” Fathers, like mothers, are not born. Men grow into fathers and fathering is a very important stage in their development. “
David Gottesman
গোটা দুনিয়া জুড়ে একটা চরম ডামাডোল চলছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রাকৃতিক কিছুই বাদ নেই। করোনা প্যানডেমিকে এমন কিছু কিছু ঘটনা আমরা শুনতে বা দেখতে পেয়েছি যা আত্মার অন্তঃস্থল পর্যন্ত কাঁপিয়ে দেয়। এমনই একটা ঘটনা একদিন শুনলাম মায়ের মুখ থেকে। অবশ্যই কথোপকথন যা হয়েছে সবই টেলিফোনিক। আমাদেরই এক প্রতিবেশীর কথা। মায়ের মুখ থেকে শোনার পর আমি মেয়েটিকে ফোন করে যা শুনি তা হলো এই যে, একদিন বৃদ্ধ বাবার শরীর খারাপের খবর পেয়ে মেয়েটি বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসে। ঘটনাটা যেহেতু লকডাউনের সময়কার তাই বলে রাখা ভালো মেয়েটির শ্বশুরবাড়ি বাপের বাড়ি থেকে হাঁটা পথে আধঘন্টা দূরের হবে। মেয়েটির মা ওর খুব ছোট বয়সেই মারা যায়। বাবা-ই ওর মা, ওর বাবা, ওর গুরু, ওর সখা। বাবা যেমন মেয়ে অন্ত প্রাণ, মেয়েরও বাবাকে ছাড়া চলে না। প্রাণে ধরে তাই মেয়েকে দূর দেশে বিয়ে দিতে পারেননি বাবা। বৃদ্ধ বাবার শরীর খারাপের খবর পেয়ে মেয়েটি সকাল সকালই চলে আসে বাবার কাছে। রান্নাবান্না করে বাবাকে খাওয়ায়। সারাদিন বাবার কাছেই থাকে। এরপর বিকেলের দিকে পাড়ার কিছু মুরুব্বি গোছের লোক দল পাকিয়ে ওদের বাড়ি ঢুকে পড়ে। ওর স্বামীকে ফোন করে আসতে বলে। স্বামী এলে দুজনেরই গায়ে হাত তোলে ওরা। এরকম একটা সময়ে কেন ওদের এলাকায় ঢুকে পড়েছে, এই অজুহাতে। মেয়েটি ও ওর স্বামী পুলিশের কাছে যাবার কথা বললে ওরা আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে। শেষে স্বামী সহ মেয়েটিকে মেরে এলাকা ছাড়া করে। শুনেই শিউরে ওঠে গা। পিতা ও সন্তানের স্নেহের মধ্যে ঢুকে পড়ে বাইরের অবাঞ্ছিত লোক।
বাণিজ্যিকীকরণের এই যুগে অন্যান্য সব দিবসগুলির মতোই পিতৃদিবসের প্রকৃত গুরুত্ব ও তাৎপর্যও কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জায়গা দখল করে নিয়েছে একদিনের তাৎক্ষণিক আবেগ। এতে লাভ হয়েছে একমাত্র বাণিজ্য সংস্থাগুলোরই। পারিবারিক প্রীতি ও বন্ধনের ভিত হয়ে পড়েছে আগের চেয়েও নড়বড়ে। বাবাকে আদর জানাবার ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাজারি কিছু কৃত্রিম কার্ড যা আবার কিনা কিনতে হয় বাবারই পয়সায়। ঠিক এ কারণেই আমেরিকায় আন্দোলন গড়ে ওঠে বাবা ও মাকে একই দিনে সম্মান জানানোর দাবিতে। পরিবারের জন্য দুজনের সমান অবদান একই রকম প্রয়োজন মনে করে তারা চেয়েছিলেন পিতৃ এবং মাতৃ দিবসকে একত্র করে বিশেষ একটি দিনকে অভিভাবক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক। যাইহোক আন্দোলন ঘনীভূত হওয়ার আগেই যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে ও দলে দলে বাবাদের চলে যেতে হয় যুদ্ধে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পিতৃ দিবসকেও বাণিজ্যের আওতায় এনে ফেলে কর্পোরেটের ধূর্ত কুমীরের দল। মানুষের আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে হু হু করে বাড়তে থাকে কার্ড বিক্রি। কুমীরের পেটের ভিতর নিঃশব্দে চোখের জল ফেলে পিতৃ দিবস।
