গৌরী দেবী সজল চোখে একটার পর একটা ঘটনা বলে চলেছেন আর চন্দ্রা নিশ্চুপে সেসব কথা শুনে যাচ্ছে তার দুচোখ দিয়ে জলের ধারা গড়িয়ে পড়ছে।
শুদ্ধ বন্ধ দরজার বাইরে পায়চারি করছে আর ভাবছে চন্দ্রার কি এমন কথা মার সাথে, যা ঘরের দরজা বন্ধ করে বলতে হচ্ছে ।সে তো মাকে চেনে না কোনোদিন দেখেওনি, তাহলে? কি এমন দরকারি কথা আলোচনা করছে আর মার সাথেই বা কেন?
ঘন্টাখানিক পর বন্ধ দরজা খুলে মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলো চন্দ্রা,পেছনে মার হাসিমুখ দেখে শুদ্ধ কিছুই আন্দাজ করতে পারল না তবে, এটুকু বুঝল খুব খুশি হয়েছেন তিনি।
চন্দ্রা বুদ্ধর সামনে এসে খুব শান্ত গলায় বলল, তোমার সাথে কথা আছে ভেতরে এসো।
চন্দ্রার কথা শুনে শুদ্ধ ছিটকে উঠে দাঁড়াল চেয়ার থেকে।
না , তুমি যা বলছ তা কিছুতেই সম্ভব নয়। আমি জেনেশুনে কোনমতেই তোমার জীবনটা নষ্ট করে দিতে পারি না। আমি যদি আগে বুঝতাম তুমি এভাবে আমার অতীত জানতে আসবে মার কাছে তাহলে আমি কিছুতেই তোমাকে আমার বাড়ি নিয়ে আসতাম না ।আমি সরল মনে বিশ্বাস করেছিলাম তুমি মার সাথে এমনি দেখা করতে চাও আলাপ করতে চাও কিন্তু তুমি যেটা করলে তা আমি মেনে নিতে পারছিনা চন্দ্রা।
প্লিজ তুমি চলে যাও, আমি এখন একা থাকতে চাই, প্লিজ।
চন্দ্রা মাথা উঁচু করে শুদ্ধর সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল, শোনো শুদ্ধ, তোমার অতীতে যা ঘটেছে তা নিয়ে আমার বলার কিছু নেই, তবে সব মেয়েকে তুমি এক লাইনে দাঁড় করাতে পারো না। আমি শরীর নয় মনে বিশ্বাসী। আর হ্যাঁ, বাকি থাকল তোমার অসুস্থতা তার জন্য আমরা নামকরা ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করতে পারি।
শুদ্ধ আমার একটা কথার উত্তর দাও একটু ভেবে বল প্লিজ,
কোন বিবাহিত পুরুষ যদি কোনো কারণবশত যৌনতা করতে অক্ষম হয় তাহলে তার স্ত্রী কি তাকে ছেড়ে চলে যাবে নাকি সেই পুরুষটি সংসার ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবে?
আবার উল্টো দিক থেকে একবার ভেবে দেখো বিয়ের পর আমার যদি যৌন ক্ষমতা আমি হারিয়ে ফেলি তাহলে কি তুমি আমাকে ত্যাগ করবে ? নাকি আমি আত্মহত্যা করব বা বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাব?
আমিও মানি দুটো ভালোবাসার সম্পর্কের মধ্যে শরীর শেষ কথা বলে, কিন্তু দুটো শরীরের মধ্যে ভালোবাসা ছাড়া সম্পর্ক তৈরি হলে তাকে আর যাই হোক স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের নাম দেওয়া যাবে না।
আমি তোমার থেকে বিবাহিত জীবনে ভালোবাসা, নির্ভরতা ,বিশ্বাস আর সম্মান চাই ।আর বাকি থাকল শরীর, তার জন্য কাল থেকেই আমরা দেশে বা দেশের বাইরে বড় ডাক্তার দের সাথে যোগাযোগ শুরু করে দেবো । আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই শুদ্ধ। আমাকে ফিরিয়ে দিওনা একটা সামান্য শরীরের অজুহাত দেখিয়ে।
চন্দ্রার একটানা বলে যাওয়া কথাগুলো শুনতে শুনতে শুদ্ধ সোফার ওপরে বসে দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ল, আর চান্দ্রা দুই হাতে তাকে ভালোবেসে জড়িয়ে আঁকড়ে ধরল।