• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ৯)

বল্টুদার সঙ্গে বেড়াতে চলুন – ৯

বল্টুদা এবার একটু চিন্তিতই হলেন। এমনতো কখনো হয়নি এর আগে। ঘন্টা মেপে দেখলেন তাও প্রায় চার ঘন্টার উপর হয়ে গেছে। এতক্ষন কোনদিনও সমুদ্রে স্নান করেননি। বৌদির চিন্তা মাথায় নিয়েই বল্টুদা সবার খাবারটা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন ,কিন্তু নিজে খেলেন না। খাওয়াদাওয়ার পরে যে যার মত বিশ্রামে চলে গেছেন নিজেদের ঘরে। তারই মধ্যে কয়েকজন বল্টুদার সঙ্গ নিলেন। গুহ দা,সেই ছেলে মেয়ে দুটো,চক্রবর্তী দা আর তার বৌ এবং হনিমুনে আসা সেই দুজন,যারা হোটেলের ঘরেই সময় কাটাচ্ছিলেন। বল্টুদা তাদের বারন করলেন, “আপনারা নিজেদের মত আনন্দ করুন না, এমন দিন তো আর জীবনে ফিরে আসবে না”। ছেলেটির নাম আর্য,মেয়েটির নাম চন্দ্রাবতী। দুজনেই প্রায় এক সুরে বলে উঠলো, “বিপদের সময় পাশেই যদি না দাঁড়াতে পারি,তাহলে আর কিসের মানুষ হওয়া।”

বল্টুদা মাঝে মাঝে ভাবেন যে পৃথিবীটা এখনো পুরোপুরি খারাপ হয়ে যায় নি। এমন সব মানুষ আছে বলেই এখনও পৃথিবী সুন্দর। হাঁটতে হাঁটতে হোটেলের পাশের রাস্তা দিয়ে মেরিন ড্রাইভ পেরিয়ে সবাই চলে এলেন সমুদ্রতীরে,যেখানে বৌদি শুদ্ধ সবাই স্নান করছিলেন। কেউ নেই,কোথাও নেই। প্রায় জনশূন্য সমুদ্রতট। সমুদ্রতীরে মাত্র দু-একজন ঘুরে বেড়াচ্ছেন,কিন্তু যত দূর চোখ যায় সমুদ্রের মধ্যে কাউকে স্নান করতে দেখা যাচ্ছে না।
এবার সত্যি চিন্তা গ্রাস করলো বল্টুদাকে। সবাই মিলে সমুদ্রের ধারের এদিক ওদিক অনেকটা করে হাঁটলেন। কোথাও নেই। বল্টুদা খুঁজে খুঁজে একজন নুলিয়াকে বার করলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন কিছুক্ষন আগে এদিকে কিছু হয়েছে কিনা,কিম্বা…. কথা বলতে গিয়ে আটকে গেলো। বল্টুদার চোখে জল। নুলিয়া বিশেষ কিছুই বলতে পারলেন না। সারাক্ষনই তিনি প্রায় সমুদ্রের ধারে ছিলেন,ধারেই বা কেন,সমুদ্রের মধ্যেই ছিলেন,কাউকে না কাউকে স্নান করাচ্ছিলেন। সমুদ্রের মধ্যে কিছু ঘটলে নুলিয়াদের কাছে খবর পৌঁছবে না এমনটা হয় না। নুলিয়ার কথা শুনে এবার বল্টুদা কিছুটা আস্বস্ত হলেন। তবুও চিন্তা তো দূর হবার নয়। মাঝেমধ্যে বল্টুদার বৌয়ের উপরে রাগ হচ্ছে বল্টুদার,আবার ভালোবাসা আর আবেগ এসে সেই রাগ সরিয়ে দিয়ে একরাশ চিন্তার হাওয়া ঢুকিয়ে দিয়ে যাচ্ছে মনের মধ্যে।
পুরীর মেরিন ড্রাইভে ওয়াচ টাওয়ার আছে। প্রায় সব সমুদ্র তীরেই থাকে এমন। উপরে গার্ড বসে থাকেন বাইনোকুলার চোখে। সামনের সমুদ্রের অনেকটা গভীর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ থাকে তাঁদের। ঝড়,ঝঞ্জার সময় তাদের ভূমিকা থাকে দারুন রকমের। বল্টুদা এবার গেলেন সেখানে। উপরে একজন গার্ড,নীচে একজন বসে। বল্টুদা তাঁদের গিয়ে বললেন সবটা। গত কয়েকঘন্টার মধ্যে কিছু কি ঘটেছে সমুদ্রে? গার্ড কিছুটা কৌতূহলী হয়ে বিষয়টা জিজ্ঞেস করলেন। বল্টুদা তাকে সবটা বললে। সব শুনে গার্ডটি কিছুই ঘটেনি বলে জানালো।এমনও বললো যদি কিছু ঘটে তাহলে সবচাইতে আগে খবর আসবে আমাদের কাছে।
বল্টুদা এবার অনেকটাই নিশ্চিন্ত হলেন। কিন্তু কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না বৌদি কোথায়।মোবাইলেও যে যোগাযোগ করবেন এমনটা হচ্ছে না,কারন স্নান করতে যাওয়ার আগে মোবাইলটা হোটেলে নিজেদের ঘরে রেখে গিয়েছিলেন বৌদি।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।