অণুগল্পে শুভাশিস দাশ

একাকিত্ব !

দেবজিৎ বাগ । কর্ম সূত্রে বাইরে পরিবার নিয়েই থাকে । জায়গা টা  আলিপুরদুয়ার । সেখানেই  ফ্লাট কিনেছে । দুই ছেলে । বড় ছেলে সুমিত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে আর ছোট ছেলে অমিত  এবার মাধ্যমিক । স্ত্রী লিপি টাউন হাই স্কুলের দিদিমণি । দেবজিৎ রা চার ভাই । তিন ভাই ই বাড়িতে অথচ বুড়ো বাবার যত্ন আর্তি সেভাবে হয় না । মা মারা যাবার পর বাবা একা হয়ে গেছে । আগে তাও দেবজিৎ মাঝে মাঝে গিয়ে বাবার সংগে দেখা করে কুশল নিয়ে আসত এখন ভাইদের কাছে ফোনে বাবার খোঁজ নেয় । দেবজিৎ এর একটা অপারেশনে এখন দেবজিৎ এর গাড়িতে চলা ফেরা করতে অসুবিধা হয় ।
আজ রবিবার তাই অফিসের চাপ নেই । ফ্লাটের ঝুল বারান্দায় ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে সকালের কাগজে চোখ বুলিয়ে একটা খবরে চোখ পড়তেই বাবার কথা মনে পড়ছিল দেবজিৎ এর ।
নেই নেই করেও বছর তিরিশ হয়ে গেলো দিনহাটার বাড়ি থেকে বাইরে । আর এখন তো আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা ।
দেবজিৎ অবশ্য ভাইদের দোষ দেয় না , কেননা সবাই এখন ব্যাস্ত । আর ভাই বৌ রা ? কী আর বলবে নিজের বৌকে দিয়ে বুঝে যায় দেবজিৎ । আসলে সেবা যত্ন পাবার একটা কপাল দরকার । হয়তো বাবার সেটা নেই নইলে মা র তো মরার কথা নয় । বয়স অনুযায়ী বাবাই আগে যাবার কথা । তবু রক্ষে শেফালী কে পেয়ে । নিজের সংসার ছেড়ে দুটো পয়সার জন্য সেবা যত্ন টা যে করছে তার তুলনা হয় না । ওর একটু আলাদা মন আছে । দেবজিৎ বাড়ি এলে বাবার কাছে বসে । অনেকবার শেফালীকে দেখেছে কেমন নিজের মতো করে বাবাকে স্নান করিয়ে দেয় ।প্রায় একশ ছুঁই ছুঁই বয়সেও বাবা নিজে হাঁটেন , কাগজ পড়েন । শেফালী বাবাকে মেসো বলে ডাকে ।
এই শীতে বাবার কষ্ট হয় । রোদ্দুর উঠলে তাও একটু বাড়ির উঠোনে পায়চারি করে নইলে সেই দমবন্ধ ঘরেই ।
শেফালী না এলে সত্যিই সেদিন বাবাও কেমন মন মরা হয়ে বসে থাকে । এটা দেবজিৎ জানে ।
হটাৎ সেল ফোন টা বেজে উঠলো । অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো ছোট ভাই সুরজিৎ এর কণ্ঠ । হ্যালো দাদা ? বাবাকে দিনহাটা হাসপাতালে নেয়া হয়েছে , ডাক্তার বাবু দু ঘণ্টা সময় দিয়েছেন । তুই চলে আয় ।
দেবজিৎ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো । কী জানি বাবার একাকিত্ব বোধহয় ভগবান দেখতে পারছেন না ! ফ্লাটের ঝুল বারান্দার গ্রিলে তখন একটা অশুভ কাক ডেকে উঠলো ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।