দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেছে প্রায়। যারা স্নানের জন্য সমুদ্র গিয়েছিলো তারাও আস্তে আস্তে খাবার জায়গায় চলে আসছে। রান্নার জায়গা আর হোটেলের মাঝখানে বেশ কিছুটা ফাঁকা মাঠের মত জায়গা, সবুজ ঘাস, গাছ দিয়ে ঘেরা, চেয়ার পাতা। চেয়ারের সঙ্গে ছাতা লাগানোর ব্যবস্থাও আছে। হাওয়া বইছে শনশন করে। রোদও খুব একটা নেই। রেস্তোরাঁর ভিতরে বসে খাওয়ার চাইতে বাইরে বসে খাওয়ার আনন্দটাই দারুণ। পাহাড়ের নানান হোমস্টেতে বাড়ির রান্নার স্বাদ আর বাইরের প্রকৃতির মধ্যে বসে খাবার মজাই আলাদা। কেরালার কোভালাম কিম্বা ভারকালা সমুদ্র সৈকতে প্রায় প্রত্যেকটা হোটেলের সামনেই বাইরে বসে খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। গোয়ার সমুদ্র সৈকত গুলোতেও তাই। দীঘা বা পুরীর সমুদ্রের ধারের বিশেষ কিছু হোটেলের বাইরে, কিম্বা রুফ টপে বসে খাবার ব্যবস্থা রয়েছে, তার বেশী কিছু নয়।
এই হোটেলটিতে যেহেতু অনেকটা জায়গা রয়েছে, তাই বল্টুদা বাইরেই দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে বললেন। চেয়ার পরপর সাজিয়ে দেওয়া হলো। খাবারও সাজিয়ে রাখা হলো। যে যার নিজের মত খাবার নিয়ে চেয়ারে বসে যাচ্ছে। সুন্দর পরিবেশ। বল্টুদা ঘুরে ঘুরে খাবারের তদারকি করছেন। একদিকে গুহ দা,বৌদি, কানাই, বৌদি,খেতে খেতে এই সদ্য হয়ে যাওয়া চুরির ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করছেন। নদীর কথা মনে আছে তো? নদী এসে যোগ দিলো আলোচনায়। নদীর বুদ্ধি তীক্ষ্ণ। চিন্তাশক্তি প্রবল। বৌদিকে ঘুঁজতে গিয়ে গতকাল থানায় গিয়েছিলো নদী। তারপর ফেরার পথে দোকানে জুত কেনার সময়ের অদ্ভুত ঘটনা, তার ও সাক্ষী নদী। তাই খাবারের সময় তাদের আড্ডায় চুরি নিয়ে আলোচনা হবে এটা স্বাভাবিক। বৌদি নদীকে কানাই এবং গুহ বাবুর ঘটনাগুলো খুলে বললো।
পরপর এমন ঘটনা ঘটে যেতে থাকলে অনেকেই আশ্চর্য হবে। নদীও হলো। মাত্র দু দিনের মধ্যে তিন তিন জোড়া জুত চুরি, তাও আবার ঘুরতে আসা একটি দলের মধ্যে থেকে, অবাক হবারই কথা। এটা সাধারণ জুত চুরি না এর মধ্যে মিশে আছে অন্য কিছু? এটাই নদীকে ভাবাচ্ছে।
খাবারটা বেশ দারুণ ছিলো। উপাদেও সব আইটেম।বল্টুদার সকালের বাজার দেখেই আন্দাজ করা গিয়েছিলো যে দুপুরের খাবার কেমন হতে পারে। খাবার পরে আবার ঠান্ডা পানীয়ের ব্যবস্থা রাখেন বল্টুদা। অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চেয়ার টেবিল গুলোতে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কেউ তাস খেলছেন। কেউ বা আবার ঘরে ফিরে গেছেন কিছুক্ষনের বিশ্রামের জন্যে।
বল্টুদা বাসের ড্রাইভার কানাইয়ের সঙ্গে ব্যস্ত, আগামীকাল পুরীর চারপাশে ঘুরতে নিয়ে যাবেন দল কে। কথা বলে নিচ্ছেন। গাড়িতে তেল ভরতে হবে। সেই বাবদ কিছু টাকাও দিতে হলো কানাইকে। সকালের খাবার প্যাক করে নিয়ে যেতে হবে, রান্নার ঠাকুরকে ডেকে বলে দিলেন বল্টুদা। সকাল আটটার মধ্যেই গাড়ি ছেড়ে দেবে। এর বেশী দেরি করা যাবে না। পুরীর সেই চেনা বেড়ানোর জায়গাগুলো। কোনার্ক,নন্দনকানন,উদয়গিরি,খন্ডগিরি এসব। গুহ দা প্রথমবার দেখবেন। গুহ দার উৎসাহ সব চাইতে বেশি। বাকীরা এর আগে অনেকবার দেখলেও বাঙালির কাছে প্রতিবারই নতুন করে দেখা দেয় পুরী।
বৌদি আর নদীর মধ্যে কথা হচ্ছে। রহস্য জটিল। কিছু একটা করা দরকার। বৌদি থানার গরাদে থাকার রাগটা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। বৌদির জলতেষ্টা পেয়েছে। রান্নার দায়িত্বে যারা আছে তাদেরকে ডেকে জল নিয়ে আসতে বললেন বৌদি। একটি মাঝারি হাইটের ছেলে জল দিয়ে গেলো বৌদির কাছে। জল রেখে চলে যাচ্ছে, বৌদির চোখ হঠাৎ চলে গেলো ছেলেটির দিকে। সাংঘাতিক চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু বেড়ানোর দলের সঙ্গে ছেলেটি আসেনি বৌদি শিওর। কিছুতেই ছেলেটিকে মনে করতে পারছে না কোথায় যেন দেখেছে। অস্বস্তি বাড়ছে বৌদির। নদীকে কথাটা বললেন বৌদি। নদী উঠে গিয়ে বল্টুদার কাছে ছেলেটি সম্পর্কে খোঁজ নিলো, ছেলেটি কে?
বল্টুদা নিজেও কেমন জানি অপ্রস্তুতে পরে গেলেন। ছেলেটিকে ঠিক চিনতে পারলেন না। কিন্তু আজ দুপুর থেকে তাকে খাবারের এখানেই দেখছেন বল্টুদা। বল্টুদা এই সময় এক কাজ করলেন। সরাসরি ছেলেটিকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন যে কোথা থেকে এসেছো? এখানে কেন?
ছেলেটি ঘাবড়ে গেছে খুব এমনটা নয়। ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিলো, লজের মালিক তাকে রেখেছে হোটেলের কাজে। আজকেই প্রথম কাজে যোগ দিলাম। মালিক বলেছেন আপনাদের হাতে হাতে কাজ করে দিতে, তাই এখানে এসেছি।
বৌদি শুনলেন কথাগুলো। কিন্তু কিছুতেই বৌদির মন থেকে খচখচানি টা দূর হচ্ছে না। কোথায় যেন দেখেছেন বৌদি ছেলেটাকে।