারও তাই হলো। জীবন জীবনের মত আলো এবং অন্ধকার বুকে নিয়ে এগিয়ে চললো।