বাবারা বোধহয় চিরকালই টেকেন ফর গ্রান্টেড। এর সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এটাই হতে পারে যে পরিবারের প্রতি তাদের আবেগ উচ্চগ্রামে বাঁধা সুরের মতো বাজে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আমরা এখানে সেইসব বাবার কথাই আলোচনা করব যাঁরা তাঁদের সন্তানের প্রতি প্রাকৃতিক এবং মানবিক গুণ সমন্বিত আবেগের উত্তরাধিকারী। কোনোকিছুর বিনিময়েই যাঁরা নিজ সন্তানের প্রতি দায়িত্বের ভাবনা থেকে নিরত হন না, হাজারো সমস্যা সামলেও বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেন পিতৃত্বের যাবতীয় ধ্যানধারণাগুলো। বলাই বাহুল্য এই দিবস সেইসব বাবার জন্য নয় যাদের নিজেদের সন্তানকে অপরের কাছে বিক্রি করে দিতে বা ধর্ষণ করতে কিছুমাত্র বুক কাঁপে না। রসাতলে যাক তারা। তাতে সমাজ এবং ইতিহাস কলুষ মুক্ত হবে। দেখা গেছে একজন দায়িত্বশীল পিতার অভিভাবকত্বে বেড়ে ওঠা শিশুদের মধ্যে অনেক বেশি প্রবণতা থাকে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার, প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধির, শারীরিক এবং বৌদ্ধিক উন্নতির, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এবং অবশ্যই হাস্যরসিক হওয়ার। যুগে যুগে মেয়েদের যেভাবে গৃহকার্য এবং সন্তান লালনপালনের উপযুক্ত করে প্রস্তুত করা হয়েছে, পুরুষের ক্ষেত্রে তেমনই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খাদ্য সংগ্রহ ও উৎপাদনের উপযোগী করে গড়ে তোলার কাজে। পূর্বের যৌথ পরিবার ব্যবস্থায় এ কৌশল বহাল তবিয়তে সাফল্যের সঙ্গে কার্যকর হয়েছে। তারপর ধীরে ধীরে দিন বদলেছে। আর্থসামাজিক ধাঁচার পুরোপুরি বদলের সঙ্গে সঙ্গে যৌথ ব্যবস্থা ভেঙে তৈরি হয়েছে একক পরিবার পন্থা। অর্থনীতির ভয়াবহতার সঙ্গে যুঝতে বাড়ির মহিলাদেরও যোগ দিতে হয়েছে অর্থ আমদানির কাজে। স্বভাবতই সন্তান পালনের দায়িত্ব যৌথভাবে এসে পড়েছে মাতা এবং পিতার ওপর। এবার জিনগত কারণেই হোক বা যুগ যুগ ধরে সমাজ বাহিত সংষ্কারের বশেই হোক পুরুষ পড়ল আতান্তরে। সন্তান পালনের যে গুণগুলি স্ত্রী প্রজাতির মধ্যে প্রাকৃতিক উপায়ে স্বাভাবিক ভাবে বর্তমান তাকেই অর্জন করতে পুরুষকে যেতে হল নানাবিধ নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। ব্যাপারটা অনেকটা ঠিক শিশুর টালমাটাল পায়ের চলার মতো। স্বাভাবিক ভাবেই ভুলভ্রান্তি হল প্রচুর এবং অপদার্থতার দায় চাপানো হল পুরুষের উপর। বাবা বেঁচে থাকতে মা-কে আমি অনেকবার আক্ষেপ করতে শুনেছি যে ছেলেমেয়ের উন্নতির কোনো দায়ই বাবা নিতে চান না। এ কথা ঠিকই যে আমাদের দু’ভাইবোনের পড়াশোনা থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয়ের দেখভাল করেছেন আমার মা, কিন্তু তাবলে এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে আড়ালে বাবার সস্নেহ প্রশ্রয় না থাকলে মা কিছুতেই এ কাজ করতে উঠতে পারতেন না। আমার মা ততটা শক্তপোক্তও নন। আজ যখন বাবা জড়জগতের মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন অনেক দূর তখন মা নীরবে তাঁর জন্য চোখের জল ফেলেন, এ আমি অনেকবার দেখেছি। বাবার সন্তান পালন সম্পর্কে কথা উঠলে মা খুবই স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন ও স্বীকার করেন বাবার উপস্থিতিই মাকে সাহস জুগিয়েছে অনেক ভয়ানক পরিস্থিতির মোকাবিলায়। বাবার জন্য মায়ের এই চোখের জলই প্রমাণ করে দেয় বাবা কতখানি সক্ষম পুরুষ ছিলেন।
বহুদিন পর্যন্ত বিজ্ঞান সন্তান বিষয়ে পুরুষদের মানসিক অবস্থান নিয়ে নীরব ছিল। গর্ভধারণের পর মায়েদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, বায়োকেমিক্যাল পরিবর্তন বিষয়ে লেখা হয়েছে হাজার হাজার পেপার, প্রকাশিত হয়েছে অজস্র বই। কিন্তু কিছুদিন আগে পর্যন্তও আমরা জানতাম না সন্তানের জন্ম একজন পিতার কাছেও কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সুখের বিষয় অবশেষে বিজ্ঞানের ঘুম ভেঙেছে। সন্তান আগমনের খবর পুরুষের মধ্যে বায়োলজিক্যালি ও সাইকোলজিক্যালি কী কী অভিঘাত সৃষ্টি করতে পারে তা নিয়ে শুরু হয়েছে গবেষণা। আমরা জেনেছি যে অক্সিটোসিন এমনই একটি হরমোন যার ক্ষরণ সোশ্যাল বণ্ডিংএর জন্য দায়ি আর এই হরমোনই অভিভাবকের সঙ্গে তার বাচ্চাদের মধ্যেকার বন্ধনও দৃঢ় করে। ঐতিহ্যগতভাবে এতদিন মনে করা হত এই অক্সিটোসিন বুঝি কেবলই নারী হরমোন।কিন্তু এখন তা যে পুরুষদের ক্ষেত্রেও সমান সক্রিয় তা প্রমাণ হয়ে গেছে। নিত্য নতুন গবেষণায় এও প্রমাণ হয়ে গেছে, যেসব সহৃদয় পিতা তার সন্তানের সঙ্গে মানসিক বন্ধন তৈরি করার সুযোগ পান না, তারা ডিপ্রেশন ভোগেন বেশি। ” দ্য মোর দ্যাট এ ফাদার আইডেন্টিফাইস উইদ দ্য ফাদার রোল আর্লি অন, দ্য মোর হি ইজ শোন টু বি ইনভলভড অ্যান্ড এনগেজড অ্যাজ এ ফাদার ওভার টাইম” বলেছেন কার্লসন। যিনি দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন ‘কনসিকিউয়েন্স অফ চাইল্ড বেয়ারিং আউটসাইড অফ ম্যারেজ অ্যাজ পার্ট অফ দ্য ফ্র্যাজাইল ফ্যামিলিস’ নিয়ে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরিসর এ নিবন্ধ নয়, আশা রাখি আগামীদিনে এ ব্যাপারে আরো অনেক নতুন নতুন তথ্য আমাদের সামনে আসবে। আমার বলার বিষয় হলো, হঠাৎ বিজ্ঞানীরা এরকম একটা বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য উৎসাহী হয়ে উঠলেন কেন? এর উত্তর সম্ভবত সামাজিক প্রয়োজনীয়তা। পশ্চিমের দেশগুলোতে এবং এখন আমাদের দেশেও ক্রমাগত পরিবারগুলি ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এরও নানাবিধ কারণ রয়েছে। কিন্তু মোদ্দা কথাটা হল ভাঙন। আর এই ভাঙনের সূত্র ধরেই চাইল্ড কাস্টডি নিয়ে তৈরি হয়েছে এক গভীর সমস্যা। বাচ্চার দেখভালের দায়িত্ব মায়ের নাকি বাবার উপর দেওয়া যায় এ নিয়ে স্বয়ং আইন ব্যবস্থাই হয়ে পড়েছে দ্বিধাগ্রস্ত। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে কাস্টডি মায়ের কাছে চলে যাওয়ার পর বাবা মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন,বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন। চিন্তার বিষয়। একটি শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির দিকেই তো কেবল নজর রাখা নয়, তার চারিত্রিক, নৈতিক এবং বৌদ্ধিক বিকাশও অত্যন্ত জরুরী। ফলে বাবা অথবা মায়ের মধ্যে যিনি অর্থনৈতিক ভাবে অধিক শক্তিধর, তিনিই বাচ্চার সঠিক অভিভাবক — এই যুক্তি আর ধোপে টিকছে না। ফলে দরকার হয়ে পড়েছে শিশু পালন সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পুরুষের মনোবিজ্ঞান জানার। যতই হোক একটি নিষ্পাপ শিশুই আগামীর প্রতিভূ। তাকে যার তার হাতে তুলে দেওয়া তো যায় না। দেশের সর্বোচ্চ আইনও তা করতে পারে না।
একজন পিতা একজন মাতার মতো সন্তান লালনপালন করতে পারেন না – এই বস্তাপচা ধারনাটি এবার সমূলে উৎপাটনের সময় এসেছে। এমন ঘটনা বহু আছে যখন মায়ের মৃত্যুর পর বাবা একই রকম যত্নে, একই রকম দক্ষতায় তাদের সন্তানকে মানুষ করে তুলেছেন। উৎকৃষ্ট শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন। আমরা কেন ভুলে যাই যে পুরুষটিও জন্মেছেন কোনো না কোনো নারীর গর্ভে এবং বেড়ে উঠেছেন পরিবারের সামগ্রিক কাঠামোয়। এই কাঠামোয় বেড়ে ওঠা কোনো নারী যদি মহিমাময়ী হয়ে ওঠার দাবী রাখতে পারেন তাহলে একই বিশেষণের দাবিদার হতে পারেন একজন পুরুষও। সার্থক অভিভাবক হয়ে ওঠার পিছনে নারী অথবা পুরুষের সক্ষম অথবা অসক্ষম হওয়া নির্ভর করে পারিবারিক শিক্ষণপদ্ধতির উপর, জন্মগত ভাবে নারী বা পুরুষ হওয়ার উপর না। পুরুষ সন্তান পালনের কাজ সামলে উঠতে পারবে না এ কথা বলে সমস্ত ত্রুটি ও ব্যর্থতার দায় বিনা বিচারে বাবার উপর চাপিয়ে দেওয়া আজকের যুগে কেবল অন্যায়ই নয় নীতিগতভাবেও ভ্রান্ত। দেখা গেছে বিজ্ঞানও এ তত্ত্ব মানে না। একজন শক্তিশালী পুরুষের মধ্যেও বর্তমান রয়েছে কমনীয় সুকুমার প্রবৃত্তি। জীন দ্বারা নির্ধারিত লক্ষ কোটি বছরের এ সত্যকে লঙ্ঘন করার কোনো উপায় আছে কি? আমার বেশ মনে পড়ে ছোটোবেলায় ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে ভাইকে নিয়ে মা হাসপাতালে থাকার দিনগুলোয় আমার বেঁচে থাকার যাবতীয় দায়িত্ব বাবা স্বেচ্ছায় সামলেছেন। কোনো অনুযোগ এ ব্যাপারে তিনি কখনো করেননি। এবং বাবার সঙ্গে দিনের পর দিন থাকতে থাকতে আমার কখনো এমন মনে হয়নি যে মাকে মিস করছি। বাবার যত্ন ছিল এতটাই আন্তরিক। তাহলে কীভাবে বলব সন্তান পালন ক্ষেত্রে একজন বাবা, একজন মায়ের চেয়ে কোনো অংশে কম? পুরুষ মনুষ্যত্বহীন, অনভিজ্ঞ, জড়পিণ্ড এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। আমার এক উচ্চপদস্থ তুতো ভাইয়ের স্ত্রী ছ’মাসের শিশুটিকে বাবার হাতে ছেড়ে এক বছরের জন্য পাড়ি জমায় জার্মানিতে কিছু ট্রেনিং নিতে। প্রচুর কাজের চাপ থাকা সত্বেও আমার ভাইটি তার শিশুর যত্নে কোনো রকম শৈথিল্য প্রদর্শন করেনি। অনুপস্থিত মায়ের মতোই বাচ্চাটির যত্ন নিয়েছিল পূর্ণ মমতায়। তাকে সে খাইয়েছে, ঘুম পাড়িয়েছে,ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে,ডায়াপার বদলেছে সময় মতো, তার সঙ্গে খেলেছে, কথা বলেছে, বেড়াতে নিয়ে গেছে আবার প্রয়োজনে বাচ্চার কাছে বসেও থেকেছে সারারাত। নাম কে ওয়াস্তে একজন মহিলা ছিলেন, কিন্তু তার উপর বাচ্চার সব দায়িত্ব ছেড়ে দিতে ওর মন সায় দেয়নি। ভাই এমনও বলেছে অফিসের কাজের চাপেও তার মন সর্বদাই পড়ে থাকত বাচ্চার কাছে। আমাদের আশেপাশে এরকম হাজার হাজার ভাইদের, বন্ধুদের, বাবাদের আমরা গোটা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকতে দেখি যারা পিতৃত্বের গরিমাকে সর্বোচ্চ শিখরে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং করছে। দেখা যাচ্ছে সন্তান পালনের ব্যাপারে এখনকার পুরুষ তাদের পূর্বপুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি সক্ষম। সুতরাং মান্ধাতা আমলের যুক্তি যে এখনকার পুরুষদের জন্যও প্রযোজ্য হবে, এমনটা ভাবার আর কোনো জায়গা নেই। যে শিক্ষা প্রকৃতি শুরু থেকেই পুরুষ প্রজাতির জিনে স্থাপন করেছে তাকে উপেক্ষা করে ভুয়ো সামাজিক অনুশাসনের কঠোর নিয়ম নিগড়ে বাঁধা পড়ে থাকা এ সময়ে দাঁড়িয়ে হাস্যকর। সময় বদলায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা কিছু প্রাচীন তাকে সময়োপযোগী করে বদলে নেওয়াতেই মানুষের ইতিহাস প্রবহমান।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি একটি বাচ্চার বড়ো হয়ে ওঠার পিছনে বাবা ও মায়ের সমান হাত রয়েছে। তাদের যুগ্ম প্রয়াস ও প্রচেষ্টাতেই শিশুর মধ্যে ফুটে উঠতে পারে মনুষ্যত্বের সেইসব যাবতীয় গুণাবলী যা আখেরে মানব প্রজাতিকেই লাভবান করে। সব সিক্কারই দুটো পিঠ আছে। তাকে অস্বীকার একমাত্র অন্ধেই করতে পারে। যদি পৃথিবীতে পিতা নামের কলঙ্ক কেউ থেকে থাকে তাহলে উল্টো পিঠে পিতা নামের হিরোরাও আছেন এবং আছেন আমাদের চোখের সামনেই।