• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৩৫)

পর্ব – ৩৫

৩৪
কিশোরটি শশাঙ্ক পালের ঘরে শুয়ে পড়তে তিনি শ্যামলীর ঘরে এলেন। মেয়ে তাড়াতাড়ি রাত পোশাকের ওপর একটা সুতির চাদর জড়িয়ে নিল। হাল্কা শীত পড়তেও শুরু করেছে।
শশাঙ্ক পাল বললেন, “ শ্যামলিমা, আজ তোর ওপর দিয়ে খুব ঝক্কি গেল। “
চনমনে গলায় মেয়ে বলে, “না বাবা, অনেক রকম অভিজ্ঞতাও হল।“
চাপা স্বরে শশাঙ্ক পাল জানতে চাইলেন “হ্যাঁ রে মা, অরিন্দম কেন এসেছিল রে?”
“কিছু না বাবা, এমনি অনেকদিন আসেন নি তো, তাই খোঁজ নিতে তোমার গ্যারাজে এসেছিলেন । আমিই টেনে আনলুম এখানে।“
শশাঙ্ক পাল বললেন, “তুই একটা অন্য রকম কিছু করে ফেলেছিস। এখন তোকে নানা দিক থেকে সতর্ক থাকতে হবে। নানা লোকে নানা দিক থেকে তোকে বহু কথা বলবে। তুই যেন মাথা গরম করে ফেলবি না।“
নতমুখী হয়ে শ্যামলী বলল, “হ্যাঁ বাবা, অরিন্দম বাবুও আমাকে সঠিক ভাবে চলার উপদেশ দিতে এসেছিলেন।“
শশাঙ্ক পাল গম্ভীর মুখে বলেন, “হুম।“
শ্যামলী উৎসাহ নিয়ে বলে, “বাবা, কাজ দেখতে দেখতে এখন বুঝতে পারি কোন চাকাটা কিভাবে ঘুরে গাড়িকে কিভাবে চালায়।“
শশাঙ্ক পাল উদাস স্বরে বলেন, “মা রে, চালায় বলতে পারিস, আবার বলতে পারিস ঠেলা দেয়।“
“তা ঠিক বাবা, কোনো গাড়ির পিছনের চাকা ঘুরে সামনের অংশকে ঠেলে, আর কোনো গাড়ির সামনের চাকা আর পিছনের চাকা দুটোই একসাথে চলে।“
বাসন্তীবালা, শ্যামলীর মা, ঘরে ঢুকলেন। “হ্যাঁ গো, বাপ বেটিতে গল্প জুড়েছ, কিন্তু রাত কত হয়েছে খেয়াল আছে? কাল আবার মেয়ের পরীক্ষা।“
শশাঙ্ক পাল বললেন, “পরীক্ষা? শ্যামলিমা, কাল তোর পরীক্ষা? আর তুই এভাবে সময় নষ্ট করছিস?”
“হ্যাঁ বাবা, এমনি ক্লাস টেস্ট । মা, তুমি কি করে জানলে?”
“টেবিল ক্যালেন্ডারে লিখে রেখেছিস যে। তুই যখন ঘরে থাকিস না, আমি যে ঘরের সব কিছুতে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে দেখি। নে, আর কথা নয়। সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে তোমার। এখন শুয়ে পড়ো।“
এমন সময়ে একবার ফোন বেজে কেটে গেল। শশাঙ্ক পাল বলেন, “কি রে, এত রাতে কে আবার ফোন করে?”
“কি জানি বাবা !”
আবার বেজে উঠতে ফোনটা সন্তর্পণে ধরে শ্যামলী নিচু গলায় বলে “হ্যালো”
“আমি রমানাথ বলছি ।“
“হ্যাঁ , বুঝতে পেরেছি।“
“কাল তুমি একটু সময় দাও না। কটা কথা বলব।“
“কাল আমার পরীক্ষা।“ এড়িয়ে যেতে চায় মেয়ে।
“একটু সময় দাও । তোমার যখন খুশি। বিকেলে কি সন্ধ্যা নাগাদ গেলে অসুবিধে হবে?”
“আচ্ছা, সন্ধ্যেয় আসুন।“
শশাঙ্ক পাল মেয়ের কাছে জানতে চান কে ফোন করেছিল। নকুড় নন্দীর ছেলে রমানাথের কথা বলতে তিনি অবাক হয়ে যান । বলেন “কই তারা তো তোকে দেখে যাবার পর আর কোনো উচ্চ বাচ্য করে নি। হ্যাঁ রে, তোকে রমানাথ মাঝে মাঝে ফোন করে না কি?”
“না, ফোন করেন না। আজ দুবার করলেন।“
“কেন? কি চায় সে?”
“দেখা করে কথা বলতে চান।“
“তুই আসতে বলে দিলি?”
মেয়ে মাথা নিচু করে থাকে।
বাসন্তীবালা বললেন, “তা কি করবে, একটা লোক এতো রাতে ফোন করে জানতে চাইছে আসবে কি না, আর তোমার মেয়ে বলে দেবে না এসো না?”

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।