• Uncategorized
  • 0

মুক্তগদ্যে রঘু জাগুলীয়া

দৃশ্য থেকে অদৃশ্য হতে হতে

শামুক হয়ে যাচ্ছি।ঘুম পাচ্ছে।কিন্তু কোথায় ঘুমোই?
সূর্যকে সঙ্গে নিই, প্রেমিকাকে সূর্য দিই,তারপর!
চারিপাশে কীটেরা বিপক্ষে বৃষ্টির রাতগুলি মোহ পায়! কচুগাছ জেগে ওঠা পুকুরের ধারে বসে থাকি রাতভোর। এইসময় মায়ের গলায় গান শুনতে পাই ,শুনতে শুনতে কঁকিয়ে ওঠে নুড়ি-বালি-পাথর।সেই সব দিনে ভ্রমণে যাই
যখন লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়ার জন্য একটি সন্ধে থাকতো,হারমোনিয়ামে ঠাকুরের গান করতো বাবা
ভোর-ভোর উঠে–ডেকে তুলতো পড়ার টেবিলে।
সারাদুপুর গুলি খেলতে খেলতে বাড়ি ফিরতে বিকেল হয়ে যেত,স্কুলের বেঞ্চে দাঁড়’ করিয়ে
কান মুলে দিত ভূগোলস্যার।চিঠি লিখতাম বিকেলকে– চিঠি লিখত সৌরকণিকা আমাকে,
আমিও লিখতাম কিছুদিন তাকে।

স্বপ্নের নিজস্ব ছকে হতে পারে
অতীততর ঘন কুয়াশার বাদাবন পেরিয়ে
লকলকে জীহ্বার জন্যে–নিজের কপালে ট্রিগার চেপে ছুটছি…যেভাবে একটি নেকড়ে ছোটে শিকারে—রাতকে রাত আততায়ী করে তুলল আমাকে।প্লুটোনিয়ামের মধ্যে হাত পা ছড়াচ্ছি;
পেট ভরে মদ খাচ্ছি আর টলছি।যেখানে কোনো পথ এসে শেষ হয়নি, তেমনি বর্তুল সুন্দরীর নরম তুলোভর্তি বুকে একটি পেরেক গাঁথা আলো ও আঁধারের মাঝে কোথায় যাচ্ছি কেউ জানি না
কেমন বিদ্যুতবেগে আকাশের কালোগর্ত থেকে কেউ আমার ভ্রুণটিকে তুলে নিয়ে গুঁজে এল এক মাঘী পূর্ণিমার রাতে–কুয়াশামাখা একটি কাদাখোঁচা বিছানায়শুয়ে আছে হিমগুচ্ছমূলে পলাশপুর গ্রাম,আমাদের ঘরের হারমোনিয়াম থেকে ছোটোবেলার কুসুম ফোটার গান ভেসে আসছে, ভোরের কবিতা খুঁটে নিয়ে যাচ্ছে শিশুহাত, মায়ের মুখ তুলশীমন্দীরের মতো শান্ত।মা গোবর দিচ্ছেন ছাইভেজা উঁনুনের চারপাশে,আমাদের প্রাইমারি স্কুলের কচিকাচারা ‘পাখি সব করে রব’ বলতে বলতে মাঠের ন্যাঁড়াপড়া ঢেলা পথ ধরে চলে যাচ্ছে। সূর্যমুখী ফুলগুলি তাকিয়ে দেখছে ওদের হৈ চৈ। ধীরে ধীরে এইসব আলো শুষে নিচ্ছে আমার দেহমন।

দ্রুত সেরিব্রাম থেকে মাল্টিভার্সের দিকে–শূন্যের ভিতরে আলোর সঙ্গে–ঘূর্ণির সঙ্গে গোল তরঙ্গে–লাবণ্য বসে পড়ছে ইউক্যালিপ্টাস গাছের নীচে–অশীতিপর বৃদ্ধের সঙ্গে সমুদ্রজলের
কাপালিকের সঙ্গে অরণ্যের,কপালকুন্ডলার সঙ্গে নবকুমারের,এরপর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগেরর প্রতি উত্তপ্ত হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর।
বিধবারা শেষবারের জন্য দর্পনে দেখলেন
একবিংশ শতকের এডুকেটেড নারীর উজ্জ্বল মুখ
কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে উধাও হয়ে গেল সে শৃঙ্গার।
এর বেশী কিছু নয় এর বেশী কিছু হচ্ছে না,
আরও বেশী ইতিহাসের প্রয়োজনে প্রতিটি গ্রামে শুকিয়ে যাচ্ছে খাল-বিল যে মানুষটি নাঙল দেবার পরেই–ঈশ্বরের মুখে প্রতিটি ধানের বীজ পুঁতে দিচ্ছে;একটি গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ বলা যায়
ঘুরে ফিরে চক্রাকার হচ্ছি– ভাতের গন্ধ থেকে শিল্পের গন্ধ– সবকিছুকেই কেমন হারিয়ে ফেলছি আমি।তবে আমাকে জানতেই হবে এদের ইতিহাস নিয়ে খুববেশীদূর দেখা যায় না কেন?যে ভাষায় মেঠো পথের গান লেখা হতো মুখে মুখে আজ এই ক্ষুদ্র ইউনিভার্সে টেলিস্কোপ বসিয়ে ভাষাতো দূরস্ত…বিচলি ছাওয়া ঘরটি খুঁজে পাচ্ছিনাতো আমি,ছুটছি… শরৎ চ্যাটুর্যের পাড়ায় মহেষের দুচোখে গফুর ও আমিনাদের শীর্ণ বাড়িটি শেষবারের জন্য ঝাপসা হল,পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রেশনের দোকানগুলি ঈশ্বরের পাদুকালয়ে পাওয়া যাচ্ছিল…এরপর আমার একাকী ঈশ্বরের সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথন আছে,বার্গম্যানের ‘দ্য সেভেন্থ সিল’ চলচিত্রটিতে।

সিলভিয়া…সিলভিয়া,বাবা ডাকছেন নিসঙ্গ
এক হাতুড়ির শব্দ মনে হল,বিস্ফারিত ঘোলাটে আকাশ:”A life baptized in no-life for a while,and the sweet,dragged waking of a forgetful baby”
বিলম্বেই বঙ্গীয় চিরসবুজ গ্রামটিকে গ্রাস করে নিল মানুষপোড়া রঙ।

ঘুমের মধ্যে একটি কুকুর কে দেখতে পেলাম যে একটি হাড় মুখে দৌড়াতে শুরু করেছে।এটিই ছিল পৃথিবীর শেষ জীবাশ্ম যে কিনা যেকোনো দিন আমাদের পৌঁছে দিতে পারতো
বঙ্গোপসাগর উপকূলে ভাসতে থাকা কচ্ছপের মতো দ্বীপটিতে। যার ধমনীতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে
প্রতিটি ‘আদিবাসী যুবতীর কান্না’, কাউকে না কাউকে বলতেই হতো একদিন–শোষণের ইতিহাস লেখার ক্ষমতা সম্ভবত স্বয়ং ঈশ্বরের নেই,
অথচ তিনি কেনই বা আমাকে লালন দিতে গেলেন
কেনই বা রবীন্দ্রনাথ–জীবনানন্দ–উৎপল…
কোনো এক মহাজাগতিক বুদ্বুদে
নিশ্চয় লেখা হচ্ছে পৃথিবীর প্রতিটি নারীর অন্তস্থল,
পৃথিবীর প্রতিটি পুরুষের ভালোবাসার গীতিকবিতা
অর্ধনারীশ্বরদের কামনার অজস্র দিনগুলি—
তবে কি শেষ ফুলটি আদিম নক্ষত্র থেকে
ছিঁড়ে নিয়ে গেল কেউ ?যেন ‘প্রতি প্রশ্নে কেঁপে ওঠে ভিটে’।হয়তো কোনোদিন একাকী নারী হতে হতে
হয়তো কোনোদিন একাকী পুরুষ হতে হতে
হয়তো কোনোদিন খড়কুটোর মতো ঝড়ের অন্তরীপে;তোমাকে আমার কাছে আমাকে তোমার কাছে সমস্ত বায়ুমণ্ডল শুষে ধুলোর মধ্যে অবসন্ন বালুকনায় সূর্যকে বিপর্যস্ত দেখে ঘুরে ফেলছি জননীর দুই পা।
নিষ্ক্রান্ত শরীর ছেড়ে ধীরে ধীরে
স্বপ্নের দৃশ্যগুলি ভোরের কাকের ডাকের সঙ্গে মিলিয়ে যাচ্ছে ঠিক যেভাবে কয়েকটি জলতরঙ্গ এসে নদীর বাঁধে শেষ হয়,ভোরবেলার রঙ জানালার পাশে এসে থমকে ছিল–কবাট ঠেলতেই দেখলাম,
বহুদিন আগেকার দৃশ্য মা দ্যুতিময় দানাগুলি মুরগির বাচ্চাদের ছড়িয়ে দিচ্ছে নিকোনো উঠোনে।

(লেখাটির মধ্যে কবি সিলভিয়া প্লাথের ‘ইনসোমনিয়াক’ কবিতার কিছু কথা উদ্ধৃত করা আছে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *