বর্গী শব্দটিতে ‘বর্গীয় জ’ না থাকলেও জোরালো তুলির টানে একটা মিসিসিপি নদীর টান থাকে বৈকি। ছোটোদের চোখে আলিবাবা আর চল্লিশ চোরের ছবি উঁকি মারে যখন-তখন,এই তো হাতে ইয়াব্বড় খোলা তলোয়ার।দস্যি ছেলে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে মায়ের বুক ঘেঁষে। ঘুমিয়েছো সমাজ? তাহলে চুপিচুপি বলবো ছড়াকারের এখন জাগার সময়। মুখোমুখি বসুন ছড়াকার, দুটো কথা কই।রসুন বোনার সময় এসেছে, বাংলা কবিতায় আর স্থলের অভাব নেই, জল কমেছে – রস কমেছে, এখন তিনভাগ স্থল, আর বাকি এক ভাগ জলের অর্ধেকটা টেবিলের তলায় সেঁধিয়েছে আর বাকি অর্ধেক অপেক্ষা করছে কখন পাশা খেলায় জিতে যাওয়া সাপ – লুডো কালখণ্ডের কবি ঢেলে নেবে তাকে অকারণ যৌন পেয়ালা ভর্তি স্কচে। বর্গীরা এমন ভাবেই আসে, ধান মানে না- পান মানে না, রসুনের গন্ধে সে আটকা। ছড়া টু ননসেন্স পোয়েট্রি – বারবার মুখোমুখি বসে আমি – তুমি আর উত্তরাধুনিক কালখণ্ডের কিছু কবিতা – লিখিয়ে(কবি নয়)। তারা কী লিখছে, কেন লিখছে, কাকে খুশি করার জন্যই বা লিখছে-শুধালে জবাব নাই। আর যদিও কোন জবাবের স্টপেজ আসে তবে তার উত্তর ফেসবুকের আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাছা বাছা বাছাধনদের স্বদম্ভ উত্তর। পোষ্টমডার্নিজম ঠিক কোন তত্ত্বকে সামনে আনে তা জানে দুজন – যে কোনদিন লেখেনি , আর যে কোনোদিন লিখবে না।আসলে যে কোনোদিন লেখেনি সে প্রথম লিখতে বসে দশ লাইনে আঠেরোবার কেটে বিরক্ত হয়ে ধুস্ বলে টেবিল ছেড়ে উঠে যায় সে জানে শব্দের হাল্কাটা কত ভারী। খুঁজে নেয় সে তার কথ্য ভাষা লেখার আঁচড়ে। না জেনেই সে পা রাখে উত্তরাধুনিক কালখণ্ডে। আর দ্বিতীয় দল যারা কোনদিন লিখবে না তাদের জন্য থেকে যায় পুনঃপ্রচারিত নির্বাক কিংবা সবাক কনসেপ্টগুলো যা লেখাতে পারেনা – লিখতে দেয় না – এঁটুলি পোকার মতো মাথায় আটকে থাকে। দার্শনিক সেজে পরে নেয় গাধার টুপি আর সন্নাসীগুলোর গলায় পরায় কোমরে বাঁধার ঘুনসি। আসলে ইজিমলেস – নো নিয়ম বা নো জ্ঞান বস এর দিকে এগিয়ে চলে আধুনিকের পরের স্তরগুলো। ওগো নদী আপন বেগে পাগলপারা
যুগ পরিবর্তন বা কোনো কালখণ্ডের সূচনা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি,পত্রিকা বা ইজিম করতে পারে না , ইতিহাস সাক্ষী দিয়েছে – ভূগোল সাক্ষী দিচ্ছে – টাইমমেশিন মেশিন সাক্ষী দেবে। রসতীর্থ পথের পথিক রবীন্দ্রনাথ আধুনিক এবং আধুনিক জোব্বা পরা উত্তরাধুনিক পুরুষ । তাই জন্যই বহুমাত্রিক মানচিত্রের চতুর্থ ডাইমেনশনটি তিনি এবং তিনি নিজেই।