বাসের ড্রাইভার কানাইয়ের ঘটনা শুনে গুহদা অবাক। বল্টুদা যে স্তব্ধ হয়ে যাবেন সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। গুহদার বৌ পাশে এসে বসেছেন। গুহদা শুরু করলেন বলতে…
” চারিদিকে কি যে অবস্থা হচ্ছে কি বলি। গতকাল আপনার মিসেসের জুতো চুরি হলো,তারপর কত কান্ড, বিষয়টা বেশ ভাবিয়ে তুলেছিলো। কিন্তু সত্যি বলতে কি জুতো চুরি নিয়ে ভাবিনি ওতটা। এখন কানাইয়ের মুখে এমন কথা শুনলাম। কি কান্ড। ওদিকে হয়েছে কি, আজ সকালে আমি আমার বৌকে নিয়ে গিয়েছিলাম সমুদ্রের পাড়ে। পাশে বসে ছিলো গুহদার বৌ, তার দিকে তাকিয়ে বললেন গুহদা, আসলে জানেনই তো এটা আমাদের প্রথম বেড়ানো। বিয়ের প্রায় পয়ত্তিশ বছর পর হনিমুন যদি বলেন,তবে তাই। বলেই গুহ দা মিচকি একটু হাসলেন বৌয়ের দিকে তাকিয়ে। তারপর আবার বলতে শুরু করলেন….আসলে হয়েছে কি একা একা আমরা চারপাশে হেঁটে বেড়াই। সমুদ্রে যে খুব একটা নামি,তেমন নয়,বরং সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে মাইলের পর মাইল হেঁটে যাতে দারুন লাগে।
তো আজ সকালেও হাঁটছিলাম সমুদ্রের পার দিয়ে। কি সুন্দর চারদিক। কত মানুষ ভোর না হতেই সমুদ্রে স্নান করতে নেমেছে। সমুদ্রের ধারে এত মানুষ, যেন ছোট্ট একটা ভারতবর্ষ। হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে এসেছি,সেটা খেয়ালই করি নি। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি পিছন দিকে ঝাউ গাছের সারি, আর সামনের দিকে মাছ ধরার একের পর এক নৌকা দাঁড়িয়ে আছে। অনেক লোক দেখলাম মাছ ধরতে সমুদ্রে নেমেছেন। পারে এসে নোঙর করেছে ছোটো ছোটো ট্রলার। মাছ ধরে এনেছে তারা। লম্বা জাল নামানো হচ্ছে ট্রলার থেকে। একটা বাঁশের মধ্যে জাল রাখা,সামনে পিছনে দুজন টানছে জালটা।,আর প্রচুর মাছ। এখান থেকেই মাছ বাজারে যাবে।
তো লোভ লেগে গেলো জানেন। এমনিতে আপনি খাওয়ার ব্যবস্থা দারুন করেছেন। সারাক্ষনই তো খেয়েই যাচ্ছি। তবুও ওই আর কি। এরকম টাটকা মাছ দেখে লোভ সামলাতে পারলুম না। গেলাম কিনতে মাছ। পায়ের জুতো খুলে দুজনেই এগিয়ে গেলাম ট্রলারের দিকে, ট্রলার থেকে এক জায়গায় জাল নামিয়ে মাছ রাখা রয়েছে। চারিদিকে জল। সেজন্যেই জুতো খুলে প্যান্ট উঠিয়ে গিয়েছি মাছ কিনতে। খুব ভালো কয়েকটা পমপ্লেট কিনে নিলাম। পাশে দু – তিনটে চায়ের দোকান আছে, ওরা মাছ ভেজে দেয়, বেশ আরাম করে পমপ্লেট ভাজা আর চা খাবো,এটাই মনে মনে ভাবছি।
মাছ কিনে আমার বৌ আর আমি উঠে আসছি পাড়ের দিকে, আশ্চর্য, জুতো নেই। দুজনের জুতোই নেই। তারপর প্রায় ঘন্টাখানেক খোঁজাখুঁজি চললো। কোত্থাও নেই। কেউ বলতে পর্যন্ত পড়লো না। “
বল্টুদা যত শুনছেন তত অবাক হয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ঘুম ভেঙে বৌদিও এসে যোগ দিয়েছেন সকালের আড্ডায়। তিনিও শুনলেন সবটা। অবাক হলেন না খুব। বুঝতে পারলেন এর পিছনে গভীর চক্রান্ত রয়েছে। এবার আর ঘরে বসে থাকা নয়। রহস্য উন্মোচনে নামতে হবে তাকে।