• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৬৯)

পর্ব – ৬৯

৬৮

শশাঙ্ক পাল বললেন, ওরে তোর কারখানার হেডমিস্ত্রি এসেছিল। বৌ বাচ্চা নিয়ে। তুই নাকি ওকে জবাব দিয়েছিস?
শ‍্যামলী বলল, না, ও ক‍্যাশ ফেলে রেখে কাউকে কিছু না বলে এমন একজনের কাছে গিয়েছিল, যে মহাপুরুষ তোমার ব‍্যবসা ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। তাই শোকজ নোটিশ করেছি।
শশাঙ্ক পাল বললেন, হ‍্যাঁ। ও আমাকে বলেছে, ও বীরুর কাছে গিয়েছিল।
বাবা, ও তোমাকে বলেছে। কেননা, আমি আন্দাজ করে ওর ওখানে যাওয়া ধরে ফেলেছিলাম। আমার আশঙ্কা,  ওকে দিয়ে বদমাইশটা তোমার কারখানার আরো কোনো ক্ষতি করবে।
তুই এত ভাবিস কেন বলতো শ‍্যামলী। মাথার উপর ভগবান আছেন, তিনি তো সব দেখছেন। বাসন্তীবালা বললেন।
শ‍্যামলী তাঁকে বলল, মা, তুমি একটু চুপ করো। একটা সিরিয়াস কথা হচ্ছে।
শশাঙ্ক হতাশ গলায় বলেন, বীরু আর কি করবে মা? যা করার তো অনেক ক্ষতি করে দিয়েছে।
শ‍্যামলী বলল, হ‍্যাঁ বাবা, আমার মা জানে ওটা ওই মহাপুরুষ ভগবানের নাকের ডগায় বসে বসে করেছে।
বাসন্তীবালা বললেন, তোরা বাপ বেটিতে বকবক করে রাত কাবার কর্। আমি ঘুমাতে চললুম।
মেয়ে সতর্ক কণ্ঠে বলল, বাবা, হেডমিস্ত্রিকে তুমি ঠিক কি বলেছ?
শশাঙ্ক পাল কুণ্ঠিত হয়ে বলেন, এই দ‍্যাখো, তুই রাগ করবি। তোকে বলব না ভাবছিলাম।
আরে কী মুশকিল, কারখানার দেখাশুনা, দায় দায়িত্ব সব করি আমি। আর ওকে তুমি কি বলেছ, জানব না?
ওকে আমি ক্ষমা করে দিইচি।
আচ্ছা মুশকিল তো? ওকে আমি শোকজ করলাম, আর লোকটা কোনো উত্তর দেবার আগেই তুমি তাকে ক্ষমা করে দিলে? এভাবে ম‍্যানেজমেন্ট চলে?
না করে কি করব বল্ মা, একবার আমার পায়ে, আর একবার তোর মায়ের পায়ে মাথা কুটতে থাকে ওরা স্বামী স্ত্রী। পুজোর দিনে মাফ না করে থাকা যায় রে? বিশ্বাস না হয়, তোর মাকে জিজ্ঞেস করে দেখ্ না, সত্যি বলছি কি না?
বাসন্তীবালা ভিতরের ঘর থেকে চেঁচিয়ে বললেন, আমি তোমাদের কোনো কথায় নেই। খবরদার আমায় সাক্ষী মানবে না বলে দিচ্ছি। তলে তলে এদিকে বাপ বেটিতে খুব ভাব। মাঝখান থেকে আমার ওপরেই সব দোষ চাপাবে তোমার ওই জাঁহাবাজ মেয়ে।
 শ‍্যামলী বলে, বাবা, বাংলার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখতে পাবে, সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর ইংরেজ যাদেরকে নবাবি করার দায়িত্ব দিত, কিছুতেই তাদের পুরো ক্ষমতা দিত না। প্রজা পালনের দায়িত্ব নবাবের। আর খাজনা তোলার একতিয়ার ইংরেজদের। দ্বৈতশাসন।
