মুড়িমুড়কি -তে মৃগাঙ্ক মজুমদার

খাও–খাও–খাও
“দে মা আমায় রাজা করি
এখন হালুয়া ভেন্ন দিন চলে না
বরং রাবড়ি হলে খেতে পারি”
খেতে বসে কখনো কি মনে করে দেখেছেন কোন এক গায়ক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের টিভি তে “খাও খাও, খাও” তার চেয়ে দাদাঠাকুরই ভালো কি না। আসলে খাওয়ার ব্যাপ্তি এতো বেড়েছে যে পাইস হোটেলে পোষাচ্ছে না মানুষের। আসলে বেশীরভাগই এখন খাওয়া আর খাওয়ানোর ব্যাপারে একেবারে ‘ওয়ান পাইস ফাদার মাদার’ আর বেশী খেতে চাইলে লোকে ‘মী টু’ বলে তেড়ে আসতেও পারবে না। এই বেশী খাবার দোষে বা বলা ভালো অভিযোগে দু দু জন নামকরা সাংবাদিক এখনো কোর্টের চক্কর লাগাচ্ছেন। খাবার ক্ষমতা থাকলেই যে হাভ্যাইত্তার মত খেতে হবে একথা যে সবাই বোঝে না সে তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আরে বাবা সবাই কি আর ‘আধমণি কৈলাস’ হয়?
খাবার মজা আসলে একান্ত ভাবেই নিজস্ব তাতে ব্যাগড়া একদমই দেওয়া উচিৎ না। ধরুন আপনি বিয়েবাড়ি বা নামী হোটেলে গিয়ে দেখলেন যে এক্কেরে জম্পেশ করে কচি পাঁঠার ঝোল করেছে আর এই হচ্ছে সুযোগ, এমনি জীবনে আপনি শ্যাম পাঁঠা কি বোকাপাঁঠা বা যাইহোক না কেন নলি দেখলেই সুড়ুত করে টান দেবার ইচ্ছে হবেই। এ টান গাঁজার টানের চেয়েও কঠিন। আপনার গাল পুরো বিড়িখোর দের মত সরু হয়ে গেল, আপনার চোখ ছিটকে সামনে বেরিয়ে এল আর আপনি চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। সুকান্তর কবিতাও কেও যদি সামনে আওড়ায় ‘ সব থেকে ভালো খেতে গরীবের রক্তঃ তাতেও আপনার দৃকপাত নেই। আপনি লক্ষ্যে অর্জুন, বুদ্ধিতে বৃহস্পতি আর কাজে যে অষ্টরম্ভা নন সেটা প্রমাণ করার এর থেকে ভালো সুযোগ আর নেই। নলি চুষতে চুষতে অনেক কিছু মনে পড়তেই পারে আপনার মায় ছোটোবেলার চুষিকাঠির কথা। মনে হতেই পারে এই সাধনা, এই উদ্যম, এই মনোনিবেশ যদি পড়াশোনায় দিতেন আরো বা নিজের কাজের ক্ষেত্রে তা হলে এই সময়ে এসে এতো কাঠি খেতে হোতো না লোকের কাছে। কারণ সেই কৌশলটাও রপ্ত হয়েই যেত । এদিকে নলি কে যদি কায়দা না করতে পারেন সহজে তখন যে নলি টিপে বের করবেন তার উপায় নেই । এদিকে আস্তে আস্তে লোকের চোখ ঘুরছে আপনার দিকে আর আপনার সঙ্গী বা সঙ্গীনীটি বিব্রত বোধ করছেন আর তার অস্বস্তি আর রাগের মিটার বাড়ছে। কিন্তু আপনি অবিচল।
কথায় আছে সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল ব্যাঁকা করে নিতে হবে, তখন বোধ হয় চামচের আবিস্কার হয় নি। আরে ঘি বা তেল মাখাতে থুড়ি ভাতে বা রান্নায় দিতে চামচার অভাব হয় নাকি? তা নলির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা, আপনার দাঁতের বয়সের কার্বন ডেটিং এর দরকার হবে না এখানে কারণ নলি আপনি যে দাঁত দিয়ে ‘কট্টাশ’ করে ভেঙে দিলেই বোঝা যাবে আপনার দম। মুস্কিল হোলো সেটা একেবারে শেষের দিকে মানে লাস্ট রিসোর্ট ( যদিও রিসোর্টের মজা এখানে নষ্টই হয়ে যায়)। কিন্তু চুষে চুষে চোয়াল ব্যাথা হবার পরেও যদি না বেরোয় তা হলে আর চেষ্টা না করাই ভালো কারণ এর পরে আপনার গাল আর ঠোঁটের হাল চুমু খাবার যোগ্য থাকবে না। তার যে বরং খুঁচিয়ে দেখতে পারেন। আসলে জানেনই তো খোঁচা খেলে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসতে পারে। এই যেমন যারা বদরাগী তারা খোঁচা খেলেই জীবন্ত আগ্নেয়গিরির মত তেড়ে আসে অতএব তাদের সেসব না খাওয়ানোই ভালো। অবশ্য অনেকেই আছেন যারা খোঁচা খেলে মুখের মত জবাব দেন , কিন্তু সেটা কার মুখের মত সেটা বোঝা যায় না আবার অনেকেই মুখটা যে কোথায় সেটাই বোঝেন না।
কিন্তু এই যে নলি, তার কিন্তু একটা মুখ আছে যেখানে আপনি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বার করতে পারেন আর একটু একটু করে চেটে চেটে খেতে পারেন মজ্জা, আর এই চেটে খাওয়াই যদি আপনার মজ্জাগত হয় তা হলে আপনার উন্নতি কে ঠেকায়। চেটে চেটে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে যেতেই পারেন আর তাতে আপনার নিজের চাটন খাওয়ার ভয় কমে যাবেই যাবে।
আসলে মাংসটাই সব বুঝলেন কি না সাথে অবশ্য অনেক কিছুই পাবেন খাবার জন্য এই দেখুন আসলে মানুষ মাত্রেই লোভী আর যারা তা নয় তারা মানুষই নয়। আরে সন্ন্যেসীরাও খেতে দিব্যি পছন্দ করতেন আমার কথা না হয় শাস্তর খুলে দেখুন গিয়ে এক এক জন একটা গোটা পাঁঠা হজম করে নিতে পারতেন আরে ওই বাতাপী , ইল্বল মনে করে দেখুন না পেটে গিয়ে এমন ব্যা ব্যা করে ডাকছিল মানে সেদিন হয় রান্না টা যুতের হয় নি না হলে মুনি একটু স্ট্রেসড আউট ছিলেন বলে বদহজম হয়েছিল। আর বায়ু নির্গমণের আওয়াজ তো ভয়ঙ্কর ই হয়, তা সে আপনি মুখ দিয়ে বের করুন বা পায়ু দিয়ে।
খেতে বসে আসলে কাউকে পাত্তা দিতে নেই। কাউক্কে না। আগেকার দিনে নিয়মই ছিল কেউ খেতে বসে কথাই বলবে না
ওই তো লেখাই আছে
“ হাপুস হুপুস শব্দ শব্দ
চারিদিক নিস্তব্ধ
পিঁপিঁড়া কাঁদিয়া যায় পাতে”
তার আগের ওই আমসত্ত্ব, কদলী দলি বাদ ই দিলাম কারণ এমনিতেই খাবার সময় অতো দলাই মলাই চটকানো সবসময়ে ভালো না। খাচ্ছি নাকি পার্লারে ম্যাসাজ নিচ্ছি ?
অবিশ্যি ছেলেরা সেলুনে গিয়ে দলাই মলাই খেতেই পছন্দ করে আর তার পরে ঘচ্যাং ঘচ্যাং করে ঘাড় ধরে যেভাবে ঘুরিয়ে দেয় তাতে পুরো অ্যাকশ্যান ফিলিমের সেই হিরো আর ভিলেনদের কথা মনে পড়ে যাদের ঘাড় মটকে মেরে ফেলে। এর পর ও যে কি করে আরাম পায় কে জানে?
তবে খাবার কথাই যদি হয় তা হলে বিদেশী খাবারই বা বাদ যায় কেন কিন্তু তাতে তো লিস্টি শেষ হবে না।
আমার মত আকাট গাম্বাটের কথাই ধরুন প্রথমে তিন বছর বলেই গেলাম – পিজা,পিজা, পিজা
তা কি সে পি বে আর কোথায় যে যাবে সেটাই বোঝা দায় আর এমন ও নয় যে পিয়া আজা বলছি
ওই খন্ড ত এর এত কেরামতি আর জিভের এত মারামারি জানলে কে খেতে যায় – পিৎজা। কিন্তু একেবারে ‘চলে যা’ ও বলা যায় না। শুরু তে বলেছিলাম নলি আর এখন হল নোলা। মানে খাবার কথা হবে আর নোলা থেকে জল ঝরবে না তা তো আর হয় না।
তবে কি না কার নোলা কি দেখে ঝরে তা বলা বড়ই মুস্কিল। হাটে বাজারে, রাস্তা আপিসে যারা সারাক্ষণ ‘কুচযুগ শোভিত’ বলে হাঁ করে তাকিয়ে খাব খাব বলছেন বা ‘হ্যান্ডসাম হাঙ্ক ‘দেখে প্রবল তৃষ্ণাতে ভুগছেন তাদের খাবার রেসিপি আমার কাছে নেই। তার জন্য ক্যাটারার আলাদা, মেনু আলাদা আর তরিবত ও আলাদা।
আর ফলাফল না বুঝে যদি ‘ফেলাফেল’ খান তো
কাকেশ্বর কুচকুচে বলে দেবে
“ হয় নি
হ য় নি ফেল”
কিন্তু শপথ করে বলছি আপনি যদি খাওয়াতে জানেন তা হলে আপনার সমৃদ্ধি কেউ আটকাবে না।
খালি জানতে হবে কাকে আর কখন।
আর হ্যাঁ মাঝে মাঝে ‘ভাও’ খেতে ভুলবেন না যেন।
খালি খাওয়া ‘অসমাপ্ত’ রেখে উঠে যাওয়ার মত শোক পৃথিবীতে আর একটিও নেই।
খাওয়া আর খাওয়ানো এক অনন্তকাল ধরে চলা পদ্ধতি। এ ধারাবাহিক কি না জানা নেই আর তাতে আদৌ যতি পড়ে কি না তার খবর নেই।
তাই এটিও
‘অসমাপ্ত’…