• Uncategorized
  • 0

গল্প – সিলভিয়া ঘোষ

বিদ্যাসাগর২০০/বিশেষ সংখ্যা

ইছামতীর গল্প

অনেক কাল হয়ে গেলো জীবনের চলার পথে বাধা বিঘ্ন সকল পেরিয়ে জ্যোৎস্নার সংসার এখন স্থির দীঘির জলের মতো। মাঝে মাঝে নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখে সত্যি সত্যিই এ সংসারখানা তার তো ! চিমটির ব্যথায় নিজেই হাসে।
তিন বছরের নাতনিটা এসে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে আম্মা আজ পড়াবে না? জ্যোৎস্না হাসতে থাকে।
মনে পড়ে যায় , সেই সব ফেলে আসা দিনগুলোর কথা যেখানে লুকিয়ে আছে জ্যোৎস্নার জীবনের লড়াই , সংগ্রাম। মনে পড়ে যায় পুরোনো গ্রাম, ইছামতী নদী, বাঁশ বাগান, ধানের ক্ষেত। এরপর যা স্মৃতিতে আসে গ্রামের পড়ন্ত জমিদার বাড়ির ছোট গিন্নির আদর আবদারে ফাই ফরমাইশ খেটে, অক্ষরের সাথে প্রথম পরিচয় হওয়া। খাটের উপরে দেওয়ালে টাঙানো একটা ছবির নিচে দাঁড়িয়ে দুহাত জড়ো করে কপালে ঠেকায় প্রণামের ভঙ্গিতে। তার দেখাদেখি নাতনিটাও প্রণাম করে। সেই সময় ভিতর থেকে শুনতে পায় সুর করে ‘সীতার বনবাস’ পড়ার আওয়াজ। ফরিদা বেগম মানে জ্যোৎস্নার মা এতদিনে পড়াশোনার মর্মটা বুঝেছেন। যদিও আগেও বুঝতেন কিন্তু কুসংস্কার আর লোকাচারের ভয়ে জ্যোৎস্না কে জমিদার বাড়ির ছোট গিন্নির কাছে বেশি দিন আর পাঠাতে পারেননি তবু্ও ইছামতী নদীর মতো অদম্য ইচ্ছে শক্তি নিয়ে কর্দমাক্ত জীবন নিয়ে আজ নারী শিক্ষার অন্যতম নাম জ্যোৎস্না। ছোটবেলার বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় যে তার জীবনের মোড়টাই বদলে দিয়েছিল, নইলে স্বামী নামক কসাইটা মেয়ে হবার পর তিন তালাক দিতেই ভেঙে পড়েনি জ্যোৎস্না বরং মেয়ে ফিজাকে কোলে নিয় যোগ দিলো গ্রামের নারী শিক্ষা কেন্দ্রে। তারপর… তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। আজ কলকাতা শহরে এক ডাকে সকলে জ্যোৎস্না কে চেনে। আর জ্যোৎস্না চেনে দেওয়ালে টাঙ্গানো ঐ ছবির মানুষটাকে যাঁর
২৬ সেপ্টেম্বর, জন্ম দ্বিশতবার্ষিকী, নাম ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, যিনি কোনদিন মাথা নত করতে শেখেননি কিংবা শেখাননি। নাতনি নীলম কে তিনি নিজের আদর্শেই গড়বেন। মেয়ে ফিজাকেও তিনিই তো তৈরি করেছিলেন আই পি এস পদের উপযুক্ত করে তুলতে। বাঙালি তথা ভারতীয় নারীরা নব জাগরণের যুগপুরুষ বিদ্যাসাগরের কাছে আজও ঋণী হয়ে আছে, থাকবেও যুগ যুগ ধরে। তাঁদের ছোঁয়ায় বেঁচে থাকবে এমন ইছামতীর গল্পরাও।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।