সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সায়ন (পর্ব – ১৬)

অমৃতায়ণ

মনে হয় কেউ ঘুমের মধ্যে আছে। মনে হয় কেউ রাত, তারাজল শুধু ছিটে আসে আজ
ধুয়ে যায় সব পাপ।

ওই যে দেখতে পাচ্ছো বৃষ্টি – পুলিশ স্টেশন, ক্ষুদিরাম মেট্রো, পুলিশ স্টেশনের পাশ দিয়ে কেউ লুকিয়ে চলে যাচ্ছে । ওপার দিয়ে কেউ ভেসে আসে। গোপন সবটা, পৃথিবী জানে না
আমরা তো শুধু শহরের পারে বসে দেখে যাই।
মনে থেকে যাবে ওর একলা মায়ের লড়াই, বাবার গামের দাগ। কতজন জানে তার গা’যে় কাদাজল ?
বাড়ি ফিরে এলে শেষে …. শহরের অলি গলি তে ছড়ালো ওর ফোন নং !
গল্পটা থাকে অন্য খাতায় লেখা ! যুদ্ধ জীবনে দেখে যাবো অবশেষে।

-এক কাপ চা হবে?
মনে হলো গরম দুধ থেকে হাতটা হঠাৎ তুলে লোকটা আমার দিকে চেয়ে আছে।

বেশ চমকেই উঠলাম!

একটা নামহীন অন্ধকারের মাঝে একটা হঠাৎ মাথার উপর থেকে আলো জ্বলে আছে চাওযালার।
ভিতরের বেঞ্চগুলো দেখে তো …..

– কি ভাবছো এত? মনে হচ্ছে তো এখানেই নেই !

ও সঞ্জয় দা বলছে কথা, কার সঙ্গে এতক্ষণ কথাগুলো বললাম তাহলে – অমৃতা ? ঘড়িতে তখন ন’টা বেজে গেছে। অমৃতা এতক্ষণে বাড়ি পৌঁছে গেছে নিশ্চয়ই ।

– পারিজাত দা আসবে না?

– আসবে , এসেই গেছে মনে হয় ! আচ্ছা সঞ্জয় দা, তোমাদের এই দিকের গলিটাতে সকালবেলায় কোনও ঘটনা ঘটেছে শুনেছো ?

দোকানের ডান দিকে দু’পা হাঁটলে আবার ডানদিকে একটা গলি। বাঁ দিকে গেলে পিএনটি আবাসন। সুলগ্নার বাড়ি ঠিক ওই গলির শেষে। এর মধ্যে খবর এসে গেছে পাড়ার ছেলেরা নাকি এই বিষয়টা দেখছে। থানাতেও খবর দেওয়া হয়। কাদের উপর সুলগ্নার সন্দেহ কে জানে। তবে নাকি নাম লেখানো হয়েছে। সমস্ত ঘটনাই ঘটছে তবে সামনে নয় বিভিন্ন ভাষায় , আর তিনটে মাথা কথা বলে যাচ্ছে শুধু। একজন মেয়ের এই বিপদকে সামনে রেখে সবটা ঘটনা ঘটছে।

আদপে ঘটছে তো ? বা ঘটেছে তো!

সঞ্জয় দা একটা বিড়ি ধরিয়ে জোরে ধোঁয়াটা ছেড়ে বললো , একটু কেসটা ক্লিয়ার করো তো !

পোস্টারের কথাটা বলবো কিনা ভাবছি, আর কেস – সে বলতে গেলে তো চায়ের দোকানে কোন মেয়ে কাপড়ের তলায় কি পড়ে, আর কার ব্যাংকের পাসবইযে কটা পাতা খালি আছে সেই পর্যন্ত খবরও প্রায় চলে আসে । তাহলে সঞ্জয় দা কি আমাকে বাজিয়ে দেখছে নাকি , আমার থেকে আসল রহস্যটার হালহকিকত বুঝে নিতে চাইছে আর একটু।

এই খোঁজ আমাকে আসতে আসতে নিয়ে যাচ্ছে পাটুলির ঝিল পাড় ধরে , আমি নিচু হয়ে মুখ দেখছি – জল সরে যাচ্ছে – ইতিহাস আর বিষন্ন আবার আমাকে সৃষ্টির মতোই ভয়ানক এক নেশার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে ।

অমৃতা দেখো , এই জলের মধ্যে ভালো করে তোমার আমার মুখের পাশেও আছে –

রাইনের মারিয়া রিলকে, প্রবল এক আলোড়িত অন্বেষণের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে ফেলেছেন, খুঁজে চলেছেন পাগলের মতো কিভাবে কবিতার কাছে যাবেন, কবিতাই বা তাঁর কাছে কিভাবে আসবে, সেইসময়, তখন বিংশ শতকের সবে শুরু, ১৯০১ সাল, রিলকে পা দিলেন পারী শহরে। লক্ষ্য বিশ্রুত ভাষ্কর আওগুস্ত রোদ্যাঁর উপর একটি মনোগ্রাফ বা প্রকরণ-গ্রন্থ লিখে ফেলা। আর কাছ থেকে সেই প্রতিভার দৈত্যকে পর্যবেক্ষণ করা, জেনে নেওয়া তাঁর সৃষ্টির আলো-অন্ধকার। রোদ্যাঁর ব্যক্তিগত সহকারী হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগল না । (যদিও পরে কিছু বিষয়ে মতান্তরের কারণে রোদ্যাঁ তাঁকে এই পদ থেকে সরিয়ে দেন)। সেইসময় রিলকে নিজেও তাঁর অন্বিষ্ট নিয়ে গভীর এক যন্ত্রণা ও টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছেন। পারী শহরে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছেন, প্রাণপণে খুঁজে চলেছেন প্রেরণা। এই অস্থির অবস্থায় তিনি মুখোমুখি হলেন পল সেজানের চিত্রকর্মের। সেজান গভীরভাবে প্রভাবিত করলেন রিলকেকে। শিল্পের সঙ্গে শিল্পীর কি সম্পর্ক হবে, শিল্প এবং শিল্পী কোন রহস্যময় রসায়নে একে অপরের মধ্যে ক্রিয়াশীল হয়ে উঠবেন সেই বোধের জায়গায় সেজান রিলকের কাছে প্রায় আলোকবর্তিকা হয়ে দেখা দিলেন। রিলকে পরে লিখছেন “কেবলমাত্র একজন ঋষিই এভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে এক হয়ে যেতে পারেন, যেমন সেজান তাঁর শিল্পকর্মের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন”। একেবারে একা, খুব নির্জনে, প্রায় লোকচক্ষুর অন্তরালে আপন সাধনায় মগ্ন থাকতেন সেজান। মানবসঙ্গ খুব একটা পছন্দ ছিলনা এই সন্ত-শিল্পীর। মাঠের মধ্যে ছবি আঁকতে আঁকতে প্রবল ঝড়ের সম্মুখীন হন সেজান, কিন্তু কাজ থামাননি। তাঁর বাড়ির পরিচারক তাঁকে দু’ঘন্টা পরে উদ্ধার করে। পরের দিন অসুস্থ অবস্থায় মারা যান!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।