• Uncategorized
  • 0

‘কফি পাহাড়ের রাজা’ সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে তুষ্টি ভট্টাচার্য (পর্ব – ২ ।। খন্ড – ১১)t

কফি পাহাড়ের রাজা

দ্বিতীয় পর্ব:

১১)

একটা সময় এলো, যখন গৌরাম্মা নিজেকে ক্রমশ এই জগতে সম্পূর্ণ রূপে মানিয়ে নিয়েছে। রানীর বিরোধিতা করার ইচ্ছেটাও মরে এসেছে। এই বিলাস বৈভব তাকে মোহগ্রস্ত করেছে। ভুলে গেছে তার পরাধীনতার জ্বালা। কোরাগুকে আর মনে করতে চায় না সে। তার নিজের পিতৃদেব যখন নিজেই কোরাগুকে এদের হাতে তুলে দিতে পেরেছে, তখন আর সে কেন এই নিয়ে অহেতুক দ্বন্দ্বে ভুগবে? মেনে নিতে নিতে নিজের ইচ্ছেটাকেই আর খুঁজে পায় না গৌরাম্মা। তাছাড়া এই প্রাসাদে তার নিজের অঢেল স্বাধীনতা, অর্থাৎ কিনা সে যেখানে খুশি যেতে পারে, যা খুশি করতে পারে, আদেশ দিতে পারে চাকরবাকরকে। রানী তাকে কিছু ভাতা দিচ্ছে এখন। এই অর্থ খরচ করারও কোন উপায় নেই তার। কাছের ফাইফরমাশ খাটার লোকজনকে মাঝেমাঝে কিছু বখশিশ দেওয়া ছাড়া তার অর্থের প্রয়োজন নেই। এ প্রাসাদ তাকে সবরকম বিলাসিতার উপকরণ ঢেলে সাজিয়ে দিয়েছে। শরীরে যৌবন এসেছে অঢেল। রূপের ছটায় চারিদিক আলো হয়ে থাকে তার। আজকাল মুখার্জি স্যারকেও কেন জানি ভাল লাগে না। অর্ধেক দিন তাকে বিদায় করে দেয় সে। পড়তে বসলেও আনমনা থাকে। সেই আগের উৎসুক মেয়েটা যেন হারিয়ে গেছে। স্যার লক্ষ্য করেছেন সব। একদিন নিজে থেকেই বললেন, ‘গৌরাম্মা, মনে হয় আমাকে তোমার আর প্রয়োজন নেই। ইংরেজি বলা বা পড়া তোমার আয়ত্বে চলে এসেছে। আদবকায়দাও শিখে নিয়েছ। কিন্তু জ্ঞানের ভাণ্ডার বিশাল। এক মহাসাগর। এখানে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে না নামলে ভরাডুবির সম্ভাবনাই বেশি। সবার জন্য সব কিছু নয়। ভাল থেক। আশীর্বাদ রইল আমার’। কেন জানি গৌরাম্মা মুখার্জী স্যারকে যেতে নিষেধ করতেও পারল না। প্রণাম করল ওঁকে। যদিও উনি চলে যাওয়ার পর মনটা একটু বিষণ্ণ হয়ে রইল। নিজের টেবিলের ওপর পড়ে থাকা বইপত্র নাড়াচাড়া করল খানিক। মন লাগল না। জানলায় দাঁড়িয়ে থাকল আনমনে। আর সেই সময়ে ওর ডাক পড়ল। রানীমার একজন স্পেশাল গেস্ট এসেছে। গৌরাম্মা যেন ‘বিশেষ’ ভাবে প্রস্তুত হয়ে আসে।
আয়নার সামনে বসল গৌরাম্মা। চুলগুলো উঁচু করে একটা হাতখোঁপা করল ও। মুখে প্রয়োজনীয় প্রসাধন সেরে নিতে বসল। যদিও প্রসাধন না করলেই গৌরাম্মাকে বেশি সুন্দর দেখায়। ওর চামড়ার একটা নিজস্ব দ্যুতি আছে। প্রসাধনের আড়ালে সেই দ্যুতি নষ্ট করতে মন চাইল না আজ। একটু কাজল এঁকে নিল ওর ঘন কৃষ্ণ কালো চোখে। আয়নায় একজোড়া চোখের দিকে তাকিয়ে রইল ও অপলক। অর্ধচন্দ্রাকার আঁখিপল্লবের ছায়া নেমেছে চোখের পাতায়। যেন মেঘ ঘনিয়েছে আকাশে। চোখ উঁচু করে তুলে ধরলেই আবার যেন সূর্য হেসে উঠবে চোখে। নিজের রূপে নিজেরই নেশা হয় গৌরাম্মার। সে বেশ বুঝতে পারে, তার আশেপাশে বৃটিশ পুরুষদের ভিড় বাড়ছে। তাকে একবার দেখার জন্য, তার হাত ধরে বল-এ ওঠার জন্য কাড়াকাড়ি পড়ে যায় তাদের মধ্যে। ক্রসেট বাঁধতে একজন বাঁদীকে ডাকল ও। ওর পিঠে দড়ি টানটান হয়ে বসছে যত, ভারি বুকের ঢেউ উপছে পড়ছে ওপরে। একটা গভীর ফাটলের দিকে তাকিয়ে রইল গৌরাম্মা। দুই স্তনের উচ্চতা সমান দেখাচ্ছে কিনা দেখে নিল আরেকবার। ফরাসী সুগন্ধ ছড়াল বুকের খাঁজে। একটা লাল গাউন পরে নিল ও এবার। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিল গাঢ় করে। লাল আগুনের আভা ছড়াতে ছড়াতে গৌরাম্মা চলল রানীর খাসমহলে।
রানীর পাশে বসে আছে এক অল্প বয়সী ছেলে। দীর্ঘদেহী, গায়ের রঙ বলে দিচ্ছে সে ভারতীয়। মাথায় উজ্জ্বল সোনালি রঙের পাগড়ি, কোমরে কৃপাণ। গালে কোমল দুর্বাদলের মতো দাড়ির আভা। টিকলো নাক, দীঘল ও আয়ত দুই চোখ, নাক, মুখের আর চোয়ালের গড়ন যেন পাথরে খোদাই করা। এতই সুন্দর সে, যে গৌরাম্মা সমস্ত লোকলজ্জা, আদবকায়দা ভুলে হাঁ করে তাকিয়ে রইল সেই যুবাপুরুষের দিকে। ওদিক থেকেও প্রতিক্রিয়া সেই একই হয়েছে বোঝা গেল। দুজনে দুজনের দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে রইল। রানীর ঠোঁটে তখন হাসি। ছেলেটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন উনি। এই প্রথমবার জনসমক্ষে এলো দলিপ সিং। গৌরাম্মার সঙ্গে তার আলাপ হল। প্রথম দেখাতেই তাদের দুজনের সজীব মনে প্রেমের কুসুম ফুটে উঠল। রানীমাও বোধহয় এটাই চেয়েছিলেন। এরপর যা হওয়ার তাইই হল। রোজ রোজ দুজনের দেখাসাক্ষাৎ হতে থাকল। সবার সামনেও যেমন, তেমন দুজনে আলাদা হয়ে বাগানে ঘুরে বেড়ায়, চা পান করে, দিনের মধ্যে বেশ কয়েক ঘন্টা তারা একসঙ্গে কাটায়। গভীর প্রেম ও বন্ধুত্বে বাঁধা পড়ে গেল দুই দেশ ত্যাগী ভারতীয়। দলিপ সিংকে নিয়ে রানী ফোটো শুট করান। তার রূপের প্রশংসা করেন সবার সামনে। তার চোখ ও দাঁতের গঠন নিয়ে এতটাই উচ্ছসিত হয়ে প্রশংসা করেন রানী যে, দলিপ লজ্জা পায়, অস্বস্তিতে ভোগে। যদিও রানী তাকে স্নেহ করেন মায়ের মতো, তবু কেন জানি এই উচ্ছাসের ধরন তার ভাল লাগে না। এসব লক্ষ্য করেছে গৌরাম্মাও। তারও ফোটো শুট করিয়েছেন রানী। বড় বড় ফ্রেমে সেই সব ছবি বাঁধিয়ে রাখা আছে প্রাসাদে। অতিথি অভ্যাগতরা দেখে যায় সেই সব ছবি মুগ্ধ হয়ে। গৌরাম্মা বোঝে, দলিপ আর ও একই ভাবে রানীর জালে আটকে আছে। ও নিজে যেমন মেনে নিয়েছে, দলিপও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে দলিপের অবস্থা আরও খারাপ। সে তো নিজের পরিবারের কাউকে দেখেনি জ্ঞান হওয়ার পরে। মায়ের মুখটাও আবছা হয়ে এসেছে তার। কদাচিৎ নিজের দেশের লোকজন এলে গৌরাম্মা তবু সাক্ষাৎ করতে পারে তাদের সঙ্গে। কিন্তু দলিপের জন্য সেই ব্যবস্থারও অনুমোদন নেই। দলিপ কি সুখে আছে? নাকি ওর মতোই সব মেনে নিয়েছে মুখ বুজে? বিলাসব্যসনের লোভে, নামের মোহে সমস্ত মানসম্মান বর্জন করেছে? এই সব প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় ওর দলিপকে। কিন্তু কী এক জড়তায় উচ্চারণ করতে পারে না।
কুপিল্লা নিজেকে দলিপের জায়গায় আর বিদ্যাকে গৌরাম্মার পরিবর্তে বসিয়ে কল্পনায় ডুবে থাকে। আর তো কদিন মাত্র। বিদ্যাকে নিয়ে সে চলে যাবে শহরে। সুখের সংসার হবে তাদের। ছেলেমেয়ের হাসিকান্নায় ঘর ভরে থাকবে। বিদ্যাও কি স্বপ্ন দেখছে না? কুপিল্লা এসে বলে গেছে সব। তার বাবামায়ের কাছে এই প্রথমবার মুখ উঁচু করে এসে বিদ্যাকে প্রার্থনা করেছে। কারুরই আপত্তি করার কিছুই নেই এখন। শুধু দিন গোনার পালা এবার। আর তো এক সপ্তাহ মাত্র। এর মধ্যে শহরে গিয়ে নিজের আস্তানা একটু গুছিয়ে আসতে হবে। বিদ্যাকে কি আর একেবারে শূন্য ঘরে আনা যায়? এসব বুদ্ধি অবশ্য লেনিনই দিয়েছে ওকে। গোপীর থেকে অ্যাডভান্স জোগাড় করে দিয়েছে কথা বলে। একটা খাটবিছানা, আলনা, আলমারি, সংসারের টুকিটাকি, রান্নার সরঞ্জাম, এগুলো কিনে নিলেই হয়ে যাবে। তারপরে বিদ্যা নিজের মনের মতো করে সংসার গুছোবে নাহয়। তাদের নিজের সংসার হবে, অথচ মায়ের আশীর্বাদ ওরা পাবে না, বাবার ছায়া থেকে ওরা চিরবঞ্চিত থাকবে—এটাই যা দুঃখের। বুক ফেটে নিঃশ্বাস উঠে এলো কুপিল্লার।
দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটি বছর ঘুরে গেল। এমিলি আর ড্রুমন্ডের তত্ত্বাবধানে গৌরাম্মা এখন নিখুঁত উচ্চারণে ইংরেজি বলে। সমস্ত আদবকায়দা তার আয়ত্বে চলে এসেছে। হাত দিয়ে সে এখন আর খেতে পারে না। খালি পায়ে হাঁটতে পারে না। শাড়ি প্রায় পরেই না আজকাল। খুব জমকালো পার্টি থাকলে, দেশীয় অভ্যাগতরা আমন্ত্রিত থাকলে শাড়ি পরে কেবল। নইলে সমস্ত ইংলিশ পার্টিতে গাউন আর ওয়াইনের গ্লাস হাতে সে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ায়। দিনে দিনে তার রূপের প্রশংসায়, তার মধুর ব্যবহারে ইংরেজ পুরুষরা তার পাশে মৌমাছির মতো গুঞ্জন করে। বলরুমে একটু হাস্য আর লাস্যে তাদের আগুনকে উস্কে দিয়ে আসে গৌরাম্মা। এই পার্টি, এই সুরা, এই রূপের মোহে সে নিজেও যেমন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে, অন্যকেও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারতে চায়। অবশ্য এই রকম সমস্ত অনুষ্ঠানে দলিপের আসা নিষেধ। সে এই উচ্ছল গৌরাম্মার রূপটিকে চেনে না। প্রাসাদের একান্তে বন্ধুর মতো, আশ্রয়ের মতো চেনে গৌরাম্মাকে। তবে মাঝেমাঝে আজকাল গৌরাম্মাকে কেমন যেন আনমনা দেখে। যেন দলিপের সঙ্গ ওকে আর তেমন টানছে না। এইরকম দিনে দলিপ নিজেকে গুটিয়ে রাখে। কয়েকদিন আর দেখা করে না গৌরাম্মা সঙ্গে। তবে গৌরাম্মাও আবার কয়েকদিনের অদর্শনে দিশেহারা হয়ে পড়ে। নিজেই ডাক পাঠায় দলিপকে। আবার তাদের প্রেম ও বন্ধুত্ব জমে ওঠে। কথা শেষ হতেই চায় না যেন।
গৌরাম্মা একা হলে ভাবে, এই দলিপকে কেন জানি ওর খুব ছেলেমানুষ মনে হয়। এতদিনে তার সমস্ত কাহিনি ওর জানা হয়ে গেছে সবিস্তারে। পাঞ্জাবের শেষ শিখ মহারাজা দলিপ সিং তার পিতা রণজিৎ সিং-এর মৃত্যুর পর পাঁচ বছর বয়সে পাঞ্জাবের সিংহাসনে বসেন। সেই সময়ে তাকে সামনে রেখে তার মা জিন্দ কৌর রাজ্যভার সামলাচ্ছিলেন। কিন্তু প্রথম শিখ-অ্যাংলো ওয়ারের পরে তাকে ও তার মাকে লাহোরে পাঠিয়ে দিয়েছিল বৃটিশরা। এরপরে আবার দ্বিতীয় শিখ-অ্যাংলো ওয়ারের পরে তাকে মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে আনা হয়। সেদিন ছিল ১৮৪৯ সালের ২৯শে মার্চ। তার কিছুদিন বাদেই, ২১শে ডিসেম্বরে স্যার জন লগইনকে তার অভিভাবক ঠিক করা হয়, এরপর তারা ফতেগড়ে চলে যান। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, দেশীয় প্রভাব ও আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে রেখে মহারাজাকে বৃটিশ কালচারে দীক্ষিত করা। সেই সময়ে দলিপের বয়স মাত্র দশ। সেই পাঁচ বছর বয়স থেকে রাজনৈতিক টানাপোড়েনে, মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক বালক ক্রমশ একাকিত্বে ভুগতে থাকে। না হয় তার ঠিকমতো দেখাশুনো, না হয়ছে তার যত্ন। ফলে ভগ্ন স্বাস্থ্যের এই বালককে মাঝেমাঝেই শরীর সারাতে স্যার লগইন মুসৌরির কাছে লন্দৌরে নিয়ে যেতেন। থাকতেন সেখানে টানা কয়েক মাস। ছোটবেলায় এই একজনকেই বন্ধুস্থানীয় পেয়েছিলেন তিনি। আন্তরিক ভাবে যিনি তার খেয়াল রাখতেন। একসময়ে তাদের দেশভাই ভজনলাল, যে কিনা নিজেও খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিল, দলিপকে খ্রিস্টান করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি তার ক্রিসচিয়ানিটির অনুমোদন করেন। শেষ পর্যন্ত ১৮৫৪ সালে পনেরো বছর বয়সে মহারাজা দলিপ সিংকে বৃটেনে