এই সময় দেশ নিয়ে ভাবনা – লিখলেন দুর্গাদাস মিদ্যা   

এ সময়ে দাঁড়িয়ে দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

বিষয়টি খুব তাৎপর্যপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক। তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে এখন অর্থাৎ বর্তমান সময়ে অবস্থাটা কি? ভালো না মন্দ? সুস্থ না অসুস্থ পরিবেশ অর্থাৎ নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের ভাবনা নিয়ে নিরুদ্বিগ্ন জীবন যাপন করার পক্ষে সহায়ক কি না? হলে, কতটা সহায়ক আর প্রাসঙ্গিক। এই কারণে সার দেশ জুড়ে এক বিরাট জিজ্ঞাসা চিহ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে এই দেশ কার দেশ? কতটা কার দেশ?
‘দেশ বলতে কী বোঝায়, সেটা সর্বাগ্রে জেনে নেওয়া যাক। অভিধানগত ভাবে দেশ মানে এই সর্বংসহা পৃথিবীর বুকে
একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক ভূখণ্ড। দেশ মানে শুধু মাটি নয়, জল নয়, অরণ্য নয়, দেশ তখনই যথার্থ দেশ হয়ে ওঠে যখন, সেখানে মানুষ বাস করে। আর দেশের ধারণা তখনই যথার্থ রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়।
সময়ের বিচারে ভাল, মন্দ, খারাপের নিরুপন হয়। ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্ম ভূমি’ এটি একজন স্বদেশপ্রেমী কবির ভাবানুবেগ! সেরা হতে গেলে যে কোন দেশকে সেরা হতে হবে। সেরা হতে হবে জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, কালচারে, কৃষ্টিতে। দেশ তখনই নিজের দেশ হয়ে ওঠে যেখানে দেশবাসী যারা, তারা প্রকৃত স্বাচ্ছন্দ ভোগ করে। স্বস্তিতে থাকতে পারে। নিজের সৃষ্টি ক্রিয়া কর্মের বিকাশে সহায়ক সহোযোগিতা পায়। যাবতীয় গঠনমূলক ভাবনার যথার্থ বিকাশে দেশ সহায়ক শক্তি হিসাবে পাশে দাঁড়ায় তবেই তার সেটা স্বদেশ হয়ে ওঠে। শুধু জন্মালেই দেশ কখনো সম্পূর্ণ নিজের দেশ হয় না। তাহলে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আর এক কবি বলে উঠতেন না, ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার স্বদেশ নয়’।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে খুব সহজেই বলা যায় এই রকম দেশ বা স্বদেশ যাই বলুন আমার কাছে কাম্য নয়। বিভেদের বিস্তৃত ঊরণজালে জড়িয়ে পড়া দেশ আমার নয়। নারী নিরাপত্তাহীন এই দেশ আমার স্বদেশ নয়। আকাশমুখী বেকারত্বর ভারে এই দেশ আমার স্বদেশ নয়। যেখানে বিচারের বানী নীরবে নিভৃতে কাঁদে, সে আমার দেশ নয়। যেখানে শাসক, শোষকের ভূমিকায়, সে আমার স্বদেশ নয়। আমরা ভীষণ চিন্তিত। যখন শুনি ভারতবর্ষের অর্থাৎ আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারক বলেন – ‘প্রতিশোধ ন্যায় বিচার হতে পারে না।’ তখন ভাবতে হয় আমরা কোথায়? যে দেশের রাজধানী ‘ধর্ষন রাজধানী’ শিরোপা পায় সেই দেশ কেমন থাকে বা থাকতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
দেশের মাটিতে মাথা ঠেকাতে ইচ্ছে করে কিন্তু যখন দেখি মাটিটাই পায়ের তলা থেকে সরে যাচ্ছে বা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তখন আর ইচ্ছে হয় কি মাথা ঠেকাতে? তবুও বলি দেশকে যখন ‘মা’ বলি তাকে তো আর ত্যাগ করতে পারি না।…
সময় বড় জটিল এ কথা স্বীকার করতে হবে। ভেঙ্গে যাচ্ছে সব ভেঙ্গে যাচ্ছে। সব পুরানো ধ্যান ধারণা সম্পর্কের সূত্র বদলে যাচ্ছে। পরানুকরণ প্রিয়তায় আমরা সকলে একান্নবর্তী পরিবারের সেই বন্ধন ভাঙতে ভাঙতে পরমাণু পরিবারে পৌঁছে গেছি। মায়া মমতা স্নেহ এসব সেকেলে সেন্টিমেন্ট। তাই ধর্ষনের বর্ষন শুরু হয়েছে। নীতি, নৈতিকতা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। দেশপ্রেম শব্দটি এখন বড় ক্লিশে। ফলে দায়বদ্ধতা এখন সোনার পাথর বাটি। সব মিলিয়ে দেশের চালচিত্র পুরানো দিনের জমিদার বাড়ির ভগ্ন প্রায় দেউলের মতো। তাছাড়া সারা দেশে এখন কোনো মান্যবর ব্যক্তিত্ব নেই যার নির্দেশে সারা দেশ আন্দোলিত হতে পারে। এই অবস্থায় নিরীহ একজন ব্যক্তি যে খুব একটা সুখে বা স্বস্তিতে নেই এ কথা বোঝার জন্য বা বোঝাবার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।