“নারী-দি-বস” উদযাপনে যশোবন্ত বসু
যশোধরা
জরা,ব্যাধি,মৃত্যুশোক জয় করার জন্য মুক্তিপথের সন্ধান করবেন বলে রাজকীয় ঐশ্বর্য,বিলাস-বৈভব ছেড়ে যাচ্ছেন রাজকুমার সিদ্ধার্থ।
রাত্রির গভীর নিশুতিতে একবস্ত্রে রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
প্রাসাদের দুগ্ধফেননিভ সুখশয্যায় ঘুমন্ত তাঁর উদ্ভিন্নযৌবনা অপরূপা রূপসী স্ত্রী যশোধরা এবং একটি ফুটফুটে শিশুসন্তান। স্ত্রী-পুত্রের দিকে একবার ফিরেও তাকাচ্ছেন না। তাঁর সেই শিশুপুত্রটির বয়স তখন সবে সাত দিন। সিদ্ধার্থ উনত্রিশ বছরের যুবক।
এরপর শুরু হবে তাঁর কঠোর ত্যাগ-তিতিক্ষা, তপস্যা ও কৃচ্ছ্রসাধনের যাপন।
আর যশোধরা ? সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন দেখলেন, প্রিয়তম স্বামী গৃহত্যাগ করেছেন, যুবতী স্ত্রীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। তুমুল তছনছ হয়ে গেল মনের উঠোন। কিন্তু তিনি আছাড়িপিছাড়ি কাঁদলেন না, কোনও অভিযোগ করলেন না। অদ্ভুত শান্ত ভঙ্গিমায় স্তব্ধ অচল হয়ে রইলেন বেশ খানিকক্ষণ।
কেবল মনে হতে লাগল জীবনের সব রং, সব ব্যঞ্জনা শেষ হয়ে গেছে। চারিদিকে গাঢ় শূন্যতা।
তাঁর সম্বিৎ ফিরল শিশুপুত্রের কান্নার আওয়াজে। আদরের আত্মজকে বুকে তুলে নিলেন লহমায়। শিশুটির নিষ্পাপ মধুর মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে যশোধরা বললেন,
তোকে বড় হতে হবে। মানুষ হতে হবে। মানুষের মতো মানুষ। যে-মানুষ পৃথিবীর পক্ষে কল্যাণকর।