নির্বাসিত করা হয়। রানী ভিক্টোরিয়ার বিশেষ প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠে দলিপ। রোহেম্পটনের প্রাসাদে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখান থেকেই রানীর আহ্বানে রানীর কাছে এসেছিল দলিপ। যদিও প্রথম থেকেই রানীর ইচ্ছে ছিল, দলিপ তাঁর কাছেই থাকুক, তাঁর প্রাসাদে। কিন্তু দলিপ সেই সময়ে রাজি হয়নি সেই প্রস্তাবে। সে ভিড় থেকে, জাঁকজমক থেকে দূরে থাকতে চায়—এই অজুহাতে রোহেম্পটনে চলে যায়।
এহেন দলিপকে রানী এখন পার্থশায়ারের শাসনভার দিতে চান। স্যার দলিপ সিং, ব্ল্যাক প্রিন্স অফ পার্থশায়ার—কতকিছু সম্বোধন যে করেন রানী ওর উদ্দেশ্যে! সামনেই ওর জন্মদিন। সেই জন্মদিনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রানী। একদিকে যেমন ভালোও লাগছে গৌরাম্মার, আবার হিংসেয় শরীরের ভেতরে আগুন জ্বলে যাচ্ছে। তার প্রেমাস্পদ স্যার উপাধি পাবে, পার্থশায়ারের মালিক হবে, এ কী কম সুখের কথা! কিন্তু রানীর আদিখ্যেতাও আর সহ্য করা যাচ্ছে না। এদিকে মুখে কিছু বলা তো দূর, মনের ভাবে কিচ্ছুটি প্রকাশ করা যাবে না। গৌরাম্মার একুশ বছর হতে চলল। বয়সের হিসেবে দলিপ তার থেকে কিছুটা বড় হলেও ওকে খুব ছেলেমানুষ মনে হয়। দলিপও তার ওপর এতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, তার আজ্ঞাবহ হয়ে পড়েছে যে, প্রেম ছাপিয়ে একধরনের স্নেহ আর করুণা জেগে উঠছে গৌরাম্মার মনে। তাদের বন্ধুত্বে কোন খাদ নেই, এটা গৌরাম্মা ভালোই বোঝে। কিন্তু প্রেম? বিবাহ? এই নিয়ে দোটানায় থাকে সে। বয়সের তুলনায় অপরিণত একটি ছেলেকে স্বামী রূপে দেখতে তার মন সায় দেয় না। তারও নির্ভর করার মতো একজনকে পেতে ইচ্ছে করে। যার কাছে সে নিজেকে সঁপে দিতে পারবে চোখ বুজে। যার আশ্রয়ে সে মেলে দেবে নিজের ডানা। দলিপকে সেভাবে ও কিছুতেই পাবে না। দলিপের ইচ্ছাশক্তি বা চিন্তাশক্তির ওপর ভরসা করতে পারে না গৌরাম্মা।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন এসেই গেল কুপিল্লার। ওদের বিয়ে তো হলই, ভোজের আয়োজনও করা হয়েছিল সেদিন। অল্প কয়েকজন নিমন্ত্রিত আর গ্যারাজের সবাই হৈচৈ আনন্দে কাটিয়ে দিল দিনটা। রাতে লেনিন ঘর ছেড়ে বারান্দায় আশ্রয় নিল। কথা মতো ওরা তার পরের দিনই রওনা দিল শহরে। এত আয়োজনে, তাড়াহুড়োয় বিদ্যাকে নিভৃতে পাওয়া গেল না, মনে কথা শোনার মতো কান পাতা হল না কুপিল্লার। রাতের বিছানায় অবশ্য শরীরের অপটু খেলায় তারা মেতেছিল, যদিও সবটুকু তোলা রইল নিজেদের বাসার জন্য।

ক্রমশ….

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *