গুচ্ছকবিতায় প্রভাত মণ্ডল

১. মানবতার খোঁজ

শতাব্দীর পর শতাব্দী        আমির আমিত্ব খুঁজি
          নদীতে পাহাড়ে অন্দরে বাহিরে ,
তোমার নীলাঞ্জন চোখে        আঁখির তারায় বুঝি
          বারুদের শিহরণ প্রতিটি প্রহরে ।
এক সুর ভেসে আসে        এই অচেনার দেশে
          মানবতা বাণী টুকু ছুঁতে চাই ,
নদীকূলে চেয়ে দেখি        আছে এক তরী ভেসে
          মোর মন মাঝি একাকিনী খেয়া বায় ।
হেথা অচীন সমুদ্র পুরী        নীলে ভরা জলরাশি
          মানবতা সাথে কত কথা কহি ,
মোর শিশির বিন্দু সম        আঁখি বারি ঝরি পড়ে
          স্মৃতির কন্টক লয়ে বেদনা বহি ।

 

২. হারিয়ে যাবো

হারিয়ে যাবো        মিলিয়ে যাবো
        ভব ধূলির এ পার হতে ,
ওই পারেতেই         একলা রবো
     নীরব নিশীথ সন্ধ‍্যা-প্রাতে ।
সুখের হাসি              ব‍্যথার বাঁশি
        সাঙ্গ হবে সকল দেনা ,
জীবন তরী              ভীড়বে ঘাটে
      সেথায় সবই মোর অচেনা ।
সব অভিমান                  ছিন্ন হবে
       রইবে না এই মানব দেহ ,
পৃথ্বী ধূলির                   জন মেলায়
       পুছবে না মোর নামটি কেহ ।

 

৩. তুমি বেদুঈন

তোমা স্বপ্নের শহরে তুমি বেদুঈন মরুভূমির
মরীচিকাকে জল ভাবি ছুটিবে আজীবন ,
মোর স্বপ্নেরা প্রতিদিন সাঁঝবাতি জ্বালায়ে
প্রতীক্ষায় প্রহর গুনবে অনুক্ষণ ।
ঝকঝকে তকতকে আলো সবই ক্ষণিকের
নিভে গেলে তমসা ঘিরিবে চারিধার ,
নিভু নিভু প্রদীপের স্বল্পালোকই
চতুদিকে আঁধার করিবে সবই পার ।
তুমি সেথা এলোকেশী গগন বক্ষে শশী
গাঁথিবে পৃথ্বীমাঝে হৃদি প্রেম হার ,
হোক না সে ব‍্যথা ভরা হৃদয় আকুল করা
ভিজায়ে আঁখি তারা কণ্ঠ করুক ভার ।

 

৪. খুঁজিবে সেদিন কায়া

            স্তব্ধ দুপুর ,
রবির কটাক্ষে উড়িছে ধূলি
শুকনো মাটির পরে ,
আনিছে শত অজানা বেদন
দেহ মৃত্তিকা ঘরে ।
শুকনো পাতার নুপুর ধ্বনি
আনিছে ঝড়ের আবহ বাণী ,
চুপচাপ সবে নাহি কথা কয়
বনস্পতির বুকে বড় ভয় ,
এই বুঝি এল রুষিয়া দানব
সে দানবই তো এ মহা মানব ,
কভু নাহি প্রাণে দয়া ।
রুষিছে দানব তব ভুলে ভরা
ইমারতের ওই পাহাড় গড়া ,
নামিছে বুকে তব অভিশাপ
ভাঙিতে তোমা লোভ রূপী পাপ ,
সে পাপে বিনাশ হইবে ধরণী
পাইবেনা তোমা পুণ্য তরণী ,
খুঁজিবে সেদিন কায়া ।

 

৫. ক্লান্ত পথিক

কে তুমি ডাকিছ মোরে        ভালোবেসে নাম ধরে
        নিতে চাও মোর আঁখি সুধা ,
কত যুগ যুগ ধরে        তুমি মাগো কোলে করে
        ভুলায়েছো শত দুঃখ-ব‍্যথা ।
আজিকে নয়ণ ভারি        দিবা নিশি ঝরে বারি
        করুণা সিন্ধু আঁখি পাতে ,
বিকট মরুৎ রাশি        তাহাতে চাঁদের হাসি
        জ‍্যোৎস্না ভরা আঁধো রাতে ।
করুণ পলাশ গন্ধ        হৃদয় দুয়ার বন্ধ
        সে হৃদয়ে ভরা শত স্মৃতি ,
নিস্তব্ধতা কোলাহল        আছে শুধু হলাহল
        আর আছে মোর অন্তর প্রীতি ।
জরাজীর্ণ ঝরে ভাঙি        বিচিত্র রঙেতে রাঙি
        পেরায়েছে বছর বহু ,
ক্লান্ত পথিক আমি        তুমি মোর অন্তর্যামী
        বাড়ায়ে ধরো মোর বাহু ।
লও তুলে কোলে করে        এ ভুবন দাও ভরে
        ভাঙিয়া দাও সব মোহ ,
এ জগৎ মায়ার খেলা        আছে শুধু অবহেলা
        তোমা মত ভালোবাসেনা কেহ ।
তুমিই অরূপ রাণী        ভরাও জীবন বাণী
        অন্তরে দাও শুধু আলো ,
চুকিয়াছে সব ঋণ        হইল যাবার দিন
        দেখি যেদিকে তাকায় শুধু কালো ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।