আর তাই জন্যই তিনি কারোর কাছে রক্ষিত হয়েছেন মিসেস কাদম্বরীর পার্টিশন নিয়ে , সুখী গৃহকোনের ভাইছুটির জীবনদেবতা সেজে এবং এভাবেই অন্য ঘরগুলিতেও। সবকটি ঠিক এবং সবকটিই ভুল। বৌঠানের পাশের ঘরে যাবার পর বন্ধুহীন রবি কাকে বলতে পারেন তার প্রিয় বন্ধুর গল্প। বলতে তো তাকে হতোই আর এখানেই লুকিয়ে আছে পোস্টমডার্ন কালখণ্ডের বীজ। ৯৯% পাঠকই ফেল করেন এক্ষেত্রে। প্রেমে জর্জর মানেই বৌঠান , হিন্দোল মানেই বৌঠান , গোপনীয়তা মানেই বৌঠান – না, এগুলো কোনোটাই না। কারণ কবির কবিতা কখনই একমুখী নয় , শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে সে বটগাছ। সেই বটগাছ থেকে নেমে আসা ঝুরি রস যুগিয়েছে কচি বটপাতা পোস্টমডার্নিজমকে ।অন্তরে ডুব দিয়ে দেখো গীতবিতান গলায় বেঁধে , ভাগ্য প্রসন্ন থাকলে দক্ষিনের হাওয়ায় আবার ভাসতে পারে টুকরোটুকরো করে ছিঁড়ে ফেলা হ্যান্ডমেড পেপারে লেখা উত্তরাধুনিক কবিতার বীজ –
বিরাট মানবচিত্তের
অকথিত বাণীপুঞ্জ
অব্যক্ত আবেগে ফিরে কাল হতে
কালে
মহাশূন্যে নীহারিকাসম।
তরঙ্গের মানচিত্রেও জলছাপ পড়েছে একে একে। পূর্বতন সকল সম্পাদকের ঝরে পড়া ঘাম এই ছাপের কারণ আর ফলাফলে ভার্চুয়াল জগৎ গড়াগড়ি খেলো বাস্তবের চাঁদের উঠোনে। কলকাতা দূরদর্শণ সম্প্রচারিত একটি সাক্ষাতকারে উঠে আসে আঠেরো মাস বয়সী তরঙ্গের কথা। কবি আর্যতীর্থকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ জানাবো সেই কবিটিকে যিনি দুটো চোখে আলো হারিয়েও শুধু তরঙ্গে লিখবেন বলে অদম্য কাব্যশক্তি চালনা করেন কথকঠাকুর সেজে , গৌরাঙ্গ মিত্র তোমাকে সেলাম। তোমার লেখা এই সংখ্যাকে পেলব করুক। ঠিক একই ভাবে নতুন উঠে আসা সন্দীপ ভট্টাচার্য এবং তাকে দিয়ে শুরু হওয়া নতুন বিভাগ -নতুন কলম। আমাদের সন্দীপ ভট্টাচার্য অংশটিতে রাখা আছে তার কবিতা যাপনের বেশ কিছু চিহ্ন। প্রত্যেক সংখ্যায় একইভাবে চলবে নতুন কলমের মুক্তো খোঁজা।
গত ২৭শে জুন আমার এক প্রতিবেশীর জন্মদিন ছিল। ১৮০তে পা দিলেন বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তার একটি ছোট্ট গল্প বলে স্নানে যাবো। বন্দেমাতরম গানটি তখনও আনন্দমঠে অর্ন্তভুক্ত হয়নি , সবে লিখে প্রেসে পাঠানো হয়েছে। কম্পোজিং এর সময় বঙ্কিমবাবু মুখোমুখি হলেন একটি অস্বস্তিকর প্রশ্নের, ‘এটা কী, না সংস্কৃত – না বাংলা, এ ছাপা যায়?বঙ্কিমবাবুর সেদিনের উত্তরটি ছিল, ‘ যদি তুমি বেঁচে থাকো তবে আগামী পাঁচ, দশ বা কুড়ি বছর পর দেখতে পারবে এটা কী।’
আজ আমরা সবাই জানি এটা কী।সুতরাং নিয়ম ভাঙার খেলা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই, জ্ঞান দেবার লোকেরও ছিলনা অভাব। ব্যস- সমঝদারো কে লিয়ে ইশারাহি কাফি হোতা হ্যায়