দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১১৯)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ১১৯
বাবার ঘরে খবরের কাগজ এসেছে। শান্তনু অতনু দুইভাই কাগজ নিয়ে হুল্লোড় করছে। অতনু বলছে, জানো বাবা, ইন্দিরাজিকে লোকজন বেশ কিছু দিন ধরে হুমকি দিচ্ছিল। উনি বলেছিলেন, আজ যদি আমি মারা যাই, তাহলে আমার প্রতিটি রক্ত বিন্দু জাতিকে উজ্জীবিত করবে। এখন ইন্দিরাকে মারার ঠেলা বোঝ্ তোরা। বেশ হয়েছে, শিখদের ঠেঙাচ্ছে।
শান্তনু বলছে, আমি ভেবেই পাচ্ছি না, এই এক নম্বর সফদর জং রোড, আর ঠিক পাশেই এক নম্বর আকবর রোড। আকবর রোডের বাড়িতে ইন্দিরাজির অফিস। ওখানে বসে ছিল পিটার উস্তিনভ। ঠিক সকল নটা কুড়িতে গুলি চালিয়ে দিল সতবন্ত সিং আর বিয়ন্ত সিং। কিন্তু ওরা জানল কি করে ইন্দিরাজি কখন অফিসে যাবে?
অতনু বলল, বাজে বকিস না তো। ওরাই তো ওখানে পাহারায় থাকে। জানে তো ইন্দিরাজি কখন অফিসে যায়।
শান্তনু বলল, জানো বাবা, ওরা তেত্রিশটা গুলি ছুঁড়ে ছিল। তারমধ্যে মাত্র তিনটে এদিকে ওদিকে ছিটকে গেছে। তিরিশখানা গুলি ঢুকিয়ে দিয়েছে ইন্দিরাজির বডিতে। তেইশখানা বডি ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে।
অতনু বলল, দশ মিনিটের মধ্যে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল ইন্দিরাজিকে।
শান্তনু বলল, আরো তাড়াতাড়ি নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
অতনু বলল, নিয়ে যেতে হয়, তাই নিয়ে যাওয়া। তিরিশখানা গুলি খেয়ে কেউ বাঁচে?
শান্তনু বলল, না রে, দুপুর দুটো কুড়ি অবধি বেঁচেছিল।
অতনু বলল, খুব জানিস তুই? মরে যাবার পরেও মানুষের হাত পা নড়ে। ওই জন্য চারঘন্টা দেখতে হয়।
রেডিওতে তখন ধারাভাষ্য চলছে। ঘোষক বলছেন শববাহী শকটে করে প্রয়াতা প্রধানমন্ত্রীর মরদেহ তিনমূর্তি ভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন অগণিত অনুরাগী। আর নভেম্বরের তিন তারিখে অন্ত্যেষ্টি হবে।
শান্তনু বলল, বডি তিনদিন ধরে পড়ে থাকবে? পচে গন্ধ বেরোবে না? বাসী মড়া রেখে কি লাভ?
অতনু বলল, কি যে বলিস্ না, এ কি এলি তেলির মড়া, যে মরল আর ফুরোলো? কত দেশের লোক আসবে জানিস্? যে আসবে না, তার নিন্দে হবে। ভাল লাগুক আর নাই লাগুক সব ব্যাটাকে আসতে হবে। এর নাম পলিটিক্স!