• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ৮)

বল্টুদার সঙ্গে বেড়াতে চলুন – ৮

হোটেলের ঘরের জানালাটা খোলা। হাওয়া আসছে। গতরাতে ঘুম হয়নি,ঘুমিয়ে পরলেন বল্টুদা। বেলা বাড়ছে। রান্না প্রস্তুত হচ্ছে।
ওদিকে প্রায় সবাই তখন সমুদ্রের ধারে। মাথার  উপরে সূর্য। সকাল সাড়ে নটা নাগাদ এসেছিলেন সবাই,অনেকক্ষন হয়ে গেছে। অত্যন্ত উৎসাহী দু-চারজন আছেন যারা সমুদ্রের ধারে এসেই নেমে গিয়েছিলো জলে তাদের আর দেখাই নেই। ওই দূরে প্রায় বিন্দু হয়ে গিয়েছেন তারা। ফিরে আসতে সময় লাগবে। বল্টুদার বৌ ও রয়েছেন এই দলে। অন্যসময় হলে বল্টুদার কাজই ছিলো জুতো আর বাচ্চাকে নিয়ে সমুদ্রের পাশে কোথাও একটা বসে থাকা। প্রথম প্রথম সমুদ্রে এসে সমুদ্র তটে রাখা চেয়ারে বসে থাকতেন বল্টুদা। বৌদি নেমেছেন সমুদ্রে। চারপাশ দেখতে দেখতে সময় কেটে যেত। সবে যখন ঝিমঝিম ভাব আসতো চোখে,বৌদি এসে জাগিয়ে দিতেন বল্টদাকে। উঠতে যাবেন, ডাবের দোকানের মালিক যে দাঁ দিয়ে ডাব কাটছিলেন একহাতে,সে দাঁ-টাকে নিয়ে বল্টুদার সামনে এসে বলতেন..”টাকাটা দিন।” বল্টদা অবাক,’কিসের টাকা?’ তারপর এক দফা ঝগড়া ঝাটির পর বল্টুদা বুঝতে পেরেছিলেন যে সমুদ্রের পাড়ে চেয়ারে বসতে গেলে হয় ডাব খেতে হয়,নতুবা ঘন্টা পিছু টাকা দিতে হয়।
এহেন বৌদি বল্টুদার বহু টাকা খসিয়েছেন সমুদ্রে স্নান করতে নেমে। পুরীতেও তাই। যদিও বল্টুদা এবার নেই সমুদ্রতটে। বৌদি পায়ের জুতো পাড়ে রেখে বহুদূর গেছেন স্নান করতে। বেলা বাড়তে থাকলো। একে একে প্রায় সবাই সমুদ্র স্নান সেরে উঠে এলেন পাড়ে। রোদ উঠেছে। শুকনো বালির উপর খালি পায়ে বেশ গরম লাগে। খুলে রাখা জুতো যে যার মত পায়ে গলিয়ে হেঁটে এলেন হোটেল পর্যন্ত। সমুদ্রে স্নান করবার পর হোটেলে এসে স্নান করাটা খুব দরকারী। নোনা জলের রুক্ষতা ধুয়ে নিতে অনেকেই মিষ্টি জলের স্নান মেখে নিতে চান । তাছাড়াও বালি লেগে থাকে শরীরে,সেটাও কলের জলে ধুয়ে যায়।
প্রায় ঘন্টা তিন চারের স্নান পর্বের পর পেটে আগুন জ্বলে। বল্টুদা ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে নিয়েছেন হোটেলেই। মধুচন্দ্রিমায় আসা নবদম্পতি হোটেলের রুমে তখনও আবদ্ধ রেখেছেন নিজেদের। রান্নার ঠাকুরেরা রান্নার পর্ব মিটিয়ে খাবার পরিবেশনের প্রস্তুতিতে। ডাইনিং রুমে একেক করে সবাই এসে জড়ো হতে থাকলেন। টেবিলে টেবিলে থালা প্রস্তুত। গরম ভাত,ঘি,বেগুন ভাজা,শুক্তো,পমপ্লেট মাছের ঝাল,ভেটকি মাছের পাতুরী,চাটনি এবং মিষ্টি। এলাহী খাওয়াদাওয়া। বাঙালির বেড়াতে যাওয়ার আমেজের অনেকটাই ভালো খাবারের রসায়নে মিলে মিশে একাকার। যে কোনো ভালো রান্নাতেই যেনো হাজারী ঠাকুরের রান্নার স্বাদ।
বল্টুদা সকলের খাওয়াদাওয়ার তদারকি করছেন। মধুচন্দ্রিমায় আসা দম্পতি খেতে এসেছেন। খেতে খেতে আড্ডা জমে উঠেছে। কে যেন একবার চেঁচিয়ে বললে “পেঁয়াজ পাওয়া যাবে একখানা?” বল্টুদা নিজে পেঁয়াজ কেটে নিয়ে এলেন হাসি মুখে। গুহদা বলে উঠলেন,”বল্টু বাবু,বৌদি কে দেখছি নাতো?”
এতক্ষনে বল্টুদার খেয়াল হলো,তাই তো,রুমেও তো যায় নি, ঘরের চাবি তো বল্টুদার পকেটে।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।