কবিতায়ণে গৌতম ভরদ্বাজ

অন্য ভ্রমণ

পোড়ো–  মুরগি ব’লি হয় না এখন।
শিশুরা অনন্তে-র মতো চক্ষু মুদে থাকে না,
ভয় নেই। মুরগি ব’লি হয় না এখন।
না পোড়ানো শব যেন ভৈরবথানটি
অলক্ষুনে প্রান্তর, পড়ে আছে আজ;
হাড়ের সাদা ঘুনের মতো প্রাচীন।
যে লোকালয় নিশ্চিত উচ্ছল ছিল একদিন
ভৈরবথানের পশ্চিমে, আগাছা পরগাছা
আচ্ছাদে অব্যগ্র যৌনতার বিষাদের মতো,
মৃত কালো গাভীটির পিয়ূষহীন ওলান যেন
অবেদনিক এলায়ে পড়ে আছে।
বাও’বাতাসই হবে, তাছাড়া কেই বা হবে
ঐ ছন্নছাড়া  গা ছমছম ডহরে!
অদৃশ্যমান প্রেত রঙ পিতৃপুরুষের অপূর্ণ ইচ্ছা শালপাতার ডোঙায় নাভিকুন্ডে
অতীত জুড়ে উড়িয়ে এনেছে সেইখানে।
গ্রহণ লাগা চাঁদের কোটরের মতো ছাইরঙ–
শালপাতার ডোঙাটি শতাধিক বছর
বয়সী কী!
নিষেকের স্মৃতি ভার গর্ভ-দ্রোণী যেন,
ধরে আছে; কেউ দেখেনি অপার্থিব পাহাড়টির এধার থেকে চূড়া টপকে
ওধার অব্দি অগুন্তি বছর।
ছেড়ে যাওয়া পায়রার খোপ কুলুঙ্গি’র গল্প,
পিছনের বাগানে স্থলপদ্ম গাছটি খুব  ছিল।
ঘরের বাসনা ছাপা সুতির কাপড়, আঁচলের খুঁটে পদ্মপুস্প সিঁদুরলেপা আধুলিটি ছিল। বাঁধা ছিল। মা ছিল– সুসংহত পরিচয়ের মতো মহাকালের মন্দিরে কলাবউ।
ষোলয়ানা মন্দিরটি কত কত রাতের মাপ
বিস্মরণ গভীরে চলে গেছে।
শুশ্রুষার মতো পরম সরদল, একতারা
ঝোলানো ছিল; নিকানো উঠান।
লক্ষীর পা-এর ছাপ আঁকা আলপনা ছিল।
বাগানের সব ফল– পেয়ারা সবেদা আতা,
আর সব ফল, মাধবী লজ্জাবতী লতা জুঁই
বকুল দোপাটি ফুল সব যা ছিল, অপাঙ্গ জড়িয়ে ছিল; নেই।
লক্ষীপ্যাঁচাটিও ক্ষুধার্ত হয়েছিল বোধহয়
হয় যেমন; নিবৃত্তি বাসনার মতো।
নতুন উর্বরা কোনো রাতের চরের খোঁজে
উড়ে উড়ে উড়ে চলে গেছে।
শকুন্তলার সঙ্গম পহেছান আংটির মতন
গোখুরা বাস্তুসাপটি ছিল সরসর।
মহাগ্রাসে গিলেছে সময় ।
কী দেখাতে বেড়াতে নিয়ে আসা!
ফেলে যাওয়া বট গাছ অশ্বথের চারা
অর্জুন পিপুল আর সব গাছ আরো সব
যত যাবতীয়, বুড়ো মর্ত্যরঙ আগুন তার
কৃত্যাভ্যাসে  নির্মম খেয়েছে।
কী দেখাতে বেড়াতে নিয়ে আসা!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।