• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক : মৃদুল শ্রীমানী

জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর। বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন। চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।

জেনেটিক্স ও মহা প্রাচীন ভারত

(যে লোক জেনেটিক্স আর ইতিহাস কিছুই জানে না, এটা তেমন লোকের কল্পনা বিলাস। রামগরুড়ের ছানাদের অপাঠ্য)

১৩

আমাদের প্রাচীন শাস্ত্রকারদের একটা ভালো গুণ ছিল। তাদের ঢাক ঢাক গুড় গুড় করার অভ্যাসটা কিছু কম ছিল। ঘোমটার নিচে খেমটা নাচা তাঁরা বিশেষ পছন্দ করতেন না। সেকালে গর্ভিণী আর গর্ভস্থ ভ্রূণের কথা কিছু বলা দরকার মনে করছি।
সকলেই জানেন, গর্ভ ধারণ করলে মায়েদের একটু বেশি যত্ন লাগে। কিন্তু আমাদের রামচন্দ্র তা করা দরকার মনে করেন নি। তিনি গর্ভিণী স্ত্রীকে বনবাস দণ্ড দিয়েছেন। নির্বাসিত হয়ে বাল্মীকি মুনির আশ্রয়ে বনে বাসকালে সীতা দু দুটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, লব ও কুশ। তারা বড়ো হয়ে বাল্মীকি মুনির কাছে রামগুণ গান শিখে রামের রাজসভায় গান শোনাতে এলে পিতার বুকে দরদ উথলে উঠেছে ।
দুষ্যন্তের গল্পটিও পাঠক বন্ধু অনুগ্রহ করে স্মরণ করবেন। উদ্ভিন্ন যৌবনা শকুন্তলার সাথে নিভৃতে যৌন মিলন করলেন রাজা। আর একটি অঙ্গুরীয় দিলেন। শকুন্তলা সোজা সাপটা মেয়ে। সে তো জানে না ভারতের রাজা গজাদের হারেম থাকে আর হারেমে কত যে দাসী বাঁদি থাকে তার আর ইয়ত্তা নেই। সে ভেবেছে রাজা তাকে ভালো বেসেছেন, আর ভালোবেসে দেহভোগ করেছেন। আশ্রম মাতা গৌতমী আর মুনি কণ্বের দুই শিষ্য শার্ঙ্গরব আর শারদ্বতকে নিয়ে রাজা দুষ্যন্তের রাজসভায় গিয়ে নিজের অধিকার চাইতে গিয়ে শকুন্তলা বেকায়দায় । রাজা বললেন অভিজ্ঞান কিছু আছে? আমি যে তোমার সাথে যৌন সঙ্গম করেছি, তোমায় গর্ভবতী করেছি, সেই ব্যাপারে ডকুমেন্টেশন কিছু এনেচো সোনা ?
শকুন্তলার মাথায় হাত। আরে মাথার চুলে যে রাজার দেওয়া আংটি ছিল, সেটা গেল কোথায়?
রাজসভা হো হো করে হেসে উঠলো । এভিডেন্সের অভাবে মামলা খারিজ। গর্ভবতী রমণী খোরপোষের মামলায় বেবাক হেরে গেল।
আশ্রম মাতা গৌতমী আর মুনি কণ্বের দুই শিষ্য শার্ঙ্গরব আর শারদ্বত গর্ভবতী শকুন্তলাকে নিজেদের আশ্রমে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন না। শকুন্তলার ঠাই হল অন্য এক আশ্রমে।
শকুন্তলা যথাকালে সন্তানের জন্ম দেবেন। তার নাম হবে সর্বদমন ভরত। এদিকে আংটি উদ্ধার হয়েছিল এক জেলের থেকে। সে বেচারি মাছের পেট কেটে মহা মূল্যবান অঙ্গুরীয় পেয়েছিল। সে অঙ্গুরীয় গিয়েছিল রাজার কাছে, রাজ দরবারে।
অঙ্গুরীয় দেখে রাজার মনে পড়েছিল শকুন্তলার কথা। লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে খুঁজতে বের হন রাজা। আশ্রমে গিয়ে শিশুটিকে সিংহ ছানার সাথে দুষ্টুমি করতে দেখে রাজা শিশুর মধ্যে নিজের আদল খুজে পান।
রাম আর দুষ্যন্তের উভয়েরই পুত্র সন্তান। কন্যা সন্তান হলে কি হত?

এই ধারাবাহিকটি এখানেই শেষ হল।

অনেকেই একসঙ্গে শ্রদ্ধেয় মৃদুল শ্রীমানী -র ধারাবাহিকটি একসঙ্গে পড়তে চেয়েছেন, তাদের জানাই আমরা কোনো এক শনিবার এই ধারাবাহিকটি একসঙ্গে প্রকাশ করবো। পাঠক,প্রিয় পাঠক সঙ্গে থাকুন।

ভজন দত্ত
মুখ্য সম্পাদক
টেকটাচ টক

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।