• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক শিল্পকলায় “কানাডার শিল্পী Lawren Stewart Harris”- লিখেছেন আলবার্ট অশোক (পর্ব – ৮)

যা দেখি সত্যই দেখি সত্যকে বানাইয়া দেখি

কাঁচের মতন পরিস্কার ছবি। ফটোগ্রাফ তুললে এত ভাল লাগত? না।
শিল্পীদের একটি কাজ হল চিত্তবিনোদন দেওয়া। অর্থাৎআপনি যাই আঁকুন তা যেন চোখের কাছে মনোরম মনে হয়।ফলে শিল্পীরা সত্য বাস্তবকে এমন ভাবে ভেঙ্গে নেন, যা দেখে সত্য কি তা ধরা পড়ে আবার আকর্ষনীয় ও গ্রহনযোগ্য হয়। খুবই কঠিন কাজ।
দৃশ্যনন্দন আজ কিছু অ্যাবস্ট্রাক্ট ছবি দেখাব, বাংলার ফাইন আর্টসের চর্চাকারীদের। ছবি ভাস্কর্যের আন্দোলনগুলি, সার্থক শিল্পীদের প্রতিষ্ঠাগুলি একএকটা সার্থক আন্দোলন। এই আন্দোলন ছবির মাধ্যমে শিল্পের মাধ্যমে নান্দনিকতা ও উন্নত ভাবনায় পৌছানোর সিঁড়ি। এক একটি তাত্ত্বিক দিক মানুষের মেধার সৃষ্টি। এবং সমাজ রাস্ট্রকে নতুন পথ দেখায়। সুতরাং চর্চা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা শকটের চক্রের মত সময় সরণী ধরে পাশাপাশি এগিয়ে চলুক। এই চলার সাথে মাইলস্টোন পুঁতে পিছনের দিকে তাকিয়ে যা করা হয়েছিল, সার্থক অতীতের শিল্পীদের কাজ, আরেকবার দেখা দরকার। এগিয়ে যাওয়া আর অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া একমাত্র কৌশল সার্থকতা আবিষ্কারের।
কানাডার শিল্পী Lawren Stewart Harris, জন্ম 23 October 1885, Brantford, Canada মৃত্যু Died: 29 January 1970, Vancouver, Canada তিনি কানাডার সরকার (বা রাজতন্ত্রের শীর্ষক্ষমতার অধিকারিনী রাণীর ) এর শ্রেষ্ঠ সম্মান Companion of the Order of Canada. পান। এই সম্মানটি কানাডার নাগরিক জীবনে যারা সারাজীবন উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন তাদের দেওয়া হয়।

অ্যাবস্ট্রাক্ট abstract আর্ট। আমি অনেককেই দেখেছি, মানেটা বুঝেননা। অথচ, অভিধানগুলিতে পরিষ্কার লেখা আছে মানে। মানুষ এত নির্জীব হয়ে পড়ছে তাদের খাইয়ে না দিলে, তারা খেতে পারেনা। তো এরকম গুরু রাশির নাগরিকদের নিয়ে একটা জাতি অবলুপ্তির পথে। abstract মানে সম্পূর্ণ চেহারাটা বা ছবিটা দেখতে পারছেননা। কেউ গল্প বললে আপনার একটা ধারণা হয়। এই ধারণা কিন্তু পরিষ্কার নয়। ঝাপসা। কিন্তু আপনি আইডিয়া করে এগুতে পারছেন। abstract আর্ট হল আলোকচিত্রের মত বাস্তবিক পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেননা।
কিছু জিনিসের প্রতিমা হয়না। আপনাকে দূর্গা কালী, গাছ, বাড়ি মানুষ বললে আপনি পরিষ্কার ছবি চোখে ভাসাতে পারেন। যদি বলি স্নেহ, মমতা, ফুলের মাদকতা, যুদ্ধের ভয়াবহতা, – আপনি অন্যভাবে আপনার অভিজ্ঞতা দিয়ে দৃশ্যটা আঁকবেন। ফাইন আর্ট দুভাগে সাধারনতঃ ফিগারেটিভ বা নন ফিগারেটিভ বা abstract । কে কিভাবে এই অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট অভিব্যক্ত করে ও দর্শক গ্রহন করে তা সেই সময়ে বোঝা যায়।
আমি এখানে Lawren Stewart Harris কে আমাদের শিল্পীদের কাছে উদাহরণ হিসাবে রাখছি। যে এই কানাডিয়ান শিল্পী যে নান্দনিকতা গড়ে তুলেছেন তার বিমূর্ত ধারার ছবিতে তা প্রশংসনীয়। সরাসরি একটা প্রাকৃতিক অঞ্চলে গিয়ে একটা আলোকচিত্র বা ফটোগ্রাফ নিলে হয়ে যায়। একজন শিল্পীকে ফটোগ্রাফের মত আঁকলে তার খরচ অনেক পড়ে। লোকে ফটোগ্রাফ অল্প পয়সায় কিনবে। শিল্পী আলোকচিত্রের সাথে অস্তিত্ব লড়াইয়ে এল। সে এমন করে ওই অঞ্চলের ছবিটা তার মত করে- ডিজাইন করে, প্যাটার্ণ করে, রং দিয়ে বানালেন যে মানুষ চোখের প্রলোভন সামলাতে না পেরে আলোকচিত্র ছেড়ে অনেক টাকা দিয়ে শিল্পীর কাজটি সংগ্রহ করেন। এখানেই শিল্পের জয়যাত্রা। সত্যকে নিজের চোখে স্ক্যান করে নাও, তারপর সত্যকে নিজের মর্জি মতো বানিয়ে দর্শককে পরিবেশন করো। দর্শক বাস্তব দেখতে দেখতে ক্লান্ত, তাকে আনন্দ দাও, মজা দাও, সত্যকে দাও। ল্যান্ডস্কেপের ছবি ওই জলরংযে ব্রিটিশদের শেখানো জিনিস – এখন ১০০ বছর পর আর্ট হিসাবে ধরতে কষ্ট হয়। আপনারা অনেকে দেখেছেন প্রবাদ প্রতিম শিল্পী প্রকাশ কর্মকার তার ল্যান্ডস্কেপের ক্যানভাস নিয়ে ২০০২ সালে গ্যালারী ৮৮ এ প্রদর্শণী করেছিলেন। জাদুকরের জাদুদন্ডও হার মেনে যাবে, ওই ছবির সামনে দাড়ালে। রবি ঠাকুর প্রথাগত ছবি আঁকা শেখেননি, কিন্তু তার মেধায় একটি ল্যান্ডস্কেপের ছবিকে অসাধারণ দ্ব্যর্থক বা চোখের ভ্রম সৃষ্টি করেছিলেন। ফাইন আর্ট এর ছাত্র ছাত্রীরা কলেজে পেইন্টিং অভ্যাস ছাড়া বিভিন্ন ছবির বিশ্লেষণ বা মাহাত্ম্যর কোন বক্তৃতা পাননা। তারা সিলেবাস টুকু দায়সারা গোছের তেতো বড়ি হিসাবে খায়। যদি সত্যিই আর্ট কলেজগুলিতে কিছু শেখাত আপনার কি মনে হয় বাংলার শিল্পের আকাল আসে? বৃক্ষাণি ফলেন পরিচিয়তে। গাছে ফল না ধরলে সেটা গাছের মতন দেখতে । গাছ নয়। আমিও ভাবছি, কলেজে যোগ্য স্যার নেই। সার্টিফিকেট অর্জন করা কিছু পুতুল সাজানো।
Lawren Stewart Harris একটা নতুন দিশা দিয়েছিলেন। তিনি উত্তর আমেরিকার উত্তরের দ্বীপ সমুদ্র নিসর্গ চিত্রকে তার খুশী মনের মজার চিত্র দিয়ে দর্শকের মন রঞ্জিত করেছিলেন। বলা বাহুল্য তার ছবি অনেক মূল্যে নানা মিউজিয়ামে সংগৃহিত।
জীবনী
লরেন স্টুয়ার্ট হ্যারিস সিসি (Lawren Stewart Harris CC) (অক্টোবর ২৩, ১৮৮৫ – জানুয়ারী২৯,১৯৭০) কানাডিয়ান চিত্রশিল্পী ছিলেন। তিনি অন্টারিওর ব্রান্টফোর্ডে (Brantford, Ontario)জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কানাডিয়ান চিত্রকলার স্বতন্ত্র নেতৃত্বদানকারী গ্রুপ অফ সেভেনের সদস্য হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত।এ ওয়াই জ্যাকসনের মতে যে হ্যারিস গ্রুপ অফ সেভেনের অনুপ্রেরণা ছিলেন। ১৯২০ এর দশকে, হ্যারিসের কাজগুলি আরও বিমূর্ত এবং সরল হয়ে উঠল, বিশেষত কানাডার উত্তর এবং আর্কটিকের (Canadian north and Arctic) তার চমত্কার প্রাকৃতিক দৃশ্য। তার কাজ সম্পর্কে লরেন হ্যারিস এতই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, তিনি তাঁর কাজগুলিতে স্বাক্ষর করা এবং ডেটিংও বন্ধ করে দিয়েছিলেন যাতে লোকেরা তাঁর রচনাগুলি শিল্পীর দ্বারা বা তাদের আঁকা যখন নয় তাদের নিজস্ব যোগ্যতায় বিচার করে। ১৯৬৯ সালে, তাকে কানাডার জাতীয়স্তরে দ্বিতীয় সম্মান দিয়ে সম্মানিত করা হয়। In 1969, he was made a Companion of the Order of Canada The Order of Canada (French: Ordre du Canada) is a Canadian national order and the second highest honour for merit in the system of orders, decorations, and medals of Canada, after the Order of Merit.
টমাস মরগান হ্যারিস (Thomas Morgan Harris) এবং আন্না স্টুয়ার্টের (Anna Stewart) পুত্র, হ্যারিস ছিলেন ‘ম্যাসে-হ্যারিস’ সৌভাগ্যের (Massey-Harris fortune) উত্তরাধিকারী। পরিবারের সম্পদ এবং মর্যাদা হ্যারিসকে সৌভাগ্যশীল যুবক হিসাবে নানা সুবিধা দেয়, যা তাকে তার চিত্রকর্মের দিকে মনোনিবেশ করার সাহস যোগায়। তিনি সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল স্কুল এবং সেন্ট অ্যান্ড্রু কলেজে (Central Technical School and St. Andrew’s College) পড়াশোনা করেছেন। ১৯ বছর বয়স থেকে (১৯০৪ থেকে ১৯০৮) তিনি বার্লিনে পড়াশোনা করেছেন। তিনি দর্শনে এবং প্রাচ্য-ভাবনায় আগ্রহী ছিলেন। পরে, তিনি থিওসফিতে (আধ্যাত্মবিদ্যায়)জড়িত হন এবং আন্তর্জাতিক থিওসোফিকাল সোসাইটির টরন্টো লজে যোগ দেন। ১৯১০ সালের ২০ শে জানুয়ারি লরেন বিট্রিস (ট্রিক্সি) ফিলিপসকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের বিয়ের প্রথম দশকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনটি সন্তান (লরেন পি। হ্যারিস, মার্গারেট অ্যান হ্যারিস, হাওয়ার্ড কে হ্যারিস)। ১৯১১ সালে জে.ই এইচ ম্যাকডোনাল্ডের সাথে দেখা ও বন্ধু হওয়ার পরে তারা একসাথে বিখ্যাত গ্রুপ অফ সেভেন (Group of Seven) গঠন করেছিল। তিনি বন্ধু জেমস ম্যাককালামের সাথে টরন্টোতে একটি স্টুডিও ভবন নির্মাণের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন। স্টুডিওটি শিল্পীদের সস্তা্য বা বিনামূল্যে স্থান দিয়েছিল কাজ করার জন্য।
প্রেম এক সুন্দর ও অমোঘ আকর্ষণ। হ্যারিস তার স্কুল-সময়ের বন্ধু এফ.বি.( F.B. Housser.)-এর স্ত্রী বেসের প্রেমে পড়েন। প্রেমে পড়ে হ্যারিস ও বেস বড় উদ্বেগে পড়েন,, তাদের সামনে কোন সুন্দর পথ ছিলনা। দু’জনের জন্য তাদের স্ত্রী / স্বামীকে তালাক দেওয়া এবং আবার বিবাহিত হওয়া অশান্তির কারণ হয়ে উঠার কথা।সামাজিক গন্ডোগোল অবশ্যাম্ভাবি।
অবশেষে হ্যারিস তার বিবাহিত ২৪ বছরের স্ত্রী ট্রিক্সি এবং তার তিন সন্তান রেখে ১৯৩৪ সালে বেস হউসারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। দুটি বিয়ের কারণে হ্যারিসকে ট্রিক্সির পরিবার হুমকি দেয়। সেই বছরের পরে তিনি এবং বেস তাদের বাড়ি ছেড়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। ১৯৪০ সালে তারা ভ্যানকুভার, ব্রিটিশ কলম্বিয়া চলে এসেছিল। বেস ১৯৬৯ সালে মারা যান।
হ্যারিস একজন বিখ্যাত শিল্পী হিসাবে, ৮৪ বছর বয়সে, ১৯৭০ সালে ভ্যাঙ্কুবারে (Vancouver) মারা যান। তাকে ম্যাকমিশেল কানাডিয়ান আর্ট কালেকশনের জমিতে সমাধিস্থ করা হয়েছিল, যেখানে তাঁর কাজ ্রাখা আছে।
২০১৬ সালে হ্যারিসের জীবন সম্পর্কিত একটি চলচ্চিত্র,Where the Universe Sings টিভি অন্টারিও প্রযোজনা করেছিল। এটি চলচ্চিত্র নির্মাতা পিটার রেমন্ট তৈরি করেছিলেন এবং ন্যানসি ল্যাং পরিচালিত।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *