ট্রেনে বিশেষ ভিড় নেই। অল্পপাতা গাছের ছায়ার মতো লোক। এমন ভিড়েই হকার ওঠে বেশি। মাল বিক্রির সুবিধা। লোকের বোঝার উপর যাদের মাল বিক্রি নির্ভর করে, তারা বিশেষ করে এমন ট্রেনই বেছে নেয়। হকার ও তাদের নানান ভঙ্গিতে মাল বিক্রি দেখতে বেশ লাগে।
এখন আর বিশেষ দেখি না।
শিয়ালদহ যাচ্ছি। ওখান থেকে কলেজস্ট্রীট যাবো। লেখালেখির সূত্রে সপ্তাহে একবার যেতেই হয়। দুপুরবেলা।ক্লান্ত লাগছে। চোখ বুজিয়ে বসে আছি। চোখ বুজালেই নানান কথা মাথার মধ্যে কড়া নাড়ে। সমাজ, দেশ, পৃথিবী – সবার সমস্যা বেড়েই চলেছে। আমরা সবাই বুঝবো কবে?
চোখ বুজিয়েই বুঝতে পারছি হকার যাচ্ছে – আসছে। যারা দাঁড়িয়ে বলছে তাদের কথা শুনতে পাচ্ছি। এমনই একটি হকারের কথা কানে আটকে গেল।
” অপরকে বশ করতে চান? আপনি যা বলবেন তাই শোনাতে চান? আপনার মত অনুযায়ী চালনা করতে চান? তাহলে এই বইটা পড়ুন। এতে এমন কিছু নিয়ম লেখা আছে যা আপনাকে শান্তিতে রাখবে। স্বামী ককথা শুনছে না? বউ-এর সাথে অশান্তি? সব সমাধান এই বই।”
চোখ খুললাম। পাতলা বই। লোকটা ছিপছিপে। ইন করে জামা পরা। মধ্যবয়স্ক একটা লোক নিলো। চামড়া কুঁচকে গেছে। সামনে দুটো দাঁত পড়ে গেছে। বই হাতে নিয়ে দেখছে। ফুলহাতা জামা, দামী বুট। দেখে অফিসার মনে হয়। বইটা নিল। কাঁধে সাইড ব্যাগ, পাঞ্জাবী পরা একটি লোক বইটা হাতে নিল। কমপক্ষে কুড়িটি বই বিক্রি হল।
সংসারে এতো অশান্তি? সবাই অন্যকে বোঝাতে চায়? নিজে বুঝবে না কেউ? ভাবতে ভাবতে আবার চোখ বুজালাম।