কচি কচি আঙ্গুল গুলো দ্রুত জামবাটির মাড় জল ছেঁকে যে কটা অবশিষ্ট ভাতের দানা পেল গোগ্রাসে মুখে পুরে দিল রাধিকার বছর পাঁচেকের ছেলে, শ্রাবণ।। জামবাটি ঘিরে দুটো পেট। কিন্তু যে পরিমান ভাত, তাতে একজনেরই ভরে না ঠিক মতো।
ফাগুন, ছেলেটার চেয়ে বছর তিনেকের বড়। এই বয়সেই, পেটে খিদে লুকিয়ে রাখতে শিখেছে। ভাইটা অবুঝ। তাকেই ভাতগুলো খাবার সুযোগ করে দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে নুন মেশানো মাড়জলটাতে চুমুক দেবার জন্য।
— এ মাঈ, তোর বাবুঘরে বলবি ন যাথে একমুঠা বেশি ভাত দেয়।
ফাগুনের কথায় রাধিকার ভেতরটা ঝিঁকিয়ে ওঠে। যা দেয় সেটাই ঢের। গিন্নীমায়ের হাত দিয়ে জল গলে না, তার আবার আরেক মুঠো ভাত। বাসামবেলায় নিজের পেট দাবড়ি দিয়ে বাবুঘরের দেওয়া বাসিভাত ক’টা ছেলে মেয়ের জন্যই এনে দেয়। অল্প ক’টা ভাতে তাদের মতো গরীবের কী খিদে মেটে? পেট তো নয়, যেন চণ্ডাল।
এদিকে লক ডাউনের চোটে মাধাইয়ের কামকাজ সব গেছে। ঢনঢন করে ঘুরে বেড়ায় এক মান্ডি থেকে আরেক মান্ডি। মোট বইবার কাজও ঠিকমত কোথাও জোটে না ।
— রেশনের চাল পাছি তাই ভাত আর নুন’টা জুটছে। আলু কিনতে পয়সা কুথায় পাব। পঁয়ত্রিশ টাকা দর যাছে।
উনান জ্বালানোর জন্য জোগাড় করা ডালপালা গুলো মটমট করে ভাঙতে থাকে রাধিকা। মেয়ের আবদারের আলুভর্তা করতে না পারার রাগ যে কতটা ভয়ংকর, শুকনো ডাল-পালা গুলো বোধহয় টের পাচ্ছে।।