• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৮৮)

পর্ব – ৮৮

৮৭

শান্তু মাথা নিচু করে বসে আছে। শশাঙ্কবাবু চোখে হাত চাপা দিয়ে বসে আছেন। শ‍্যামলী বলল, মা তোমরা এবার খেয়ে নাও।
বাসন্তীবালা বিরক্তিভরে কিছু একটা বলবেন ভাবলেন। কিন্তু অনসূয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু বললেন না।
শ‍্যামলী বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা, ওঠো। উঠে পড়ো। এবার খেয়ে নাও। অবেলা হয়ে যাচ্ছে।
শশাঙ্ক পাল কোনো কথা বলেন না।
শ‍্যামলী সবিতার দিকে তাকাতেই সবিতা ঝাঁঝিয়ে উঠল, বলি হায়া পিত্তি কিছু আছে তোর? খেতে যে ডাকছিস, তোর একবারও মনে হচ্ছে না যে বাবাটাকে আমি কত অপমানটা করালাম?
অনসূয়া শশাঙ্ক পালকে বললেন, দেখুন, আপনি আমার উপর রাগ করেছেন এটা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি কোনো কিছুই বানিয়ে বলি নি। একটা খারাপ জিনিস আমি দেখতে পাচ্ছি। এবাড়িতে সবাই মিলে একজোট হয়ে একজনকে নির্যাতন করা হচ্ছে। আর যে নির্যাতিত হচ্ছে, সে ভাবছে মুখ বুজে থাকলে সমাধান হয়ে যাবে।
 বাসন্তীবালার দিকে তাকান অনসূয়া। আচ্ছা, আপনি তো মেয়েটাকেও গর্ভে ধরেছেন। বলুন তো, এই আচরণটাই কি আপনার মেয়ের প্রাপ্য ছিল।
বাসন্তীবালা মুখ গোমড়া করে থাকেন।
অনসূয়া বলেন, আমি কিন্তু আপনাকে বলে দিচ্ছি, শান্তু যে সব কাজ ঠিক ঠিক করে যাচ্ছিল না, সেটা আপনি জানতেন। আমি শান্তুকে জেনেছি আমার ড্রাইভার গোবিন্দর চোখ দিয়ে। আর পুলিশের ফাইল দেখে। আপনি বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, মা হয়ে শান্তুর কোনো বেচাল আপনি টের পাননি?
বাসন্তীবালা হাতজোড় করে কেঁদে উঠে বললেন, বয়সে ছোটো হলেও তোমার দুটি পায়ে ধরছি। আমাদের এবার রেহাই দাও। তুমি তোমার বাড়ি যাও।
অনসূয়া বাসন্তীবালাকে পাত্তা না দিয়ে শশাঙ্ক বাবুকে বললেন, দেখুন, আমি আপনার স্ত্রীর এইসব কথা গায়ে মাখছি না, আর দু মিনিটের মধ্যে যদি আপনারা সবাই খাওয়া দাওয়া সেরে না নেন, তাহলে আমি বেরিয়ে চলে যাব। আর ওইভাবে বেরিয়ে গেলে শান্তুর খুব সুবিধা হবে না।
শান্তু চট করে উঠে বাবাকে বলল, এবার ওঠো না, দিদি অতো করে রিকোয়েস্ট করছে। এবার খেতে চলো। খুব সহজ হবার চেষ্টা করে শান্তু বলে, দিদি, তুমিও তো অনেকক্ষণ কিছু খাও নি। আমাদের সাথে তুমিও একটু খেয়ে নাও।
অনসূয়া বললেন, আমি খেতে রাজি, যদি বাড়ির কর্তাগিন্নি আমার সাথে একসাথে খেতে বসেন।
শশাঙ্ক পাল বললেন, চলুন, দুটি মুখে দেবেন।
সবিতা বলল, আজ কিন্তু আমাদের নিরামিষ। ছানার ডালনা রেঁধেছি।
অনসূয়া হেসে বললেন, ভালবেসে যা দেবেন, আনন্দ করে খাব।
খাবার টেবিলে তিনি শশাঙ্কবাবুকে বললেন, আজ বিকেলে আমি আমাদের গ্রামের পুজো দেখতে যাচ্ছি। আপনার মেয়েটাকে নিয়ে যেতে চাই।
শশাঙ্ক বাবু বললেন, সে বেশ তো। ঘুরে আসুক।
শ‍্যামলী বলল, আমি যাব না বাবা।  কারখানার কাজ পড়ে রয়েছে।
অনসূয়া বললেন, একটু চ। গ্রামের পুজো দেখে আসি চ। ভাল লাগবে।
 গাড়িতে উঠে শ‍্যামলী অবাক। এত শাড়ি এই গাড়িতে কেন দিদি?
অনসূয়া বললেন, গ্রামে আমার অনেক আপনজন আছেন। ওঁদের মুখে একটু হাসি ফোটাবো।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *