• Uncategorized
  • 0

ছোটগল্পে সুব্রত বসু

ফাটল

(১)

আমাদের নতুন বাড়ির সদর ঘরের দেয়াল কোনাকুনিভাবে ফেটে গিয়েছিল।সেইজন্যে আমাদের সকলেরই খুব মন খারাপ । যে রাজমিস্ত্রী কাজ করেছিল বাবা তাকে ডেকে এনে দেখায়। হঠাৎ করে দেয়াল ফেটে যাবার কারণ সেও বলতে পারে না, বাবাকে সান্ত্বনা দেবার জন্যে বলে যায় সে যার কাছে কাজ শিখেছে ডোমজুড় থেকে সেই হাফেজ মিঞাকে নিয়ে আসবে। এর বেশ কিছু দিন পর হাফেজ মিঞাকে সঙ্গে করে নিয়ে এলো। দার্শনিকসুলভ গাম্ভীর্য নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে সে ফাটল পরীক্ষা করল। আমরা সকলেই আশা করছিলাম এবার একটা কিছু সুরাহা হবে। কিন্তু কিছুই হল না, এমন’কি প্ল্যাস্টার চটিয়ে ফাটল বুজিয়ে দিলেই যে পুনরায় ফাটবে কিনা সেই বিষয়ও কোন নিশ্চয়তা দিতে পারল না। ততদিনে ওটা আমাদের গা সহা হয়ে গেছে।

(২)

নিজের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করলে সব বাড়ীতেই প্রথমদিকে অসন্তোষের দানা বাঁধে। আমার বেলাতেও এর ব্যাতিক্রম কিছু হয়নি। যেহেতু কর্মসুত্রে আমি বাইরে থাকতাম তাই তার যাবতীয় আঁচ মীরাকেই সামলাতে হত। বাড়িতে এলে তার ওপর মানসিক নির্যাতন অপমানের কথা যে বলত না তা নয়, তবে সময়ের সাথে সাথে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে এই ধারণার ওপর আমার অগাধ বিশ্বাস ছিল, সেকথা বলেই ওকে সান্ত্বনা দিতাম। প্রায় ন’বছর পর মীরা একদিন জানাল ওর রান্না করা খাবার বাড়ির কেউ খায়না। মীরার থেকে বাবা মাকে আরো বেশীদিন চিনতাম বলেই কথাটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। কদিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসে , সেদিনেই সন্ধ্যেবেলায় চিকেন নিয়ে এসে মীরাকে বেশ জমিয়ে রান্না করতে বললাম।
দোতলার ঘরে বই পড়ছি মীরা এসে জানালো ভাতে ভাত রান্না করে সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। । নীচে নেমে সোচ্চারে প্রতিবাদ করলাম- অবশ্য এতে লাভ কিছু হল না। এতদিন ধরে সমঝোতার আবরণে বিদ্বেষের যে বিষফলটাকে অটুট রেখেছিলাম তা আর সম্ভব হল না। তিক্ত কটুরস ছড়িয়ে পড়ল সম্পর্কের আনাচে কানাচেতে। পরদিন ভোরেই দুই শিশুকন্যার হাত ধরে বাড়ি ছাড়লাম ।

(৩)

অনেকদিন পর কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডে দাদার বন্ধু অনিমেষদার সঙ্গে দেখা। হঠাৎ দেখায় দুজনেই খুব আশ্চর্য। এরকমভাবে কারোর সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে আনন্দ তো হয়ই, তাই অনিমেষদাকে দোকানে নিয়ে গিয়ে চায়ের অর্ডার দিলাম।আগে তো অনিমেষদা প্রায়ই আমাদের বাড়ীতে যেত দাদার কাছে পড়াশুনার কারণে, দুজনে একসঙ্গে এম’এ পড়ত কিনা। একথা সেকথার পর বাড়ির কথা জিজ্ঞাসাই করে ফেললাম। হেসে বলল, ক’দিন আগেই আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল, সবাই ভাল আছে, আর সদর ঘরের দেয়ালে সেই ফাটলটা সারানো হয়ে গেছে,এখন আর দেখলে বোঝাই যায় না।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।