ছোট গল্পে বিশাখা বসু রায়

রাতের অতিথি

গ্রীষ্মকাল, ক্যাজুয়ালটি-তে নাইট ডিউটি পড়েছে |
রাত আটটায় পৌঁছিয়ে গেলাম |
আগের ডাক্তার কে ছেড়ে দিয়ে, নিজে গুছিয়ে বসলাম |
পর পর দু চারটে রুগী এলো, তাদের যথাযত চিকিৎসা করে বসতে বসতে রাত দশটা |
হাজিরা শুরু হলো গ্রুপ ডি স্টাফদের,
আমার সঙ্গে থাকবে মুরারিদা আর গোবর্ধন |
বাকিরা সব বিভিন্ন ওয়ার্ড- এ চলে গেলো |
মুরারিদা বললেন, :: দিদি, এবার খেয়ে নিন, তারপর বিছানা টা গুছিয়ে দেবো |
গোবর্ধন ঘর, বাথরুম পরিষ্কার করে নিজের নির্দিষ্ট ঘরে চলে গেলো|
আমিও রাতের খাবার সেরে নিলাম |
মুরারিদা এবার আমাদের ডক্টরস রুমের বিছানাটা পরিষ্কার করে মশারি টাঙিয়ে দিলো,
দিয়ে নিজের নির্দিষ্ট ঘরে চলে গেলো |

চতুর্দিকে অন্ধকার, একমাত্র ক্যাজুয়ালটি ব্লকে আলো জ্বলছে,
সিকিউরিটি গার্ডরা ক্যাজুয়ালটির গেট বন্ধ করে পাশে বারান্দায় বিশ্রাম নিতে বসলো |
পেশেন্ট এলে গেট খুলবে |
আমি চিরকালই বই এর পোকা, সঙ্গে বই থাকে সবসময় !
নিরিবিলি তে বেশ গুছিয়ে বই পড়তে বসলাম |
মাঝে টুকটাক দু একটা রুগী দেখে ছাড়লাম |
দেখতে দেখতে মধ্যরাত |

ভাবলাম একটু টানটান হয়ে নিলে ভালো হয়|
ভোর থেকে হাজিরা শুরু হয়ে যাবে,
প্রথমে রান্নাঘরের লোকজন,
তারপর ছ ‘টার শিফটের লোকজন |
আমি তো সকাল আটটার আগে ছাড়া পাবোনা,
আর আটটা মানে তো আটটা দশ পনেরো ও হতে পারে |
আবার ন’ টা থেকে আউটডোরে বসতে হবে,
একটু বিশ্রাম করে নেওয়া ভালো !

ডক্টরস রুমটা একদম ক্যাজুয়ালটি রুমের লাগোয়া,
মাঝের দেওয়ালটা পুরোপুরি ছাত অবধি পৌঁছোয়নি|
আগেকার দিনের উঁচু ছাত,
তাও দেওয়ালটা আট ফুট তো হবেই |
ওই ঘরের আলো এই ঘরে এসে পড়ে !

উঠে পড়লাম লোহার খাটে, মশারি গুঁজে নিলাম |
আলো নেভানো, কিন্তু পাশেই ক্যাজুয়ালটি রুমের আলোতে ঘরটাতে একটা বেশ আলোছায়া পরিবেশ |
পা দুটো মশারি তে ঠেকে আছে|
এমনিতে নাইট ডিউটিতে কাজ না থাকলেও আমার বিশেষ ঘুম হয়না |
সব সময় টেনশন হয়, কখন রুগী এসে পড়ে !
সামান্য আওয়াজে মনে হয়ে এই বুঝি রুগী এলো !

কখন চোখ লেগে গেছে জানিনা,
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো,
মনে হলো পায়ে, বুড়ো আঙুলের তলায় কেউ টোকা মারছে !
উঠে এদিক ওদিক দেখলাম,
কিন্তু কোথায় কি,
কেউ তো নেই !
আর থাকবেই বা কে, দরজা তো বন্ধ !

মনের ভুল ভেবে আবার শুয়ে পড়লাম,
চোখ লেগে গেলো,
কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ বাদে আবার সেই পায়ের বুড়ো আঙুলে টোকা!
কি হচ্ছে ব্যাপারটা? বোঝার চেষ্টা করলাম!
না, কিছুই তো বুঝছি না !
দেওয়াল টপকে তো কেউ আসতে পারবে না,
আর এলেই বা, সে যাবে কোথায়?
এবার ঠিক করলাম, আর ঘুম নয়,
জেগে থেকে দেখতে হবে, ব্যাপারটা কি হচ্ছে !
এমনিতেও ঘুম তো চটকে গেছে !
আগের মতোই পা -টা টানটান করে মশারির গায়ে ছড়িয়ে দিলাম !
সজাগ দৃষ্টিতে পায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম,
বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলো,
কোনো সমস্যার দেখা নেই,
ভাবছি তাহলে কি মনেরই ভুল?
হঠাৎ দেখি বুড়ো আঙুলের পাশ দিয়ে কি একটা উঁকি মারছে !
দেখি, একটা মস্ত বড় টিকটিকি,
মুখ বাড়িয়ে আমার বুড়ো আঙুলে ঠোক্কর মারতে উদ্যত !
আমার পা নড়ে উঠতেই সে চট করে খাটের নীচে উধাও হয়ে গেলো !
আর তাকে দেখতে পেলাম না !

নিজের মনে খানিকটা হাসলাম!
বেচারা বোধহয় আমাকে ভয় দেখাতে এসেছিলো,
ধরা পড়ে পালালো !

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।