সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে পূর্বা দাস (পর্ব – ১)
অমরত্বের আগে
পর্ব – ১
দু-দুটো রঙিন প্রজাপতি নাচতে নাচতে পেরিয়ে যাচ্ছে ঢালু পাহাড়ি রাস্তা। বিকেলের পড়ন্ত আলোতেও লালের ছোপ ওদের গালে, গলায়। ওদের হাসি আর কথায় সিগমাই নদীর উচ্ছ্বাস। উপত্যকা ভূমি মনিপুরের এসব ছোট ছোট গ্রামগুলো যেন অমরাবতীর এক একটা টুকরো। একটা বাঁক পেরোতেই হঠাৎ পা থেমেছে একজনের। সঙ্গিনীর হাতে ঝটকা দিয়ে ভয়ার্ত ফিসফিস, ‘হাসি থামাও; দ্যাখো ওদিকে – অ্যাবক থারো।….” অন্যজনও এমন চমকেছে যেন ভূমিকম্প শুরু হলো এক্ষুনি। দুজনের অপলক দৃষ্টি কয়েক মুহুর্ত স্থির ভুট্টা ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া ন্যুব্জ দেহটির ওপর। তারপর কিছুই হয়নি এমনি ভাবে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলো দুজনে। কিশোরী মেয়েদুটির মুখে এখন সন্ধ্যার গাঢ় অন্ধকার। ওদের মধ্যে বড় টি বলল, দেখেছো ওর আঙ্গুলগুলো? কি রকম ক্রস করে রেখেছে! ভগবান জানে, এবারে কার পালা।” বয়সে একটু ছোট অন্য মেয়েটি যেন কিছুই দেখছে না এমনভাবে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে, আতঙ্কে নীল হয়ে যাওয়া ঠোঁট খুলে শুধু বলল, “ডাইনি কোথাকার!”
অ্যাবক থারো। গ্রামের সবথেকে প্রাচীন মেয়েমানুষটি। ভুট্টা ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে নিজের অতিবৃদ্ধ দেহের ভার টেনে টেনে ভীষণ কষ্টে হেঁটে যাচ্ছিল তখনও। মেয়েদুটির ভীত চাহনি আর সামান্য গুঞ্জন হয়তো ওর কানে এসে থাকতে পারে, কিন্তু এসব ছোট চারা গাছ গুলির উপর কোনদিনই মনোযোগ ছিল না ওর। একইভাবে পা টেনে টেনে একবারও না থেমে থারো ভুট্টাক্ষেত পেরিয়ে খেলার মাঠে পৌঁছে গেল। রোদ্দুর পড়ে গেছে।বাচ্চারা যে যার ঘরে। খা খা করছে মাঠ। প্রায় ফাঁকা হয়ে আসা রাস্তাঘাটে শুধু দু একটা ঝাপলা লোমওয়ালা কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। থারোর কমজোরী দৃষ্টিতে অভীষ্ট গৃহটি এবার স্পষ্ট। সবুজ রং করা টিনের দরজার পাশেই উজ্জ্বল ল্যাম্পপোস্টে একটা হাত রেখে একটু বিশ্রাম নিল সে। সবুজ রং গেটের ভেতরের বাড়িতে এখন চমৎকার সাংসারিক ব্যস্ততা। বাড়ির মানুষজন জানতেও পারলো না কখন অ্যাবক থারো গেট খুলে ঢুকে পড়েছে ছোট্ট বাগানটাতে।