শশাঙ্ক পাল বললেন, জানিস, তোরা তখন এইটুকু এইটুকু। এখানে তখন যাত্রা হত। একবার সিরাজ‌উদ্দৌলা যাত্রা হয়েছিল। কী গলা কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে বলা, বাংলার ভাগ‍্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা।
শ‍্যামলী রাগ দেখিয়ে বলে, দোহাই বাবা, একটু সিরিয়াস হ‌ও। আমার ক‍্যাশ বাক্স, পার্টসের স্টক ও ছেড়ে চলে যাবে কেন? বাড়িতে কেউ সাংঘাতিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে শুনে চলে গেছে, তেমন তো নয়। এমন লোকের কাছে গিয়েছিল, যার কাছে গেলে আমি রাগ করব, সেটা ও জানত। তুমি দেখিয়ে দিলে, আমার কারখানায় আমি সর্বেসর্বা ন‌ই। জানো ও কোথায় গিয়েছে, ধরে ফেলার পর ও কি বলেছে?
শশাঙ্ক পাল বলেন, হেডমিস্ত্রি কি বলেছে কি শুনি ?
বলেছে, ওই বদমাইশটা ওকে ডেকে পাঠিয়ে টাকা চেয়েছিলেন। প্রথম কথা হল কারবারের মালিক তুমি। তোমার হয়ে আমি কাজ দেখি। টাকা চাইলে তোমার বা আমার কাছে বলত। সৎ সাহস থাকলে সামনে এসে দাঁড়াক ও। সে মুরোদ নেই। আর হেডমিস্ত্রি জানে, কারবার ওই লোকটা ডুবিয়ে ছিল। তাই সহজে স্বীকার করে নি কার ডাকে এমন পড়িমরি করে ছুটে গিয়েছিল। এমন একটা লোককে ক্ষমা করে তুমি মোটেও ভালো করো নি বাবা।
তর্কাতর্কি শুনে বাসন্তীবালা উঠে এসে বললেন, তা তোর কারখানার লোক আমাদের পায়ে এসে মাথা কোটে কেন? আমরা সেকেলে লোক। তোর মতো কুচুক্কুরে ন‌ই। অতো রাগ পুষে থাকতে পারি না। এই রেগে গেলাম, আবার একটু বাদে মাটির মানুষ। শাস্ত্রে আছে সাধুব‍্যক্তির রাগ, জলের উপর দাগ।
শশাঙ্ক পাল মাথা ঝুঁকিয়ে বসে থাকেন। শ‍্যামলী বলে, নাও বাবা, অনেক রাত হল, তোমার মশারি টাঙিয়ে দিই। শুয়ে পড়ো তোমরা।
কাল দেখি কি করতে পারি।
শশাঙ্ক পাল বলেন, সে ঝামেলা আমি মিটিয়ে রেখেছি। ওই যে গাড়ি সারাইয়ের টাকাটা জমা পড়ে নি, ও গাড়িদুটো রাম নারায়ণের। তুই আর ও নিয়ে খোঁচাখুঁচি করিস না।
শ‍্যামলী চমকে উঠে বলল, রামনারায়ণ মাফিয়া? তুমি জানলে কি করে বাবা?
হেসে উঠে শশাঙ্ক পাল বললেন, এ তো সহজ হিসেব মা। সুস্থ স্বাভাবিক ভদ্রলোক গাড়ি সারিয়ে পয়সা না দিয়ে চলে যাবে কেন?
আর তাছাড়া ও গাড়ি যে আমরা কয়েক বার সারিয়েছি।
মশারি টাঙাতে টাঙাতে শ‍্যামলী বলল, বাবা, তুমি শিওর?
শশাঙ্ক পাল হেসে বললেন, হ‍্যাঁ রে মা। তোর মিস্ত্রি গাড়ির নম্বর মনে করে বলতেই আমি বলেদিলাম গাড়ি আসলে কার! এটুকুই যদি না পারব, তাহলে এ লাইনে আমি চুল পাকালাম কেন?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শ‍্যামলী নিজের ঘরে চলে গেল।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *